কখনও তিনি ‘সুচিত্রা সেন’, কখনও আবার ‘স্নেহলতা’। একই দিনে তাঁকে দুই রূপে দুইভাবে দেখতে পাবেন বাংলার সিনেপ্রেমী দর্শকরা। আর সেই দিনটা ১৫ই নভেম্বর। হ্যাঁ, ঠিকই ধরেছেন, ইনি আর কেউ নন অভিনেত্রী দর্শনা বণিক। শুক্রবার, মুক্তি পাচ্ছে দর্শনার দুটি ছবি একটা ‘যমালয়ে জীবন্ত ভানু’, অন্যটি পরিচয় গুপ্ত। ছবি মুক্তির আগে Hindustan Times Bangla-র সঙ্গে খোলামেলা আড্ডা দিলেন দর্শনা।
‘যমালয়ে জীবন্ত ভানু’- ছবিতে সুচিত্রা সেনের চরিত্রে, ছবির প্রস্তাব পাওয়ার পর ঠিক কী মনে হয়েছিল?
দর্শনা- প্রথমে যখন সুচিত্রা সেনের এই চরিত্রটা পেয়েছিলাম, তখন খুবই খুশি ছিলাম। কারণ আমিও আর সকলের মতো ওনার মানে 'মহানায়িকার' অনুরাগী। ওঁর চরিত্রে আমি নতুন করে অভিনয় করব, শুনেই রোমাঞ্চিত হয়েছিলাম। তবে পরক্ষণেই মনে হল, আমাকে কীভাবে ওঁর মতো দেখতে লাগবে, মহানায়িকার মতো করে কীভাবে করব! ভীষণই টেনশনে ছিলাম। তবে শ্যুটিং তো হয়ে গিয়েছে, মানে আমি পরীক্ষার খাতায় লিখে ফেলেছি (হেসে) এবার রেজাল্ট বের হওয়ার পালা, দর্শক কত নম্বর দেন,সেটার অপেক্ষায় রয়েছি।
এই ছবিতে রাজি হওয়ার কারণ কি ‘সুচিত্রা সেন’?
দর্শনা: অবশ্যই। সুচিত্র সেনের অভিনীত চরিত্র শুনেই রাজি হয়ে গিয়েছিলাম। এই চরিত্রটা যে ছবি জুড়ে আছে, এমনটাও নয়, তবে এটা তো আইকনিক চরিত্র, সেটা শুনেই রাজি হয়ে যাই।
তবে চরিত্রটির ছবি দেখে অনেকেই বলেছেন, সত্যিই যেন অবিকল ‘সুচিত্রা’, কী বলবেন?
দর্শনা: এটা আমার কাছে একটা কমপ্লিমেন্ট (প্রশংসা)। তবে আমাকে কখনও সুচিত্রা সেনের মতো দেখতে লাগতে পারে না, সেটা আমি ভাবতেই পারি নি। আমি কখনওই ওঁর সঙ্গে নিজের তুলনা করতে চাই না। She is a Diva। তবে তাঁর কাছাকাছি, যেটা করা গিয়েছে, তার পুরো কৃতিত্বটা পৌলমীদি-র (স্টাইলিং-এর জন্য) আর মেকআপে সোমনাথ কুণ্ডু, হেয়ারের জন্য সন্তোষীদি-কে দেব। পুরো কৃতিত্বটাই ওঁদের। ওঁরাই আমাকে এই রূপ দিয়েছেন।
আরও পড়ুন-কবে দেখা যাবে কাঞ্চন কন্যা কৃষভির মুখ? উত্তর দিলেন নতুন মা শ্রীময়ী
চরিত্রটা করার সময় কোথাও গিয়ে মনে হয়নি, যে এটা নিয়ে লোক তুলনা করতে পারে…
দর্শনা: তুলনা তো হবেই, চর্চাও হবে। লোকে নানান কথা বলবেন, এটা আমি শুরু থেকেই জানতাম। আর সেভাবেই নিজেকে তৈরি রেখেছিলাম। এটা একটা চ্যালেঞ্জ ছিল, আমি সেটা গ্রহণ করেছিলাম।
ছবিতে শাশ্বত চট্টোপাধ্যায়, পরাণ বন্দ্যোপাধ্যায়, আরও অনেকে রয়েছেন, সব মিলিয়ে কেমন অভিজ্ঞতা?
