‘চন্দ্রবিন্দু’ ছাড়া যেমন বাংলা ব্যাঞ্জন বর্ণমালা অসম্পূর্ণ, তেমনই বাংলা ব্যান্ডের তালিকাও একদম অসম্পূর্ণ উপল-অনিন্দ্যদের ‘চন্দ্রবিন্দু’ ছাড়া। নব্বইয়ের দশকে বেড়ে ওঠা প্রজন্মের কাছে ‘চন্দ্রবিন্দু’ শুধু একটা বাংলা ব্যান্ডের গান নয়, বরং ইমোশন। চন্দ্রবিন্দুর যেমন গানের সুর, তেমনই কথার ধার!
আলোর উৎসবের আবহে ভক্তদের বিরাট সুখবর দিল চন্দ্রবিন্দু। চলতি বছরের মাঝামাঝি সময়েই শোনা গিয়েছিল দীর্ঘ ১২ বছর পর নিজেদের দশম অ্যালবাম নিয়ে আসবেন উপল-চন্দ্রিল-অনিন্দ্যরা। সেইমতোই বছরের শেষলগ্নে মিলল ভালোবাসায়মাখা ‘টালোবাসা’র খবর। হ্যাঁ, চন্দ্রবিন্দুর দশম অ্যালবামের নাম ‘টালোবাসা’।
যুগের সঙ্গে তাল মিলিয়ে বদল এসেছে ভাবনায়। বদলেছে গান শোনানোর মাধ্য়ম। ২০১২ সালে শেষ অ্যালবাম মুক্তি পেয়েছিল চন্দ্রবিন্দুর। এরপর কেটেছে ১২ বছর। গান শোনার মাধ্যমে বদল এলেও আজও কিছু মানুষ আছেন, যাঁরা নতুন গানের গন্ধ শুঁকতে চান, হাতে ধরে স্পর্শ করতে চান! তাই উপলের বুদ্ধিতে নতুন অ্যালবামের রেকর্ড নিয়ে হাজির চন্দ্রবিন্দু। ভাবছেন ব্যাপারটা কী?
স্পর্টিফাই,আইটিউনসের মতো জনপ্রিয় স্ট্রিমিং প্ল্যাটফর্ম, ইউটিউবের পাশাপাশি চন্দ্রবিন্দুর নতুন অ্যালবামের গান শোনা যাবে রেকর্ড-এ। হ্যাঁ, লিমিটেড এডিশনে মোট ৩৫০টি রেকর্ড প্রকাশ করা হবে ব্যান্ডের তরফে, সেই সুখবর কালীপুজোর আগের রাতে ভাগ করে নিয়েছেন উপল সেনগুপ্ত।
ফেসবুক পোস্টে তিনি লেখেন, চন্দ্রবিন্দুর নতুন অ্যালবাম বেরচ্ছে এক ডজন বছর মানে এক যুগ পর। একটা বয়স ছিল যখন বছর বছর আমাদের অ্যালবাম বেরত। আমদের দুচোখ জুড়ে স্বপ্ন ছিল , একদিন দশখানা অরিজিনাল অ্যালবাম বার হবে আমাদের।প্রথম ক্যাসেট বেরিয়েছিল ১৯৯৭ এ।তার ২৭ বছর পর চন্দ্রবিন্দু সত্যিই দশম অ্যালবাম বার করতে পারল।
একটা ব্যাপারে ধন্দে পড়েছিলাম আমরা।এমন অ্যালবাম বেরবে সে শুধুই আইটিউনস আর স্পর্টিফাই’তে শোনা যাবে!! হাতে নেওয়া যাবে না, গন্ধ শোঁকা যাবে না নতুন গানের? বুদ্ধি বাতলাল উপল। রেকর্ড বার করি চল। নতুন করে ফিরে আসছে টার্ন টেবিল পৃথিবীজুড়ে।
এমন সাধু প্রস্তাবে সবাই একজোট হয়েছি, বন্ধুরা এগিয়ে এসেছে নানান দেশ-মহাদেশ থেকে… চন্দ্রবিন্দুর ১০ নম্বর অ্যালবাম শেষমেশ মুক্তি পাচ্ছে নতুন এক চেহারায়।ক্যাসেট থেকে রেকর্ডে হাঁটার দীর্ঘ পথচলাগুলো খুব উত্তাল ও উত্তাপময় ছিল এক অপার আনন্দ সরণী বেয়ে।এতগুলো বছর ধরে আপনাদের প্রশ্রয় -টশ্রয়, ভালবাসা - টালবাসা ছিল বলেই না আরও কিছু নতুন গান ফুটে উঠল।
নতুন অ্যালবাম এর নাম — টালবাসা। ভিনদেশ থেকে প্রকাশিত লিমিটেড এডিশন ৩৫০ টি রেকর্ড পাওয়া যাবে অগ্রিম বুকিং এর ভিত্তিতে….'।
উপলের এই পোস্টে অনেকে শুভেচ্ছা জানিয়েছেন, একই সঙ্গে আক্ষেপ প্রকাশও করেছেন। কারণ রেকর্ড বুক করতে চাইলেও উপায় নেই। কারণ রেকর্ডার রয়েছে এমন মানুষের সংখ্যা নিতান্ত কম! অভিনেত্রী বিদিপ্তা তো মজা করে লেখেন, ‘রেকর্ড বুক করলাম, একটা রেকর্ডার বাড়িতে পাঠিয়ে দিও’। সকলকে আশ্বস্ত করে উপল জানিয়েছেন, সমস্ত স্ট্রিমিং প্ল্যাটফর্মেও শোনা যাবে তাঁদের ‘টালোবাসা’।
‘ভিনদেশী তারা’ কিংবা ‘বন্ধু তোমায় এ গান শোনাব বিকেলবেলায়’ ছাড়ার মতো গান ছাড়া তো কলেজজীবনই বৃথা নব্বইয়ের দশকে বেড়ে ওঠা প্রজন্মের। নয় নয় করে ৩৫ বছর ছুঁতে চলেছে গানের দল চন্দ্রবিন্দু। চন্দ্রবিন্দু মানেই কলেজ জীবনের নস্ট্যালজিয়া, মধ্যবিত্ত ভীরু বাঙালি যুবকের মন কেমনমাখা প্রেম। ১৯৯৭ সালে মুক্তি পেয়েছিল চন্দ্রবিন্দুর প্রথম অ্যালবাম ‘আর জানি না’। তবে দ্বিতীয় অ্যালবাম ‘গাধা’য় ভর করে জনপ্রিয়তা পান উপলরা। তাঁদের অষ্টম অ্যালবাম ‘U/A’ দুর্দান্ত সাড়া ফেললেও নবম অ্যালবাম শ্রোতাদের মনে দাগ কাটেনি। ১২ বছর পর সেই কালো দাগ মুছে ফেলতে বদ্ধপরিকর অনিন্দ্য-উপলরা। ‘নয়’ একটু গম্ভীর ছিল, তবে দশম অ্যালবামে পুরোনো চন্দ্রবিন্দুর মেজাজ পাওয়া যাবে! খবর এমনটাই।