কলম ছেড়ে এবার আঙ্গুল তুলে নরম গলার স্বরে পারদ চড়িয়ে তিনি হাঁক পাড়বেন 'লাইট ক্যামেরা অ্যান্ড অ্যাকশন!' কথা হচ্ছে সাহিত্যিক শ্রীজাতকে নিয়ে। কবি হিসেবে খ্যাতির চূড়ায় থাকাকালীন বছর কয়েক আগেই উপন্যাসের জগতে প্রবেশ তাঁর। সেখানেও চূড়ান্ত সফল। ইতিমধ্যেই শ্রীজাতর ভ্যান গঘকে নিয়ে লেখা উপন্যাস 'তারাভরা আকাশের নীচে' ঠাঁই পেয়েছে থিয়েটারের মঞ্চে। নির্দেশনা দিয়েছিলেন কৌশিক সেন। তবে এবার কবি, ঔপন্যাসিকের তকমা ঝেড়ে পরিচালকের আসনে বসতে চলেছেন শ্রীজাত! ছবির প্রযোজনার দায়িত্বে রয়েছেন 'জাতিস্মর' ছবি খ্যাত প্রযোজক রানা সরকার।
আনন্দবাজারে প্রকাশিত হওয়া এক প্রতিবেদনে জানা গেছে আপাতত শ্রীজাতর প্রথম ছবির নাম নাকি রাখা হয়েছে 'মানবজমিন'। তবে শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়ের বিখ্যাত উপন্যাসের সঙ্গে সমনামী হলেও এই ছবির গল্পের সঙ্গে ওই উপন্যাসের কোনও মিল নেই, দাবি স্বয়ং শ্রীজাতর। জানা গেছে, ছবিতে সুরকারের দায়িত্ব সামলাবেন জয় সরকার। গানও বাঁধবেন তিনি। এক্ষেত্রে তাঁকে যোগ্য সংগত দেবেন শ্রীজাতও।
অন্য পেশা ছেড়ে পরিচালকের আসনে বসার নজির টলিপাড়ায় রয়েছে। এক বহুল প্রচারিত সংবাদপত্রে সাংবাদিকতার চাকরি ছেড়ে সুব্রত সেন বানিয়ে ফেললেন 'এক যে আছে কন্যা'। জনপ্রিয় বাংলা ব্যান্ড 'চন্দ্রবিন্দু'-র অন্যতম গায়ক এবং গান লিখিয়ে অনিন্দ্য চট্টোপাধ্যায় এখন পুরোদস্তুর পরিচালক। তাঁর পরিচালিত প্রথম ছবি 'ওপেন টি বায়োস্কোপ'-এই বাজিমাৎ করে দিয়েছিলেন তিনি। তবে কবি থেকে পরিচালক? উঁহু এক্ষেত্রে শ্রীজাতই প্রথম।
লেখালিখি ছেড়ে তা হঠাৎ পরিচালনায় কেন? শ্রীজাতর জবাব অনেকদিন ধরেই তাঁর ইচ্ছে ছিল ছবি বানানোর। অনেকসময় সবকিছু অক্ষরে প্রকাশ করা সম্ভব হয়ে ওঠে না। তাঁর সেইসব জমানো কথা কবিতা, গল্পে কিংবা আঁকায় প্রকাশ করা সম্ভব নয়। একমাত্র সিনেমাতেই তা ঠিকঠাক প্রকাশ করা সম্ভব। তাই সিনেমা। তা কেমন ধরণের ছবির মাধ্যমে পরিচালক হিসেবে ডেবিউ করতে চলেছেন তিনি। 'কবি'-র সাফ জবাব,' রোম্যান্স এবং রসিকতা।' কারণ হিসেবে শ্রীজাত জানিয়েছেন এই দুইয়ের মিশেলে দারুণ সব ছবি একসময় বাংলা ছবির দর্শক পেয়েছেন। বলিউডও রীতিমতো ধার করে সেইসব ছবি হিন্দিতে তৈরি করেছে। তবে বর্তমানে সেই ছবিটা অনেকটাই আলাদা। তাই তিনি তাঁর প্রথম ছবিতে ভালোবাসাকে সাক্ষী রেখেই গল্প বলতে চান। প্রসঙ্গত, ছবির গল্প ও চিত্রনাট্য লেখার দায়িত্বটুকুও নিজের কাঁধে তুলে নিয়েছেন তিনি।এই প্রসঙ্গে শ্রীজাতর সংযোজন, ' তপন সিংহ আমার খুব প্রিয় পরিচালক। আমি তো কোনওভাবেই ওঁর সমতুল্য নই, তবে খুব ইচ্ছে আমার ছবিতে যেন ওঁর ছবির গন্ধ সবাই পান। সেই চেষ্টাই করব।' যদিও এখনও ছবির অভিনেতা কিংবা অভিনেত্রীর নাম চূড়ান্ত হয়নি। সে বিষয়ে চূড়ান্ত আলোচনা খুব দ্রুতই সারবেন তিনি এবং প্রযোজক রানা সরকার। তারপর নামঘোষণা করা হবে বলেই জানিয়েছেন এই নব্য-পরিচালক।
তবে কোনও পুরস্কারের লোভে যে পরিচালনায় আসেনি তাও স্পষ্ট কথায় জানিয়ে দিলেন শ্রীজাত। আর যদি পর্দায় গল্প বলার ক্ষেত্রে তিনি ব্যর্থ হন তাহলে তল্পিতল্পা গুটিয়ে ফের একবার কালি ও কলমে নিজের মনটাকে ডুবিয়ে দেবেন।