দর্শনা: শাশ্বতদার সঙ্গে আগেও কয়েকবার কাজ করেছি। সবসময়ই ভালো লাগে এঁদের মতো অভিনেতাদের সঙ্গে কাজ করতে। এখানে শাশ্বত চট্টোপাধ্যায়, পরাণ বন্দ্যোপাধ্যায়, অম্বরীশদা (অম্বরীশ ভট্টাচার্য) ছিলেন। সব মিলিয়ে খুব সুন্দর অভিজ্ঞতা। আমি নিজেই ১৫ নভেম্বর বড়পর্দায় ছবিটা দেখার অপেক্ষায় আছি। দর্শকের কেমন লাগছে, ফিল্ম সমালোচকদের কী প্রতিক্রিয়া হয়, সেটা জানার অপেক্ষায় আছি।
সিনেমায় সাড়ে চুয়াত্তর (১৯৫৩) ছবির শুটিংয়ের একটি দৃশ্য রয়েছে বলে শোনা গিয়েছে, এটা যদি একটু বিস্তারিত বলো..
দর্শনা: সাড়ে চুয়াত্তর-এর সেই আইকনিক দৃশ্য ভানু বন্দ্যোপাধ্যায়ের ‘মাসীমা মালপো খামু’ দৃশ্যটি ছবিতে রয়েছে, তবে সেখানে কিছু অল্পবিস্তর পরিবর্তন করা হয়েছে, কপি রাইটের বিষয়টা এড়ানোর জন্য। সাড়ে চুয়াত্তর- ছবিটাও আমার খুব পছন্দের। আমি বহুবার এই ছবিটা দেখে ফেলেছি। সেই দৃশ্যগুলি এই যুগে দাঁড়িয়ে আবারও করতে পারব, এটাই তো একটা বড় পাওনা। সারাজীবন মনে রাখার মতো একটা অভিজ্ঞতা। তার উপর এত বড় বড় অভিনেতাদের সঙ্গে কাজ করেছি। অন্যদিকে পরিচালনায় কৃষ্ণেন্দুদা (কৃষ্ণেন্দু চট্টোপাধ্যায়), তাই আমি বেশ খুশি ছিলাম।
একদিকে ‘যমালয়ে জীবন্ত ভানু’, অন্যদিকে ‘পরিচয় গুপ্ত’, দুটি সম্পূর্ণ অন্য ঘরানার ছবি। পরিচয় গুপ্ত ছবিটিতে কাজের অভিজ্ঞতা কেমন?
দর্শনা: পরিচয় গুপ্ত ছবিতে আমার সঙ্গে হৃত্বিক চক্রবর্তী ছিলেন, এছাড়াও ইন্দ্রনীলদা (ইন্দ্রনীল সেনগুপ্ত), জয় সেনগুপ্ত, প্রদীপ আঙ্কেল (প্রদীপ ভট্টাচার্য) রয়েছেন। ওঁদের সঙ্গে কাজ করাটাও দারুণ অভিজ্ঞতা। হৃত্বিক চক্রবর্তীর মতো অভিনেতার সঙ্গে কাজ করার ইচ্ছাটা আমার বহুদিনের। সেই সুযোগ ‘পরিচয় গুপ্ত’-এর মাধ্যমে এসেছে, খুবই সুন্দর অভিজ্ঞতা, অনেক শিখেছি, হৃত্বিকদার সহ-অভিনেতাদের কাজটা অনেক সহজ করে দেন। সেটাও একটা ভালো লাগার একটা জায়গা।
'পরিচয় গুপ্ত'-এ স্নেহলতার চরিত্রটি ঠিক কেমন?
দর্শনা: স্নেহলতা আদপে খুবই আনপ্রেডিকটেবল একটা চরিত্র। ও কখন যে কী চায়, সবসময় ও নিজেও সেটা বোঝে না। যেকোনও চরিত্রের তো একটা সততা থাকে। সেক্ষেত্রে আমার মনে হয়েছে, স্নেহলতা চরিত্রটিরও কিছু সততা তো ছিলই। আমার মনে হয় ও ভালোবাসতে চেয়েছিল, ভালো থাকতে চেয়েছিল, সেদিকগুলো কখনও কখনও ওর কার্যকলাপে ফুটে উঠেছে।
'পরিচয় গুপ্ত' ছবিতে স্নেহলতা শরদিন্দু নাথ সেন (হৃত্বিক চক্রবর্তী)-এর স্ত্রী। আবার শরদিন্দুর প্রত্নতাত্ত্বিক বন্ধু হলেন ইন্দ্রনীল সেনগুপ্ত। এটা খানিকটা কি 'ঘরে বাইরে'-এর মতো?
