'এবার পাকিস্তানকে সমূলে উৎপাটনের সময় এসে গিয়েছে', কার্গিল থেকে অপারেশন সিঁদুর প্রসঙ্গে স্পষ্টবাক ভাস্বর

ভারত-পাক অশান্তি নিয়ে নানা মুনির নানা মত। একদল এই যুদ্ধকালীন পরিস্থিতির পক্ষে, আর এক দল যুদ্ধের বিপক্ষে। তবে যুদ্ধ কখনওই কাম্য নয়, কেউই যুদ্ধ চাইতে পারেন না। একথা যেমন সত্যি, তেমন এটাও সত্যি যে ভারত নিজে থেকে আক্রমণ করেনি, ভারতের অভিযানের নেপথ্যে ছিল পহেলগাঁওয়ে সদ্য ঘটে যাওয়া সন্ত্রাসবাদী আক্রমণ, যার মূলে ছিল পাকিস্তান। তাই ভাস্বর চট্টোপাধ্যায় মতে, ভারতকে প্রত্যাঘাত তো করতেই হত।

এই প্রসঙ্গে হিন্দুস্থান টাইমস বাংলার সঙ্গে কথা বলার সময় অভিনেতা বলেন, 'সবাইকে সন্তুষ্ট করা পৃথিবীর কোনও মানুষের পক্ষেই সম্ভব নয়। তবে যদি আমার কথা বলেন, তাহলে এটুকু বলতে পারি ভারত যা করছে, একেবারে সঠিক কাজ করছে। কারণ কতগুলো লোক আমাদের ভারতবর্ষে ঢুকে পড়ল। পহেলগাঁওয়ে এসে ২৬ জন নিরীহ মানুষকে হত্যা করে গেল। তার জবাবে আমরা কী করতে পারি? চুপ করে বসে থাকব? নিশ্চয়ই নয়। বা এটাও তো বলতে পারি না যে আহা, ওদের আঘাত কোরো না, আমরা খুব ভালো মানুষ। সেটা তো সম্ভব নয়। তাই তাদের ভিতরে ঢুকে তাদের উপর আঘাত হানতে হবে। ভারত এখন পর্যন্ত যা যা পদক্ষেপ করেছে তা একেবারে যথার্থ।'

পহেলগাঁওয়ের জবাব ছিল অপারেশন সিঁদুর। এই অভিযানে একাধিক জঙ্গীঘাঁটি ধ্বংস করেছিল ভারত। তবে ভারতের এই জবাবে, পাকিস্তান রাতের অন্ধকারে ফের আঘাত হানার চেষ্টা করে ভারতের ৩ টি রাজ্যের ১৫টি শহরে। কিন্তু এস-৪০০ 'সুদর্শন চক্র' ভেঙে গুড়িয়ে দেয় শত্রুদের সেই ষড়যন্ত্রকে। তারপরই অপারেশন সিঁদুর ২.০-এর মাধ্যমে ভারত রণহুঙ্কারে ইসলামাবাদ থেকে করাচি, শিয়ালকোট-সহ পাকিস্তানের একাধিক শহরে সফল ভাবে অভিযান চালায়। আর তার মধ্যেই ভয়াবহ আকার ধারণ করে পাকিস্তানের গৃহযুদ্ধ। সব মিলিয়ে সাঁড়াশি আক্রমণের জেরে কোনঠাসা পাক-প্রশাসন। ভাস্বরের কথায়, 'আমাদের এটাও মনে রাখতে হবে যে প্রতিবার পাকিস্তান আঘাত করার পরই ভারত প্রত্যাঘাত করছে। কিন্তু এবার পাকিস্তানকে সমূলে উৎপাটন করার সময় এসে গিয়েছে।'

তবে এই তো প্রথম নয়, ভারতের সঙ্গে পাকিস্তানের সমস্যা স্বাধীনতার পর থেকেই। নানা ভাবে পাকিস্তান ভারতের উপর আঘাত হেনেছে। ১৯৯৯ সালে পাকিস্তান ভারতকে পিছন থেকে ছুরিকাঘাত করেছিল। শীতকালীন চুক্তিভঙ্গ করেছিল পাক সেনারা। প্রবল তুষারপাতের জন্য শীতকালে কাশ্মীরে ছেড়ে যাওয়া ভারতীয় ঘাঁটিগুলির দখল নিয়েছিল পাক সেনারা। তাদের উদ্দেশ্য ছিল ১-ডি জাতীয় সড়কটিকে দখল করে ভারত থেকে লাদাখকে বিচ্ছিন্ন করে ফেলা। কারণ লাদাখ বিচ্ছিন্ন হলে পাকিস্তান নির্বিঘ্নে দখল করে নেবে সিয়াচেন হিমবাহের। কিন্তু পাকিস্তানকে তখনও রণাঙ্গনে ভারতীয় সেনাবাহিনী পরাস্ত করেছিল। শ্রীনগর থেকে ২০৫ কিলোমিটার দূরের গ্রাম কার্গিল হয়ে উঠেছিল এক রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের ময়দান। সেই সময়ের প্রসঙ্গ টেনে ভাস্বর জানান, তখন স্যোশাল মিডিয়ার এত রমরমা ছিল না। তাই যুদ্ধের আঁচ বাংলায় থেকে খুব একটা টের পাননি তিনি। কিন্তু পরে কার্গিল ভ্রমণে গিয়ে অনুভব করেছিলেন ভারতীয় সেনাবাহিনী কেমন করে বুক দিয়ে আগলে রাখে দেশ তথা দেশবাসীকে।

অভিনেতার কথায়, 'কার্গিলের সময় এতটা আঁচ পাইনি। কারণ তখন স্যোশাল মিডিয়া বা টিভি চ্যানেলগুলো এতটা সক্রিয় ছিল না। তখন প্রতিদিনের খবর জানতে গেলে একমাত্র ভরসা ছিল সংবাদপত্র। পরে মানে ২০২২-এ আমি কার্গিলে গিয়েছিলাম। সেখানে গিয়ে কার্গিল ওয়ার মেমোরিয়াল দেখি। আমাদের দেশের সেনারা কীভাবে আমাদের জন্য আত্ম-বলিদান দিয়েছিলেন তা দেখে আমার সত্যি মনে হচ্ছিল, আমরা এত নিরাপদ ভাবে থাকি এঁদের জন্যই তো। কিন্তু এঁরাও তো কোনও না কোনও মায়ের সন্তান। তাঁরা বাড়িঘর ছেড়ে আসতে এত কিছু ভাবেন না।'

তিনি আরও বলেন, 'এত বছর পরে ফের ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে একটা যুদ্ধকালীন পরিস্থিতির তৈরি হয়েছে। কিন্তু এবার বিভিন্ন সংবাদমাধ্যম ও সমাজমাধ্যমে আমরা প্রতি মুহূর্তের আপডেট পাচ্ছি, এখন তাই আর কাগজের জন্য অপেক্ষা করতে হচ্ছে না। এবার এই পরিস্থিতিটাকে আরও বেশি করে অনুভব করতে পারছি। গতকাল রাতে বহু মানুষ সমাজমাধ্যমে পোস্ট করে লিখেছে, তাঁরাও ভারতের সেনাদের জন্য রাত জেগে প্রার্থনা করছেন। আসলে এই যুদ্ধের আবহ এখন দেশের প্রতিটি ঘরে ঘরে।'