আপাতত ফোনেই সেলেবদের ঘরোয়া রূপচর্চার সন্ধান দিচ্ছেন 'সাটিন রোজ স্যালোঁ অ্যান্ড স্পা'-এর কর্ণধার জলি। যতদিন না সব কিছু স্বাভাবিক হচ্ছে ততদিন ঘরে বসেই নিজেকে মেনটেইন করতে হবে। সেই একই সন্ধান দিচ্ছেন আমাদের পাঠকদের জন্য। জলি মনে করেন আয়ুর্বেদ ও দেশজ প্রোডাক্টের কোনও তুলনা হয় না।
বাড়িতে বসে বিউটি স্যালোঁ বা স্পায়ের মত রূপচর্চা --
অনেকটাই সম্ভব। তবে হ্যাঁ, তার জন্য ধৈর্য্য এবং সময় দুইয়েরই সমান দরকার। মহিলা হোক বা পুরুষ সকলের ক্ষেত্রেই যেটা হয় যে সারাদিন হাজারো ব্যস্ততার কারণে নিজেদের জন্য আলাদা করে সময় বার করা সম্ভব হয়ে ওঠে না, সেক্ষেত্রে বিউটি স্যালোঁনে যাওয়াটা জরুরি। কিন্তু এই সময় তো সবাই লকডাউনে গৃহবন্দি, হাতে অনেকটাই খালি সময়, তাই বাড়িতে বসে খুব সহজেই নিজেকে সুন্দর এবং তরতাজা রাখা যেতেই পারে, আর তার জন্য যা যা প্রয়োজন তা আমাদের বাড়িতে অতি সহজেই পাওয়া যায়।
অ্যাপ্রিকট-অ্যাভকাডো নয়, দেশজ ফল খান--
সবসময় মনে রাখতে হবে আমাদের ট্রপিক্যাল সিজিন। আমাদের জলবায়ুতে যে যে ফল এবং সবজি ফলে সেগুলোই আমাদের শরীরের জন্য সবচেয়ে ভালো। অনেকে ভাবেন অ্যাপ্রিকট, অ্যাভকাডো, ব্রকলি এই সব দামী বিদেশি ফল,সবজি শরীরর ও ত্বকের জন্য বেশি ভালো, এটা সম্পূর্ণ ভ্রান্ত ধারণা। এই ফল এবং সবজি যেখানে ফলে সেই জায়গার মানুষদের জন্য অবশ্যই ভালো যেমন আমাদের জন্য সবচেয়ে ভালো এখানে যা ফলে সেইসব ফসল। তরমুজ, আম, পেয়ারা, চিকু, আখ, মোসাম্বি, ডাব ইত্যাদি ফল। যা আমাদের বাজারে অত্যন্ত সহজলভ্য সেগুলো বেশি করে খেলেই শরীর হাইড্রেটেড থাকবে।
আয়ুর্বেদের ম্যাজিক এবং জামরুলের জাদু--
আমি আয়ুর্বেদে বিশ্বাস রাখি। আয়ুর্বেদেই লুকিয়ে রয়েছে রূপকথার আসল রহস্য। সারা পৃথিবী থেকে লোকজন আমাদের দেশে ছুটে আসে আয়ুর্বেদের সন্ধানে। আমাদের দেশ থেকেই কাঁচামাল নিয়ে গিয়ে ওরা নিজেদের দেশে বিউটি প্রোডাক্ট বানিয়ে তার মার্কেটিং করছে। অথচ আমরা নিজেদের ঘরের জিনিসের কদর করি না! আজকাল অনলাইনে এবং বিভিন্ন বিউটি সাইটে সারাক্ষণ বিদেশি স্কিন ও হেয়ার প্রোডাক্টের কথা বলা হয়। আমার মতে, কোনও দরকার নেই একগাদা পয়সা খরচ করে সেগুলো কেনার। কারণ ওই প্রোডাক্টগুলো আমাদের দেশের ক্লাইমেট অনুযায়ী তৈরি নয়। তাই ব্যবহারেও বিশেষ কোনও লাভ হবে না। এখন আমাদের এখানে বায়ুতে আদ্রর্তা বেশি। ঘাম হয় প্রচুর, এই সময় শরীর জল চায় বেশি করে। জলের ঘাটতি পড়লে অসুস্থ হয়ে যেতে পারেন, কিন্তু সবসময় প্রয়োজন অনুযায়ী জল আমাদের পক্ষে খাওয়া সম্ভব হয় না। তাই তরমুজ, আখের রস, ডাবের জল নিয়ম করে খান। শসা অবশ্যই খাবেন। শসার অনেক গুণ। শরীরে জলের সমতা বজায় রাখে। জামরুল খাওয়ার অভ্যেস করুন। অসম্ভব উপকারি এবং মাল্টি ভিটামিন গুণ সম্পন্ন ফল হল জামরুল। অতি সহজেই বাজারে পাওয়া যায়। এই গুলো রোজ খেলেই শরীর তরতাজা থাকবে, আর ভিতর থেকে যদি সম্পূর্ণ সুস্থ থাকা যায় তাহলে সেই জেল্লাটা আমাদের ত্বকেও ধরা পড়বে।
কমলা লেবুর খোসা ও দুধের সরের প্যাক--
গরমকালে যেমন জামরুল খাওয়ার কথা বললাম শীতকালে তেমন কমলালেবু। কমলালেবুর কোনও কিছুই ফেলে দেওয়ার নয়। খোসাটা রেখে দেবেন। পরে খোসাটা শুকিয়ে ডাস্ট বানিয়ে নিতে হবে। এরপর দুধের সরের সঙ্গে মিশিয়ে প্যাক বানিয়ে ব্যবহার করতে পারেন। এই হোম মেড প্যাক স্কিনের জন্য অসাধারণ ।
