সুপ্রিম রায়ের পর সিবিআই সুশান্তের মৃত্যুর তদন্ত শুরু করবার পর থেকে আরও রহস্য ঘনীভূত হচ্ছে! সিবিআই কোমর বেঁধে এই হাইপ্রোফাইল মামলার জট খুলতে নেমে পড়েছে। এই মামলায় কোনওরকম ফাউল প্লে-র সম্ভবনা উড়িয়ে দিচ্ছে না কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থার আধিকারিকরা। এই মামলার তদন্তভার সিবিআইয়ের হাতে যাওয়ার আগেই থেকেই নেটিজেনদের প্রশ্নের মুখে থেকেছে মুম্বই পুলিশ ও কুপার হাসপতালের চিকিত্সকরা।
সুশান্তের ময়নাতদন্তের রিপোর্টে উল্লেখ নেই মৃত্যুর সময়, যা নজর এড়ায়নি তদন্তকারীদের। ময়নাতদন্তের রিপোর্টে কেন উল্লেখ নেই সময়? জানতে চেয়েছে সিবিআই। সোমবার কুপার হাসপাতলে পৌঁছেছিল সিবিআইয়ের ফরেনসিক বিশেষজ্ঞরা। এর আগে শনিবারও ওই পাঁচ চিকিত্সকদের সঙ্গে বিস্তারিতভাবে কথা বলে সিবিআইয়ের টিম, যাঁরা সুশান্তের পোস্টমর্টেম করেছেন।
ইন্ডিয়া টুডের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে চিকিত্সকরা জানিয়েছেন ময়নাতদন্ত করবার ১০-১২ ঘন্টা আগে মৃত্যু হয়েছে সুশান্তের। অর্থাত্ ১৪ জুন রাত ১১.৩০ নাগাদ সুশান্তের ময়নাতদন্ত করা হয়েছিল।
সুশান্তের মৃত্যুর তদন্তে সিবিআইকে সহয়তা করবে এইমসের ফরেসনিক বিশেষজ্ঞদের একটি দল। যাঁর নেতৃত্বে রয়েছেন এইমসের ফরেনসিক বিভাগের প্রধান ডক্টর সুধীর গুপ্ত। ইন্ডিয়া টুডেকে তিনি জানান, ময়নাতদন্তের রিপোর্টে সময় উল্লেখ থাকাটা বাধ্যতামূলক। অর্থাত্ কোন সময় মৃত্যু হয়েছে প্রয়াতের তা বেঁধে দেওয়া হয় রিপোর্টে। কিন্তু এক্ষেত্রে সেই কলামটি আশ্চর্যজনকভাবে ফাঁকা। যা দেখে কেন্দ্রীয় গোয়েন্দাদের মনে সন্দেহ ঘনীভূত হয়েছে । এই বিষয়ে ডাক্তার গুপ্ত জানিয়েছেন , ‘আমি এখনই এই বিষয়ে কোনো মন্তব্য করতে পারিনা । সমস্ত বিষয়টাই খতিয়ে দেখে তবেই সিদ্ধান্ত নেওয়া উচিৎ হবে । তবে অটোপসি রিপোর্টে টাইম স্ট্যাম্প থাকা একান্তই বাধ্যতামূলক । যদি তা না থাকে বা কোনও ভুল হয়ে থাকে সেক্ষেত্রে আইন অনুসারে পুলিশকে অবশ্যই অন্য কোনো ডাক্তারের থেকে সেকেন্ড ওপিনিয়ন নিতে হয় । কিন্তু এই নিয়মও এখানে মানা হয়নি। তবে যে চিকিত্সকরা ময়নাতদন্ত করেছেন আমরা তাঁদের সঙ্গে কথা বলে সিদ্ধান্ত নেব’।
শুধু মৃত্যুর সময়ের উল্লেখ নেই তা নয়, সুশান্তের ময়না তদন্তের রিপোর্ট নিয়ে কেন দ্বিতীয় কোনও মেডিক্যাল টিমের মতামত নেয়নি মুম্বই পুলিশ ? সেই বিষয়টিও জানতে চায় সিবিআই। এছাড়াও কেন প্রচলিত নিয়মানুযায়ী সকালে ময়নাতদন্ত না করে গভীর রাতে হয়েছিল সুশান্তের ময়নাতদন্ত? কেন করোনা পরিস্থিতির সময়কার SOP মানা হয়নি? করোনা টেস্টের রিপোর্ট হাতে পাবার আগেই করা হয়েছে অটোপসি? শুধু তাই নয়, কীভাবে ১৫ জুন কুপার হাসপাতালের তরফে মর্গে রাখা সুশান্তের অন্তিম দর্শনের অনুমতি দেওয়া হল রিয়াকে সেই নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন সুশান্তের বাবার আইনজীবী।
মনে করা হচ্ছে এই সব প্রশ্নের জবাব পেতেই ফের একবার কুপার হাসপাতালে পৌঁছেছিল সিবিআইয়ের টিম। সূত্রের খবর, কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থার তরফে সুশান্তের ভিসেরা রিপোর্ট , অটোপ্সি রিপোর্ট , সুশান্তের যাবতীয় মেডিকেল রিপোর্ট এবং পোস্টমর্টেম রিপোর্ট ইতিমধ্যেই দিল্লিতে এইমসের ফরেনসিক টিমের কাছে পাঠিয়ে দিয়েছে। কলিনা ল্যাবে সুশান্তের ভিসেরার যে ২০ শতাংশ নমুনা পরে রয়েছে, সেগুলি ফের একবার পরীক্ষা করে দেখতে পারে সিবিআইয়ের বিশেষজ্ঞরা। সুশান্তকে যে সমস্ত অ্যান্টি-ডিপ্রেশনের ওষুধ দেওয়া হচ্ছিল সেগুলির কেমিক্যাল অ্যানালিসিস করা হবে এইমসের ল্যাবরেটারিতে।
ডক্টর সুধীর গুপ্তর নেতৃত্বেই পরিচালিত ফরেনসিক বিশেষজ্ঞদের দেওয়া মেডিকো -লিগাল (medico-legal) ওপিনিয়নের উপর অনেকখানি নির্ভর করবে এই মামলার তদন্তের গতিপ্রকৃতি।
মেডিকো-লিগাল ওপিনিয়ন দেওয়ার ক্ষেত্রে ডাক্তার গুপ্ত এবং তাঁর দল ভারতের অন্যতম অভিজ্ঞ ও সেরা বলেই বিবেচিত । বহু হাই প্রোফাইল কেস আগেও সামলেছেন তাঁরা । এগুলির মধ্যে শিনা বরা হত্যা কান্ড , সুনন্দা পুস্কর মৃত্যু রহস্যের মতো অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ কেসের অভিজ্ঞতা রয়েছে এই দলের। তাঁদের মূল্যবান মতামতের উপর অনেক খানি নির্ভর করবে এই কেসের দিশা।