অতিমারী করোনার আবহেই এবার মাথার ছাদ হারাতে বসেছেন প্রবাদপ্রতিম কত্থক শিল্পী বিরজু মহারাজ, সহ মোট ২৭ জন সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব। তালিকায় রয়েছে চিত্রশিল্পী যতীন দাস, সন্তুরবাদক ভজন সোপোরি, মোহিনীঅট্টম শিল্পী ভারতী শিবাজীদের নামও। কেন্দ্রের তরফে জারি নোটিশে আগামী ৩১ ডিসেম্বরের মধ্যে এই শিল্পীদের দিল্লির সরকারি আবাসন খালি করে দিতে বলা হয়েছে।
কেন্দ্রীয় সরকারের ‘এমিনেন্ট আর্টিস্ট কোটা’য় এই শিল্পীরা নয়া দিল্লির বিভিন্ন এলাকায় বাজার দরের অনেক কম মূল্যে বাড়ি পেয়েছিলেন নির্দিষ্ট সময়ের জন্য। সেই মেয়াদ বহু আগেই শেষ হয়ে গিয়েছে, তাই এল উচ্ছেদের নোটিশ। কেন্দ্রীয় নগরোন্নয়ন মন্ত্রকের পক্ষ পরিষ্কার জানিয়ে দেওয়া হয়েছে বহু আগেই এই শিল্পীদের নির্দিষ্ট সময়ের মেয়াদ শেষ হয়েছে তা আর কোনওভাবেই বাড়ানো সম্ভবপর নয়। ২০১৫ সালেও একবার এই নোটিশ জারি করা হয়েছিল। এই শিল্পীদের বেশিরভাগই এইসব আবাসনে গত ২০ বা ৩০ বছর ধরে বসবাস করছেন। সকলের মধ্যে সবচেয়ে প্রাচীন ও বেশি বয়স্ক শিল্পী বিরজু মহারাজ। এই কত্থক শিল্পী ইতিমধ্যেই গোটা বিষয়ের বিদিত চেয়ে প্রধানমন্ত্রীকে চিঠি লিখেছেন। গত ৪২ বছর ধরে শাহজাহান রোডের বাড়িটিতে থাকেন ৮২ বছর বয়সী বিরজু মহারাজ। শেষ বয়সে এই স্মৃতি বিজড়িত আস্তানা ছাড়তে চান না তিনি।
বিরজু মহারাজ খানিরটা চাপা ক্ষোভ নিয়ে জানান, এই অতিমারীর আবহে এই বয়সে তিনি কোথায় বাড়ি খুঁজতে বার হবেন? যাঁরা বাড়ি ছাড়ার নোটিশ পাঠাবেন তাঁদের কী আরও একটু সংবেদনশীল হওয়ার প্রয়োজন ছিল না? পালটা প্রশ্ন শিল্পীর। দ্বিতীয় কোনও ঠিকানা নেই যতীন দাসের। তিনি বলেন, এই মুহূর্তে কোথায় যাব? আমারা তো বিনা পারিশ্রমিকে কেন্দ্রের বহু প্রকল্পে কাজ করি। আজ আমাদের এমন বিপদের মুখে ঠেলে দেওয়া হচ্ছে কেন?
বিষয়টি হল মেয়াদ শেষের পর বাড়ি ছাড়ার নোটিশ দেওয়া বেআইনি নয় তা শিল্পীরা জানেন তবে তাঁদের বক্তব্য বিষয়টি আইনের নয় সম্মান ও মানবিকতার। বছরের পর বছর ধরে বিশ্ব মানচিত্র যাঁরা ভারতীয় শিল্প-সংস্কৃতির নাম উজ্জ্বল করছে এতটুকু সম্মানও কী তাঁরা সরকারের কাছে আশা করতে পারেন না? সরকারের কী তাঁদের প্রতি কোনও দায়িত্ব নেই?
এখন প্রধানমন্ত্রীকে লেখা চিঠির উত্তরের অপেক্ষায় বিরজু মহারাজ।