মাত্র কিছুদিন আগেই আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস পালিত হল। আর সেই অনুষ্ঠানেই ভাষা শহিদ মঞ্চে চিত্রশিল্পী শুভাপ্রসন্ন বাংলা ভাষায় অতিরিক্ত বিদেশি শব্দ যেমন দাওয়াত, পানি ইত্যাদি নিয়ে আপত্তির কথা জানান। এরপরই তিনি বুদ্ধিজীবী মহলের একাংশের বিরাগভাজন হন। তৈরি হয় বিতর্ক। খোদ মুখ্যমন্ত্রী, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় তাঁর কথার বিরোধিতা করেন। তিনি সাফ সাফ সেই মঞ্চে দাঁড়িয়ে বলেন, 'ভাষা মানে যোগাযোগের মাধ্যম।'
এরপর শুক্রবার, ২৪ ফেব্রুয়ারি এই গোটা বিষয়ে নিজের বিরক্তি প্রকাশ করতে, একই সঙ্গে বিরোধিতা করতে একটি আস্ত কবিতা লিখে ফেলেন বর্তমান সময়ের কবি বীথি চট্টোপাধ্যায়। কবিতার নাম দিয়েছেন জলপানি। তাঁর এই কবিতা বিশিষ্ট মহলে যথেষ্ট আলোড়ন তৈরি করেছে। কী লিখেছেন তিনি?
বীথির কবিতায় দেখা যায় রবীন্দ্রনাথের প্রসঙ্গ থেকে মা কালীর চরণ। সেখানে ফিরিঙ্গি থেকে দোঁহা সবই উঠে এসেছে। বাদ দেননি একাধিক কমিটির চেয়ারম্যান শুভাপ্রসন্নকে কটাক্ষ করতে। তিনি তাঁকে আক্রমণ করে লেখেন, ‘জলের পাশে পানি তাতে অদৃশ্য এক সুতো/দেওয়াল জুড়ে দাপিয়ে গেল চেয়ারম্যানের ভূত-ও।’ এছাড়া তাঁর কবিতার আরও দুটি লাইন হল 'পানির ওপর জল নাকি সে জলের ওপর পানি/রবীন্দ্রনাথ আকাশ দেখে লিখেছেন আসমানী’।
তবে এতটুকুতেই থামেননি বীথি। তিনি সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় এবং হুমায়ন কবীরের প্রসঙ্গ টেনে এনেছেন তাঁর কবিতায়। লিখেছেন, 'এসব কথা খুবই সহজ, আমরা সবাই জানি/সুনীলদা জল লিখলে সেটা হুমায়ূনের পানি।'
সে বীথি চট্টোপাধ্যায় যাই লিখুন না কেন নিজের মতামত থেকে এতটুকু নড়েননি শুভাপ্রসন্ন। তিনি বারবার নানা টক শোতে জানিয়ে দিয়েছেন তিনি যা বোঝাতে চেয়েছেন সেটা ঠিক। ভুল নয়। বরং মুখ্যমন্ত্রী যা বলেছেন সেটা নাকি রাজনৈতিক বাধ্যবাধকতার কারণে বলেছেন বলেই দাবি করেন শুভাপ্রসন্ন। এরপর তাঁকে কুণাল ঘোষের কটাক্ষের মুখে পড়তে হয়। সাংবাদিক সম্মেলনে স্পষ্টই জানিয়ে দেন শুভাপ্রসন্ন বাড়াবাড়ি করছেন।
এদিন কুণাল ঘোষ বীথি চট্টোপাধ্যায়ের কবিতা শেয়ার করেন এবং পরে সাংবাদিকদের বলেন 'উনি কী সুন্দর লিখেছেন, যেটা জল সেটাই পানি। কী সুন্দর কবিতা। কী সুন্দর ভাবনা। লেখক, শিল্পী, সাহিত্যিকদের ভাবনা তো এমনই হওয়া উচিত।'