স্কিন ট্যান রিমুভ প্যাক --
রোদের তাপে স্কিন ট্যান হয়ে যাচ্ছে, এটা খুব পরিচিত একটি সমস্য। লকডাউনে বাড়িতে রয়েছি মানেই যে স্কিন ট্যান হচ্ছে না এমন নয়। শুধু রোদের তাপে নয় রান্নার তাপে এবং বাড়িতে থাকলেও শরীরের খোলা অংশে যেখানে গরমের হল্কা লাগে সেই জায়গা গুলোতেও কিন্তু ট্যান হয়। এর জন্য একটা টমেটোই যথেষ্ট। টমেটো সারা গায়ে ঘসলে ট্যান চলে যায়। অন্য কিচ্ছু করার দরকার হয় না। তবে এটা নিয়ম করে রোজ করতেহবে। তাহলে ট্যানটা ত্বকে বসতে পারবে না।
হলুদ ও দইয়ের প্যাক--
কাঁচা হলুদের গুণের কথা কারুরই অজানা নয়। সেই আয়ুর্বেদ যুগ থেকেই হলুদের বিশেষ কদর। যে কারণেই আমাদের বিয়েতে ‘গায়ে হলুদ’ এর আচার। বিয়ের আগে মেয়েকে হলুদ লাগানো হয় যাতে অল্প সময়ে ত্বক উজ্জ্বল হয়ে ওঠে। কাঁচা হলুদের সঙ্গে টক দই বা দুধের স্বর মিশিয়ে প্যাক বানিয়ে নিয়মিত ত্বকে লাগালে উজ্জ্বলতা খুব তাড়াতাড়ি বাড়বে। এই মিশ্রণটা লাগানোর সময় হালকা হাতে ঘসে ঘসে লাগাতে হবে। ঘরে বসে ঝকঝকে স্কিন পেতে এই প্যাক রোজ ব্যবহার করুন।
মুলতানি মাটি ও ডাবের জলের প্যাক--
ডাবের জলের কথা আমরা সবাই জানি। এর চেয়ে ভালো কিছু হতে পারে না। শরীরের জন্য তো বটেই, স্কিনের জন্যও ডাবের জল অত্যন্ত জরুরি। মুলতানি মাটি যদি বাড়িতে থাকে তাহলে তার সঙ্গে ডাবের জল এবং গোলাপ জল মিশিয়ে প্যাক বানিয়ে রাখতে পারেন। এই প্যাক রোজ ব্যবহার করা যায়। কয়েক দিন ব্যবহার করলে নিজের বুঝতে পারবেন পার্থক্যটা।
অ্যালোভেরা হেয়ার স্পা--
অ্যালোভিরা, আয়ুর্বেদের আরও একটি গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়। সবাইকে বলব অ্যলোভেরা গাছ বাড়িতে টবে লাগান। অ্যলোভেরা পাতার থকে জেলটা বার করে মিক্সিতে গ্রাইন্ড করে নিন। এর সঙ্গে নারকেল তেল মিশিয়ে একটা পেস্ট তৈরি করে চুলে এবং স্কিনেও লাগাতে পারেন। এটা চুলে খুব ভালো কন্ডিশনারের কাজ করে। ২০ মিনিট চুলে রেখে তারপর ধুয়ে ফেলুন। এটি ঘরোয়া হেয়ার স্পা। আপনার চুল নরম এবং উজ্জ্বল হবে।
নারকেল তেল জরুরি--
নারকেল তেল ত্বক এবং চুলের জন্য খুব ভালো। বাজার চলতি বিভিন্ন তেলের বিজ্ঞাপনে প্রভাবিত হয়ে ওইসব কিনবেন না, এতে ক্ষতি হবে আপনারই। সাধারণ নারকেল তেল ব্যবহার করুন। মাথায় এবং শরীরের ত্বকে রোজ নারকেল তেল লাগাতে পারেন, এতে বিভিন্ন স্কিন সমস্যা যেমন গরমের সময় স্কিনে র্যাশ, দাদ, হাজা ইত্যাদি সেরে যায়।
শরীর সচল রাখুন বাড়িতেও--
শরীরটাকে খুব কম করে হলেও আধা ঘন্টা মোশনে রাখতে হবে। যাঁরা রোজ যোগ ব্যয়াম, জিম, ওয়ার্ক আউট বা নাচ প্র্যাক্টিস করেন তাঁদের কথা বলছি ন। যাঁরা হাটা চলা খুব একটা করেন না, বা লকডাউনের কারণে বাইরে গিয়ে চলাফেরা করতে পারছেন না তাঁরা অন্তত ঘরের ভিতরে বা ছাদে হালকা পায়ে চলাফেরা করুন, নয়ত সিঁড়িতে নামা ওঠা করে শরীরটাকে সচল রাখুন।
রোগ প্রতিরোধ শক্তি বাড়ান-
বারবার বলব, সিজিনাল ফল এবং সবজি খান। বিভিন্ন রকম শাক রোজ খান। গরমে মোসাম্বি এবং ঠাণ্ডায় কমলালেবুর রস নিয়ম করে খান। এতে ভিটামিন ‘সি’ রয়েছে। এটা আমাদের ইমিউনিটি বাড়াতে সাহায্য করবে। রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়বে। এর ফলে চট করে আমরা কোনও রোগের দ্বারা আক্রান্ত হব না। যাঁদের সুগার বা অন্য কোনও অসুখ রয়েছে তাঁরা ডাক্তারের পরামর্শ নিয়ে খাবার খান।