বাংলা নিউজ > বায়োস্কোপ > ১৯৭৮ থেকে ২০১৯, বলিউডে একচেটিয়া ছন্দের শাসন করে গেলেন সরোজ খান;

১৯৭৮ থেকে ২০১৯, বলিউডে একচেটিয়া ছন্দের শাসন করে গেলেন সরোজ খান;

মাস্টার জি সরোজ খান। ছবি ফেসবুক

একদিকে কিশোরী সিঙ্গল মায়ের সন্তান মানুষ করার লড়াই, অন্য দিকে কোরিওগ্রাফার হওয়ার স্বপ্ন! রইল সরোজ খানের সিগনেচার সৃষ্টির গল্প; 

বলিউড ইন্ডাস্ট্রিতে তিনি সকলের 'মাস্টার জি।  কেবল মাত্র কোরিওগ্রাফি করেই থেমে থাকেননি, নৃত্য জগতের অন্যতম পথিকৃৎ সরোজ খান  বলিউড ডান্স কোরিওগ্রাফিতে এনেছিলেন অন্যতম সফল এক ধারা। পাশাপাশি উচ্চাভিলাষী কোরিওগ্রাফারদের জন্য  প্রশস্ত করেছিলেন ভবিষ্যত পথ। একের পর এক সুপার ডুপার হিট  সিগনেচার ডান্স মুভমেন্ট দিয়ে গেলেন বলিউডকে। সরোজ খানের পেশাদার জীবনের সাফল্য যেন রুপোলি দুনিয়ার  রূপকথার খোলা খাতা। তবে তাঁর সফলতার আবহে যে অজ্ঞাত সফরটা রয়েছে সেটাও কম রোমাঞ্চকর নয়, যতই ঝড় আসুক, কোথাও এতটুকুও  ছন্দপতন নেই!

সরোজ খান। আসল নাম  নির্মলা নাগপাল। জন্ম ১৯৪৮-এর ২২ নভেম্বর। হিন্দি চলচ্চিত্র জগতে তাঁর কেরিয়ার শুরু করেছিলেন মাত্র তিন বছর বয়সে। কিছুটা বড় হওয়ার পর  তিনি বি সোহানলালের সঙ্গে কাজ  করতে থাকেন আবার নাচও  শিখতেন তাঁর কাছে। সোহানলাল তখন সিনেমার সুপরিচিত ডান্স কোরিওগ্রাফার। মাত্র ১৩ বছর বয়সে কিশোরী সরোজ  সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন তাঁর ৪১ বছর বয়সি মাস্টার জি সোহানলালকে বিয়ে করার।  যদিও সোহানলাল সেই সময় বিবাহিত এবং  চার সন্তানের পিতা। পরে জানা যায়, সোহানলাল যে বিবাহিত এই কথাটা সরোজ খান জানতেন না। পরে অবশ্য সরোজ সোহানলালের বিবাহ বিচ্ছেদ হয়ে যায়। এক সাক্ষাৎকার সরোজ খান জানান, তাঁর নাচের গুরু সোহানলালের  সঙ্গে কীভাবে তিনি বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হয়েছিলেন সেই কথা,  ‘আমি তখন স্কুলে পড়াশোনা করতাম,  একদিন আমার নৃত্যগুরু মাস্টার জি সোহানলাল আমার গলায় একটি কালো সুতো বেঁধে দিয়েছিলেন, আর ওটাই ছিল আমাদের বিয়ে’! বয়সের এতটা ফাঁরাক কোনও প্রতিবন্ধকাতাই সৃষ্টি করে নি তাঁদের সম্পর্কে। কিশোরী সরোজ তাঁর সরল শিশু মনের সবটুকু দিয়ে ভরসা করেছিল স্বামী এবং তাঁর নৃত্য গুরু সোহানলালকে। 

সরোজ খান মজা করে বলেন, মাস্টার জি অন্য কারও সঙ্গে নাচ করলে তিনি ঈর্ষা বোধ করতেন! একবার এক সাক্ষাৎকারে সরোজ খান বলেছিলেন,  ‘আমি আমার গুরুজির প্রতি এতটা ভালোবাসায় আপ্লুত ছিলাম যে অন্য  কোনও নৃত্য শিল্পীকে তাঁর কাছাকাছি দেখলেই  আমি হিংসায় জ্বলে উঠতাম।’ ১৪ বছর বয়সে সরোজ খান তাঁর প্রথম সন্তান হামিদ খানের (জনপ্রিয় কোরিওগ্রাফার, রাজু খান নামে পরিচিত) জন্ম দেন। সংসার, সন্তান সবই হয়েছিল কিন্তু কোনও ভাবেই নাচের বিরতি ঘটে নি তাঁর জীবনে। বলাই বাহুল্য সরোজের পরিবার এই বিয়ে মন থেকে ভালো মতো মেনে নেন নি। এদিকে সোহানলাল সম্পূর্ণ সম্পর্কের জাল বুনেছিলেন মিথ্যার অবলম্বনে। সুতরাং সমস্যা  শুরু  হয়েছিল বিয়ের কিছু সময় পর থেকেই।

