গান স্যালুট দিয়ে পূর্ণ রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রীকে শেষবিদায় জানানোর ইচ্ছে প্রকাশ করেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বৃহস্পতিবার সকালে বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের মৃত্যুর খবর পেয়েই পাম অ্যাভিনিউয়ের বাড়িতে ছুটে গিয়েছিলেন। বুদ্ধদেবের একমাত্র সন্তান সুচেতনকে পাশে নিয়েই নিজের বক্তব্য রাখেন মমতা।
মুখ্যমন্ত্রী জানান, বুদ্ধদেবের মৃত্যুতে বৃহস্পতিবার রাজ্য সরকারি ছুটি ঘোষণা করা হয়েছে। পাশাপাশি তাঁকে রবীন্দ্র সদন বা নন্দনে শায়িত রাখার কথাও জানান মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। কিন্তু সেই নিয়ে পরিবারের তরফে কোনও মন্তব্য করা হয়নি। বাম শিবিরের তরফে বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের শেষযাত্রার যে সূচী প্রকাশ্যে আনা হয়েছে সেখানে কোথাউ গান স্যালুটের উল্লেখ নেই। সুতরাং বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যকে গান স্যালুট দেওয়ার ব্যাপারে তৈরি হয়েছে ধোঁয়াশা। এর মাঝেই বিস্ফোরক মন্তব্য অনীক দত্তর।
বামমনস্ক এই পরিচালক এদিন পৌঁছেছিলেন বুদ্ধদেবের পাম অ্যাভিনিউয়ের বাড়িতে। সেখানে গিয়ে ক্ষুব্ধ পরিচালক। আনন্দবাজারকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে পরিচালক জানান, এক সময় বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যকে যাঁরা হেনস্থা করেছেন তাঁরা আজ সেখানে হাজির হয়েছিল। কেন? উত্তর পাননি পরিচালক।
তিনি আরও বলেন, আজ বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের ঘরে ঢুকে ওঁনার সামনে দাঁড়িয়ে ক্ষমা চেয়ে নিয়েছেন তিনি। কেন চেয়েছেন? পরিচালকের জবাব, ‘কার হয়ে চাইলাম জানি না। আমার হয়েই ক্ষমা চেয়ে নিলাম ওঁর কাছে।’ তিনি আরও জানান, প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রীর শোকেকাতর স্ত্রীর কাছে তিনি প্রার্থনা করেন, ‘গান স্যালুটটা হতে দেবেন না।’ উত্তরে মীরা ভট্টাচার্য জানিয়েছেন, ‘আমারও একদম ইচ্ছে নেই।’ অনীক দত্ত জানান মীরা ভট্টাচার্য তাঁকে অন্তত এই কথাই জানিয়েছেন। মীরা দেবীর সেই বার্তা তিনি শতরূপ ঘোষ-সহ দলের বাকি সদস্যদের কাছে পৌঁছে দিয়েছেন।
বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যর সিওপিডি-র সমস্যা বেড়েছিল বর্ষায়। তার সঙ্গে ভাইরাল অথবা ব্যাকটেরিয়াল সেকেন্ডারি ইনফেকশনে আক্রান্ত হন বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য। জ্বর থাকায় তাঁকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল। কিন্তু তিনি রাজি হননি। ভোররাতে শারীরিক পরিস্থিতি আচমকা বিগড়ে যায়। নিউমোনিয়ার জেরে কার্ডিয়াক অ্যারেস্ট হয় ৮টা ২০ মিনিট নাগাদ। অক্সিজেন স্যাচুরেশন ৪০%-এ নেমে যায়। আর ফেরানো যায়নি।
এদিন বিকালে পাম অ্যাভিনিউয়ের বাড়ি থেকে লাল পতাকায় মুড়ে শেষবারের মতো যাত্রা শুরু করেছেন বুদ্ধদেব। বৃহস্পতিবার রাতে পিস ওয়ার্ল্ডে শায়িত রয়েছে মরদেহ। আগামিকাল সকালে পিস ওয়ার্ল্ড থেকে বিধানসভার উদ্দেশ্যে যাত্রার সঙ্গে শুরু হবে বুদ্ধদেবের অন্তিম সফর। বিধানসভা ভবনে সকাল ১১-১১.৩০ মিনিট পর্যন্ত শায়িত রাখা হবে দেহ। এরপর মুজফফর আহমেদ ভবন (দুপুর ১২-৩.১৫ মিনিট) এবং দীনেশ মজুমদার ভবনে (৩.৩০-৩.৪৫ মিনিট) পৌঁছাবে বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের নিথর দেহ। এরপর দেহদানের জন্য নীলরতন সরকার মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের উদ্দেশ্যে শেষযাত্রা।