রবিবার রাতটা বিষাদে ভরিয়ে দেয় একটা খবর। আর সেটা হল প্রাক্তন সদস্য চন্দ্রমৌলি বিশ্বাসের মৃত্যুর। জানা গিয়েছে যে, নিজের বাড়িতেই ঝুলন্ত অবস্থায় উদ্ধার হয় তাঁর দেহ। বর্তমানে গোলক এবং জম্বি কেজ কন্ট্রোল নামের দুই ব্যান্ডের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন চন্দ্রমৌলি। বাবা-মা একটি আমন্ত্রণ রক্ষায় বাইরে গিয়েছিলেন, বা়ড়িতে একাই ছিলেন চন্দ্রমৌলি। এই বেসিস্টের ঝুলন্ত দেহ প্রথম দেখতে পান তাঁর বর্তমান ব্যান্ড সঙ্গী মহুল চক্রবর্তী। পুলিশের এক আধিকারিক জানান, চন্দ্রমৌলির ঘর থেকে উদ্ধার হয়েছে সুইসাইড নোট। সেখানে লেখা রয়েছে, তাঁর মৃত্যুর জন্য কেউ দায়ী নয়।
এদিকে, রবিবারই কল্যাণীতে বঙ্গ সংস্কৃতি উৎসবে পারফর্ম করে ফসিলস। এতদিনের সঙ্গীর এভাবে চলে যাওয়ার খবর শুনেও, মঞ্চে এসে পারফর্ম করা খুব একটা সহজ কাজ ছিল না। কিন্তু ওই যে, কথাতেই তো আছে, ‘দ্য শো মাস্ট গো অন’। তাই এই শোককে বুকে রেখেই, স্টেজে আগুন জ্বালিয়েছেন রূপস-সহ প্রত্যেকে।
ব্লগার প্রিয়ম সেনগুপ্ত কল্যানীতে ফসিলসের সেই পারফরমেন্সের একটি ছবি শেয়ার করে লিখলেন, ‘’একজন প্রকৃত রকস্টারের মৃত্যুতে শোক নয়, বরং উদযাপন হওয়া উচিৎ মিউজিকে, দর্শকের চিৎকারে। রূপসা দাসগুপ্ত তুমি একেবারে ঠিক কথাই বলেছ, ‘চন্দ্রর স্মৃতিতে আমরা এই নীরবতাটা চাইছি না। বরং চিৎকার হোক।’
তিনি আরও লেখেন, ‘এই পোস্ট যখন লিখছি, কল্যাণীতে রূপমদা 'একলা ঘর' গাইছে প্রিয় বন্ধুর মৃত্যুসংবাদের ক্ষত বুকে নিয়ে। কী নির্মম পেশাদার এই ব্যান্ডটা! চোখে জল, কিন্তু একটা নোট এদিক-ওদিক হচ্ছে না। সারা মাঠ গাইছে, 'ভাবি, কিছুতেই ভাবব না তোমার কথা…'! চন্দ্রমৌলি বিশ্বাস তোমাকে খুব মিস করব। রেস্ট ইন মিউজিক।’
পড়াশোনায় ছিলেন তুখর। তবে ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের কেরিয়ার ছেড়ে সংগীতকেই পেশা হিসেবে বেছে নেন চন্দ্রমৌলি। ২০০০ থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত, একটানা ১৮ বছর ফসিলস ব্যান্ডের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন চন্দ্রমৌলি। ২০১৮ সালে স্বাস্থ্য সংক্রান্ত কারণের জন্যই নাকি ফসিলস ছাড়েন চন্দ্রমৌলি, জানিয়েছেন রূপসা দাসগুপ্ত।
এদকে কল্যানীর সেই অনুষ্ঠানে স্টেজে এসে যখন দাঁড়ালেন রূপসম, তখন স্বাভাবিকভাবেই তিনি মানসিকভাবে ভেঙে পড়েছেন। সামনে থাকা শ্রোতার উদ্দেশে বলে উঠলেন, ‘আমরা আজ গানবাজনা সেভাবেই পরিবেশন করব, যেভাবে সবথেকে বেশি স্মৃতিচারণ করা যায়। তবে আপনাদেরও অনেক দায়িত্ব পালন করতে হবে। আমি হয়ত গানের মাঝে যেসব কথা বলি, আজকে স্বাভাবিকভাবেই সেসব কথা বলতে পারব না। বলার মানসিকতাও নেই। যেভাবে শো করি, সেভাবে সম্ভব নয়। গানটা আজ করে দেব এই মাত্র। আপনারা বুঝতে পারছেন কী বলছি। এই আঘাত অনেক বড়। কাজেই আপনাদের সহযোগিতা চাই। তাহলে হয়ত উতরে যাব। সকলকে গুরুত্ব বুঝে আমাদের সঙ্গে থাকার অনুরোধ করব।’
তবে হ্যাঁ, সুর সুরের জায়গাতেই ছিল। কল্যানীর দর্শকের মন জয় করে নিয়েছেন বাংলা রক কালচারের অন্যতম স্রষ্টা। তবে হ্যাঁ, বিষাদ ছিল সঙ্গী। কিন্তু ওই যে, শো মাস্ট গো অন…