 শুরু হয় অন্য লড়াই।  সরোজ খান ও সোহানলাল ১৯৬৫ সালে পৃথক হয়ে যান। কিন্তু সোহানলালের  হার্ট অ্যাটাকের  পর তাঁরা আবার মিলিত হন। সেই সময় তাঁদের  দ্বিতীয় সন্তান হিনা খানের জন্ম হয়।  কিন্তু আট মাস পর সেই সন্তান মারা যায়। যদিও বা সম্পর্ক আবার ঠিক হচ্ছিল কিন্তু সেই সময় সোহানলাল তাঁদের সন্তানদের নিজের নাম দিতে অস্বীকার করেন। সোহানলাল তার স্ত্রী সরোজ খান এবং ছেলেমেয়েদের রেখে মাদ্রাজে চলে যান।  এখান থেকে শুরু হয়েছিল সরোজের জীবনের সবচেয়ে কঠিন সময়টা। যাঁর প্রতি সবটুকু ভরসা করে নিজেকে অর্পণ করেছিলেন সেই মানুষটা তাঁর নিজের  কিশোরী স্ত্রী এবং সন্তানকে অস্বীকার করে চলে গেলেন মাদ্রাজ।  তখন থেকে সরোজ খান মা হিসেবে একাই তাঁর সন্তানদের বড় করতে শুরু করেন।  সেই সময় লড়াইটা ছিল মারাত্মক। নিজেরই ওইটুকু বয়স, তারমধ্যে শিশু সন্তানদের বড় করার লড়াই! ওই পরিস্থিতিতে নাচের ওপর ফোকাস রাখার কাজটা সহজ ছিল না। বালিকা বধু সরোজ সেদিন এইটুকু বুঝেছিল, মন খারাপ করে হাহুতাশ করার সময় এটা নয়। এগোতে হবে সব দুঃখ, প্রতারণা ভুলে। কারণ বিনোদনের দুনিয়ায়  দুর্বলতার কোনও স্থান নেই।

 ১৯৭৫ সালে সরোজ খান একজন ব্যবসায়ী সর্দার রোশন খানের সঙ্গে গাঁটছড়া বাঁধেন। তাঁদের কন্য সন্তান সুকাইনা খান এখন  একজন নৃত্যগুরু।   দুবাইতে একটি নৃত্য ইনস্টিটিউট পরিচালনা করেন।  একটি টিভি চ্যানেলকে দেওয়া সাক্ষাৎকা্রে সরোজ খান বলেছিলেন, ‘আমি নিজের ইচ্ছায় ইসলাম গ্রহণ করেছি। সেই সময় অনেক লোক আমাকে জিজ্ঞাসা করেছিল যে আমার উপর কোন চাপ আছে কি না ? না আমার ওপর কোনও চাপ ছিল না। আমি ধর্ম থেকে অনুপ্রাণিত হয়েছি ইসলামের।’। 

 বলিউড ডান্সের কোরিওগ্রাফিতে এক অন্য নজির সৃষ্টি করেছেন করেছিলেন সরোজ খান। যা ১০০ বছরের সিনেমার ইতিহাসে চূড়ান্ত সফল। সহকারী কোরিওগ্রাফার হিসাবে বহুদিন কাজ করার  পর অবশেষে ‘ গীতা মেরা নাম ’ (১৯৭৮) সিনেমার মাধ্যমে একজন স্বতন্ত্র কোরিওগ্রাফার হিসাবে প্রথম ব্রেক পান সরোজ ।এরপর থেকেই তাঁর কোরিওগ্রাফি পরিচালকদের মন জয় করতে থাকে, ডাক পান নতুন নতুন ছবিতে।   মিস্টার ইন্ডিয়া-র পর রাতারাতি সারা দেশের মানুষের মধ্যে অলোচিত হতে থাকে তাঁর নাম।  তারপর থেকে কোরিওগ্রাফার হিসেবে আর ফিরে তাকাতে হয়নি। এবং প্রায়শই মাধুরী দীক্ষিত, শ্রীদেবী কাপুর, কারিনা কাপুর খান, ঐশ্বর্য রাই বচ্চন, শিল্পা শেঠি কুন্দ্রা, কাজল, কঙ্গনা রানাউত, আলিয়া ভট্ট এবং আরও অনেক বি-টাউন অভিনেত্রীর সুপার ডুপার হিট ডান্স নাম্বার  তৈরির  কৃতিত্ব মাস্টার জি সরোজ খানের।

 

বায়োস্কোপ খবর

Latest News

সিংহ-কন্যা-তুলা-বৃশ্চিকের কেমন কাটবে শুক্রবার? জানুন রাশিফল মেষ-বৃষ-মিথুন-কর্কট রাশির কেমন কাটবে শুক্রবার? জানুন রাশিফল RR vs DC: পন্তের হাত ধরে ডিআরএস নিতে বাধ্য করলেন কুলদীপ, আউট হলেন বাটলার- ভিডিয়ো শিবসেনায় যোগ দিয়েই একনাথের গুণগান গোবিন্দার, লোকসভায় লড়ছেন নাকি? ‘সাপখোপ বিশেষ…’, উলুপি একা নয়, সৃজিতের মোট ৪টি বল পাইথন আছে, জানালেন মিথিলা রিল লাইফ পুত্রবধূকেই বউমা করতে চান নন্দিনী! শাশুড়ির প্রশংসায় অরুণিমা বললেন কী? RR vs DC: রিয়ান ঝড়ের পর, শেষ ওভারে আবেশের বাজিমাত, পরপর দুই ম্যাচে হার দিল্লির দেশের সবচেয়ে ধনী মহিলা সাবিত্রী জিন্দাল যোগ দিলেন BJPতে, ছাড়লেন কংগ্রেস টলিউডে অসফল, সেটারই প্রতিশোধ রাজনীতির ময়দানে নিচ্ছেন হিরণ! দাবি দেবের 'অডিশন না নিয়েই বাদ দিয়েছে...' অভিনেত্রী হতে কী কী সহ্য করেছেন আরত্রিকা?

Copyright © 2024 HT Digital Streams Limited. All RightsReserved.