'ফসিলস'-এর চন্দ্রমৌলি বিশ্বাস আর নেই। ১২ জানুয়ারি রবিবার আচমকা এই খবরটা যেন এখনও মানতে পারছেন না অনুরাগীরা। যদিও ২০১৮ সালেই 'ফসিলস' ছেড়েছিলেন চন্দ্রমৌলি বিশ্বাস। ২০০০ থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত, একটানা ১৮ বছর ফসিলস ব্যান্ডের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন চন্দ্রমৌলি। মধ্য কলকাতার ইন্ডিয়ান মিরর স্ট্রিটের ভাড়া বাড়িতে থাকতেন শিল্পী। রবিবার সেখান থেকেই উদ্ধার হয়েছে চন্দ্রমৌলির ঝুলন্ত দেহ।
ঘটনায় ইতিমধ্যেই অস্বাভাবিক মৃত্যু মামলা রুজু করেছে পুলিশ। তবে প্রাথমিক তদন্তের পর পুলিশ জানিয়েছে, মানসিক অবসাদে ভুগছিলেন চন্দ্রমৌলি। গত কয়েক বছর ধরেই হাতে তেমন কাজ ছিল না। অর্থনৈতিক সংকটে ছিলেন তিনি। জানা যায়, চন্দ্রমৌলির বন্ধু ও পরিজনরা পুলিশকে জানিয়েছেন ডিপ্রেশনের জন্য চিকিৎসাও চলছিল। তবে সত্যিই কি তাই? শুধু এই কারণেই কি নিজেকে শেষ করে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেন চন্দ্রমৌলি?
মৃত্যুর আসল কারণ সদ্য প্রকাশ্যে এনেছেন শিল্পীর আইনজীবী জয়ন্ত নারায়ণ চট্টোপাধ্যায়। তিনি সোশ্যাল মিডিয়ার মাধ্যমে প্রকাশ্যে এনেছেন আইনি লড়াই চলছিল আইনজীবীর। সম্প্রতি সেই মামলার রায়ও বের হয়েছিল। আইনজীবী জয়ন্ত নারায়ণ চট্টপোধ্যায়ের ধারণা সেই রায়ে খুশি হতে পারেননি শিল্পী। আর সেকারণই মনকষ্টে ভুগছিলেন এবং জীবনের চরম সিদ্ধান্ত নেন। ঠিক কী লিখেছেন তিনি?
জয়ন্ত নারায়ণ চট্টোপাধ্যায় লেখেন, 'আমি তোমাকে চিনতাম না, চন্দ্রমৌলি। একদিন আমার চেম্বারে তুমি এলে। সবার মাঝখানে, যেখানে, মক্কেলরা এসে বসেন, সেখানে তুমিও বসে ছিলে... কথায় কথায় তুমি বলেছিলে, আমাদের এলাকার একজন নামী ডাক্তারের বংশধর তুমি। যে বাড়ির সঙ্গে, আমাদের সম্পর্ক বহুদিনের।
ব্যস, এটুকুই। তুমি কোনোদিনই তোমার পরিচয় জাহির করতে চাও নি। একদিন তোমাকে আমার চেম্বারে দেখে, আমার জুনিয়র লইয়াররা বললেন …স্যার, উনি খুব গুনী মানুষ। খুব বড় মিউজিশিয়ান....... আমি দেখেছিলাম, একজন ভেঙে পড়া মানুষকে। যে অশান্তি আর নিতে পারছিল না। আমাকে দুঃখের কথা বলতে বলতে তোমার নিজের বুকের উপর ঝুঁকে পড়তো মাথা..... থর থর করে কাঁপতে থাকত, মুখের মাংস পেশী। চোখ থেকে টপ টপ করে ঝরে পড়তো জল। আমি তোমাকে ভোকাল টনিক দেবার চেষ্টা করতাম।'
জয়ন্ত নারায়ণ ফের লেখেন, 'তোমার মধ্যের ভেঙে পড়া মানুষটাকে জাগিয়ে তোলার চেষ্টা করতাম। বলতাম ..... আরে ....কষ্ট পাচ্ছো কেন? জেগে ওঠো। তারপর হাসতে হাসতে বলতাম, ভ্যান গখ থেকে রবীন্দ্রনাথ, যখনই কষ্ট পেয়েছেন, তখনই হাত দিয়ে সেরা সৃষ্টি বেরিয়েছে, তোমার হাত দিয়েও সেরা সৃষ্টি বেরোবে..… ।
এই তো সেদিন, দুহাজার চব্বিশের শেষ দিকে, তুমি আমার চেম্বারে এলে। থমথম করছিল মুখটা, আমি বলেছিলাম, তুমি এবার ফ্রি। আর কোর্টে আসতে হবে না। তুমি উত্তর দাও নি। মুখে হাসিও ছিলো না। মাথা নিচু করে, বেরিয়ে গেছিলে। আজ লোকে বলছে, আর্থিক কষ্টে ভুগছিলে..... আমি জানি, তুমি মনের কষ্টে ভুগছিলে, অসহায়তা, নিঃসঙ্গতা..... দীর্ঘদিনের চলা মামলা, অবশেষে মুক্তি.... তোমাকে খুশি করে নি.....তোমার হাসি হারিয়ে গিয়েছিল।।। তুমি দুঃখী হয়ে পড়েছিলে....তুমি ছিলে, আসল শিল্পী, যার মনটাই সব, মন ভেঙ্গে গেলে, যার সব চলে যায়, বাঁচার আগ্রহই চলে যায়।'