হিন্দি ছবির আইকনিক সুপারি কিলার ফিরল, তবে মুখ বদলে। ‘কাহানি’ (Kahani) ছবিতে স্বল্প উপস্থিতিতেই দর্শক মনে শিহরণ জাগিয়েছিল যে বব বিশ্বাস (Bob Biswas) তাঁকে নিয়ে এবার গোটা একটা ছবি। ছবি ঘোষণার পর থেকেই শশ্বাত চট্টোপাধ্যায়ের (Saswata Chatterjee) জায়গায় অভিষেক বচ্চনের (Abhisekh Bachchan) উপস্থিতি ঘিরে বিতর্ক শুরু হয়েছিল। সব জল্পনা, বিতর্ক আর তুলনার অবসান ঘটল শুক্রবার। এদিন ওটিটি প্ল্যাটফর্ম জি ফাইভে মুক্তি পেল ‘বব বিশ্বাস’। প্রযোজনার দায়িত্বে শাহরুখ খান-গৌরী খানের রেড চিলিস এন্টারটেনমেন্ট। কেমন হল সুজয় ঘোষের কন্যা দিয়া অন্নপূর্ণা ঘোষের ডেবিউ ছবি? প্রত্যাশা পৃূরণে সফল হলেন অভিষেক?
'কাহানি'র শেষেই দেখা গিয়েছিল ভয়াবহ সড়ক দুর্ঘটনার শিকার বব বিশ্বাস। বিদ্যা বালানকে শেষ করতে গিয়েই ঘটে দুর্ঘটনা। দীর্ঘ আট বছর পর কোমা থেকে উঠবে এই সুপারি কিলার (অভিষেক বচ্চন)। কিন্তু অতীতের স্মৃতি কিছুই মনে নেই তার। অ্যামনেসিয়া আক্রান্ত বব বিশ্বাস-এর কাহিনি এই ছবি। অপরাধ জগতের সব স্মৃতিই শুধু তাই নয়, নিজের স্ত্রী মেরি (চিত্রাঙ্গদা সিং), দুই সন্তান বেনি বা মিনির কথাও মনে নেই ববের। 'আমি ভালো মানুষ নাকি খারাপ, সেটাও মনে করতে পারছি না?' এমন কথা ছবির ট্রেলারেই বলতে শোনা গিয়েছে ববকে। নতুন জীবনের সঙ্গে খাপ খাইয়ে নেওয়ার চেষ্টায় থাকা ববকে আচমকাই একদিন তুলে নিয়ে যায় দুই পুলিশ কর্মী- যিশু নারাগ এবং খরাজ সাহু। ফের একবার অন্ধকার জগতে ফেরার নির্দেশ পায় বব। আবারও হাসিমুখে খুন করতে হবে ববকে।
পরিচালকের আসনে না থাকলেও, বব বিশ্বাস-এর কাহিনি লিখেছেন সুজয় ঘোষ। কাহানির এই স্পিন অফ-এর শুরুটা এক গোডাউন দিয়ে। সেখানে মজুত রয়েছে ব্লু ড্রাগ, যার টার্গেট পড়ুয়ারা। আর সেই ব্যবসার সর্বেসর্বা, ওস্তাদ। এই গল্পের ভিলেন। কেমনভাবে এই ড্রাগচক্রের সঙ্গে জড়িয়ে পড়বে বব বিশ্বাস? সেই তারেই বাঁধা ছবির কাহিনি।
নিরীহ বিমা এজেন্টের আড়ালে লুকানো ভাড়াটে শ্যুটার বব বিশ্বাস যখন অন্ধকার জগতে ফেরে তখন আস্তে আস্তে নিজের ভিতরের স্পার্ক গুলো নতুন করে আবিষ্কার করে সে। নিমেষেই বন্দুক জুড়ে ফেলতে সক্ষম অ্যামনেসিয়ায় আক্রান্ত বব। কিন্তু তাঁকে ঘিরে ধরে একটা অদ্ভূদ প্রশ্ন, যাদের খুন করবার নির্দেশ পেয়েছে সে, যদি তারা খারাপ মানুষ না হয়! তাহলে কি শুধু বেঁচে থাকবার জন্য মানুষ খুনের ব্যবসায় জড়িত থাকা উচিত তার? এই থেকেই প্রশ্ন জাগে, অ্যামনেসিয়ায় আক্রান্ত হওয়ার ব্যক্তির স্মৃতিভ্রম হওয়াটা স্বাভাবিক, তবে তার ব্যক্তিত্বটা কি পালটে যেতে পারে? ছবির একটা বড় অংশ জুড়ে রয়েছে এই দ্বন্দ্ব।
এই ছবির চিত্রনাট্য ‘কাহিনি’র মতো টানটান নয়, এখানে মোচড় খুব বেশি নেই। এক কথায়, গতে বাঁধা থ্রিলার ছবি 'বব বিশ্বাস'। হিটম্যান জন উইকের যে কোনও ছবির সঙ্গে বব বিশ্বাসের পার্থক্য ঠাওর করা আপনার জন্য অসুবিধার কারণ হয়ে দাঁড়াতে পারে। আপনি ভাববেন এই বুঝি গল্প কোনও নতুন মোড় নেবে, কোনও নতুন চমক... সেখানেই বলিউড থ্রিলারের মাস্টারমাইন্ড সুজয় ঘোষ আপনাকে হতাশ করবে। তাই একবাক্যে বলা যায় কাহিনি-র মতো এক্সট্রাঅর্ডিনারি থ্রিলার হয়ে উঠবার ক্ষমতা নেই এই ছবির। আসলে চিত্রনাট্যে চমকের অভাব, তাই নবাগতা পরিচালকের খুব বেশি কিছু করবার জায়গাই নেই।
চিত্রাঙ্গদা সিং-এর এই ছবিতে সাবলীল, কিন্তু দুর্দান্ত নন। তবে বলিউডে কেন আরও বেশি মাত্রায় কাজ করেন না এই সুন্দরী, সেই প্রশ্ন আপনাকে ভাবাবে। সাপোর্টিং ক্যারেক্টর গুলি ছবি শেষে আপনার সঙ্গে থাকবে না। কাহানির সাত্যকি (পরমব্রত) বা ইন্টালিজেন্স ব্যুরো অফিসার খানকে (নওয়াজ) মনে আছে? এক দশক পরেও এই চরিত্রগুলো আপনার স্মৃতিতে উজ্জ্বল। কিন্তু আপনি মনে রাখবেন না বব বিশ্বাসের ডেভিড বা যিশুদের। তবে হ্যাঁ, কালিদার চরিত্রে পরাণ বন্দ্যোপাধ্যায় এই ছবিতে ম্যাজিক দেখিয়েছেন। তিনি অবশ্যই প্রশংসার দাবিদার। কাহিনির স্পিন অফে কলকাতার উজ্জ্বল উপস্থিতি সেভাবে ধরা পড়েনি, সেটা বাঙালি দর্শকদের কাছে হতাশার কারণ হতে পারে। তবে গৈরিক সরকারের ক্যামেরার কাজ ভালো।
অভিষেক বচ্চন নিঃসন্দেহে নিজের সেরাটা দিয়ে চেষ্টা করেছেন। হিরোসুলভ অ্যাটিটিউড ঝেরে ফেলে তিনি বব বিশ্বাস হয়ে উঠতে চেয়েছেন। তবে এই ছবি দেখতে দেখতে 'বব বিশ্বাস' শাশ্বত চট্টোপাধ্যায়ের স্মৃতি আপনার মনে উঁকি দিতে বাধ্য। এই ছবি একার কাঁধে বয়ে বেড়িয়েছেন অভিষেকই। অভিনেতা অভিষেককে একদম অন্যরকমভাবে দেখতে, আর বব বিশ্বাসের রক্ত হিম করা কাহিনির নস্টালজিয়ায় আরও একবার ডুব দিতে জি ফাইভে (Zee5) দেখে ফেলতে পারেন এই ছবি।