বাংলায় থাকব, বাংলায় পয়সা রোজগার করব কিন্তু বাংলা গান শুনব না! এমন দ্বিচারিতার বিরুদ্ধে গর্জে উঠেছিলেন ইমন চক্রবর্তী। দু-দিন আগে রাজারহাটে এক কনসার্ট মঞ্চ থেকেই ইমন চক্রবর্তী জোর গলায় বলেছিলেন, ‘সাহসের সঙ্গে, জোরের সঙ্গে যদি তুমি বল আমি বাংলা গান শুনবো না। অন্য কোন জায়গা হলে চুলের মুঠি ধরে ক্যাম্পাস থেকে বার করে দিত।’ আরও পড়ুন-'আমি নাকি ভোটে দাঁড়ানোর জন্য বলেছি….আমার ভাষাকে ছোট করার অধিকার কেউ দেয়নি', ফের বোমা ফাটালেন ইমন
শ্রোতার হিন্দি গান শোনবার ‘জোরজুমুল’ নিয়ে রুখে দাঁড়ান ইমন। ইমনের সেই ভিডিয়ো নিমেষে ভাইরাল হয়। গায়িকার সাহসকে কুর্নিশ জানান বাংলা গানের জগতের মানুষজন থেকে সাধারণ শ্রোতা-দর্শকরা। কিন্তু বাংলা ভাষার জন্য়, বাংলা গানের জন্য় ইমনের এই প্রতিবাদ নিয়ে প্রশ্ন তুলে দিলেন বিজেপি নেতা তথা আইনজীবী তরুণজ্যোতি তিওয়ারি।
রবিবার নিজের ফেসবুকের দেওয়াল একটি পোস্ট করেন। সেখানে ইমন চক্রবর্তীরই পুরোনো একটি ভিডিয়ো সোশ্যাল মিডিয়ায় পোস্ট করেন বিজেপি নেতা। এতে দেখা যায়, এক দর্শক হিন্দি গান শোনবার ‘আবদার’ করায় ফুঁসে উঠেছেন ইমন। তিনি বলেন, ‘বাংলা গান ভালো না লাগলে পাতলি গলি সে নিকল যায়ো…. আমাদের বাংলা গানে যা রসদ আছে, তাতে অন্য়কিছুর দরকার পড়ে না। শুধু ভাষাটাকে ভালোবাসতে হয়।’
এই ভিডিয়োর শেষে ইমনেরই এক লাইভ শো-এর ছোট্ট অংশ জোড়া হয়েছ, যেখানে রাহাত ফতে আলি খানের ওরে পিয়া গানটি গাইছেন ইমন। এই ভিডিয়ো দিয়ে কী বোঝালেন বিজেপি নেতা?
বিজেপি নেতা লেখেন, 'তার বেশ কিছু গান আমি বহুবার শুনেছি এবং এখনো শুনি এবং ভবিষ্যতেও হয়তো শুনবো। সম্প্রতি একটা অনুষ্ঠানে একজন দর্শক তাকে হিন্দি গানের জন্য অনুরোধ করে এবং তার উত্তরে তিনি যেটা বলেছেন সেটা সম্পূর্ণ সমর্থনযোগ্য। একটা মানুষ সেই রাজ্যে আছে সেই রাজ্যের ভাষাকে সম্মান করা উচিত। সত্যি কথাই বলেছেন বাংলা গানে অনেক রসদ আছে এবং এবং বাংলা গান সত্যি সুন্দর। ইমন চক্রবর্তী ম্যাডামকে বাংলা গানের প্রমোট করতে দেখে ভালো লাগলো।
কিন্তু ম্যাডাম হিন্দিতে গান করেন না সেরকম তো ব্যাপার নয়? ইমন চক্রবর্তী হিন্দিতে অনেক জায়গায় গান করেছেন। তার এই বক্তব্যটা শুধু ভালোবাসার জন্য ছিল না ফুটেজ খাওয়ার জন্য ছিল? এই উত্তর একমাত্র ইমন ম্যাডাম দিতে পারবেন।
এই একই ঘটনা ইমন চক্রবর্তীর সাথে এই প্রথম না, কয়েক বছর আগে আরও একটা অনুষ্ঠানের ভিডিও দেখলাম, সেখানে দেখলাম ইমন চক্রবর্তী ম্যাডাম হিন্দি গান করছেন। একজন দর্শকের অনুরোধে হিন্দি গান করা যায় না টাকা পেলে করা যায় মনে হয়? যেই অনুষ্ঠানে ওই দর্শক হিন্দী গানের অনুরোধ করেছিল সেই অনুষ্ঠানে মনে হয় হিন্দি গান করার জন্য টাকা ইমন চক্রবর্তী ম্যাডাম পাননি। হিপোক্রেসি বলে একটা ইংরেজি শব্দ আছে না? সঙ্গীতের কোন ভাষা, দেশ নেই। কোন একটা গণ্ডিতে সীমাবদ্ধ নয়।'
জামাল কুদুর জনপ্রিয়তার প্রসঙ্গ টেনে তিনি আরও বলেন, ‘ইমন চক্রবর্তী ম্যাডাম মনে হয় হিন্দি গান করার জন্য টাকা নেননি ওই অনুষ্ঠানে তাই জন্য হিন্দি গান করতে চাননি।….ফুটেজ খাওয়ার জন্য বছর বছর একই কথা রিপিট করার তো দরকার নেই।’
সদ্য অস্কারের দৌড়ে পৌঁছেছে ইমনের গান। সেই নিয়ে সংবাদ শিরোনামে উঠে আসা জাতীয় পুরস্কার জয়ী গায়িকার কী আলাদা করে লাইমলাইট দরকার আছে? তরুণজ্যোতি এই প্রসঙ্গে এইসময় অনলাইনকে জানান, ‘আরজি কর কাণ্ডের প্রতিবাদের মিছিল থেকে ইমন চক্রবর্তীর হাসি মুখের ছবি সামনে আসার পর ওঁর ভাবমূর্তির উপর প্রভাব পড়েছিল। সেই বিখ্যাত হাসি তো সকলেই দেখেছিলেন। তা প্রতিবাদের মিছিল ছিল না আনন্দের মিছিল ছিল, তা নিয়ে অনেকেই প্রশ্ন তুলেছিলেন। ভাবমূর্তি ভালো রাখতে কে না চান!'
চুপ থাকেননি ইমনও। হিন্দি গান গাওয়া প্রসঙ্গে কারুর নাম না করেই ফেসবুকে জবাব দেন গায়িকা। তিনি বলেন, 'আমি কোথাও কখনও কাউকে বলিনি যে আমি শুধু বাংলা ভাষায় গান গাইবো। কিন্তু আমাকে আমার এই জায়গা দিয়েছেন আপামর বাংলা ভাষায় কথা বলা মানুষরা।' গায়িকার স্পষ্ট জবাব, ‘আমি মহান হওয়ার জন্য এই কথাটা বলিনি...আমার মাকে যেমন খারাপ বলার অধিকার কেউ দেয়নি। ঠিক সেইভাবে আমার ভাষাকে ছোট করার অধিকারও কেউ কাউকে দেয়নি। ‘আমার ভাষাকে ছোট করে কথা বললে আমি আবার ওই একই কথা বলব, একইভাবে প্রতিবাদ করব’।