দর্শনা: না, না, পরিচয় গুপ্ত ঘরে বাইরের মতো নয়। এটা একটা থ্রিলার। যেটা অনেকটাই অন্যরকম। এটাকে কিছুটা সাইকোলজিক্যাল থ্রিলারও বলা যেতে পারে। এর বেশি কিছু বলব না। বাকিটা ছবি দেখে বুঝতে নিতে হবে…।
'পরিচয় গুপ্ত'-র শ্যুটিং হয়েছে পুরনো, বড় একটা জমিদার বাড়িতে, এমন একটা বাড়িতে শ্যুটিং করতে গিয়ে আলাদা কোনও অভিজ্ঞতা হয়েছে?
দর্শনা: ওই বাড়িটিতে আমি আগেও শ্যুটিং করেছি। জমিদার বাড়িতে শ্যুটিং করতে একটা আলাদাই অনুভূতি হয়। এমন বাড়ির চরিত্র, আবহ সবটাই অন্যরকম হয়। আর আমার ব্যক্তিগতভাবে যেকোনও পুরনো জিনিসের প্রতি একটা আালাদা আগ্রহ, আবেগ কাজ করে। তাই যখন এধরনের বাড়িতে কাজ করি, শ্য়ুটিংয়ের ফাঁকে সুযোগ পেলেই ঘুরে বেড়াই, পুরনো বাড়ি, বিষয়টাগুলিকে তাড়িয়ে তাড়িয়ে উপভোগ করি, ভাবি, নানান কিছু কল্পনা করি। বেশ নস্টালজিক লাগে। (হাসি)
আরও পড়ুন-অন্ধ জমিদার ঋত্বিক, শেষ হল ‘পরিচয় গুপ্ত’ ছবির শ্যুটিং, রইল সেট থেকে ছবি
এবার একটু অন্য প্রসঙ্গে আসি…
সামনেই তো বিবাহবার্ষিকী, কীভাবে সেলিব্রেট করার পরিকল্পনা রয়েছে?
দর্শনা: হ্যাঁ, ১৫ ডিসেম্বর আসছে। (লাজুক হাসি) এই দিনটা অবশ্যই আমার কাছে স্পেশাল। প্রথম বিবাহবার্ষিকীর দিনটা খালিই রেখেছি। আমি আর সৌরভ এদিন দুজনে একসঙ্গে কোথাও খেতে যাওয়ার ইচ্ছা রয়েছে। বা বাড়িতেই হয়ত নিজেদের পছন্দের খাবার-দাবার খেলাম, সেটাও হতে পারে। তবে ওই দিনটা শুধু আমার আর সৌরভের জন্যই রেখেছি। এখনও নির্দিষ্ট কোনও প্ল্যান সেভাবে করে উঠতে পারিনি।
বিয়ের পর ১ বছর হতে চলল, জীবনটা কি কিছু বদলেছে বলে মনে হয়?
দর্শনা: আজকালকার দিনে আসলে বিয়ের আগে ও পড়ে খুব বেশি পার্থক্য হয় না, হওয়ার কথাও নয়! বিশেষ করে মেট্রোপলিটন সিটিগুলিতে। আমরা যেধরনের লাইফ লিড করি, প্রেমিক-প্রেমিকারা, যেমন বিভিন্ন জায়গায় ঘুরতে যাওয়া, সিনেমা দেখতে যাই, বাড়িতে যাতায়াত করি, ফোনে কথা বলি, নিয়মিত দেখা করি, অনেকে তো আজকাল বিয়ের আগেই একসঙ্গে থাকে। তাই বিয়ের আগে-পরে আলাদা তেমন কিছুই মনে হয় না! আজ থেকে ১০-১৫ বছর আগে অনেককিছু আলাদা হত হয়ত। এখন আর কিছু বদলায় না। বিয়ের আগেও যেমন ছিল, বিয়ের পরও তেমনই আছে। (হাসি)
আমাদের বিয়ের ৩ দিন পর থেকে সৌরভ কাজে ফিরে গিয়েছিল। আমি ৫দিন পর কাজে ফিরেছি। এখনও ও আউটডোরে যায়, আমিও বাইরে যাই শ্যুটিংয়ের জন্য। সব একই আছে। কিছুই বদলায়নি আসে। অন্তত আমি তো তেমন কিছু অনুভব করিনি।
বিয়ের ১ বছর, নেটপাড়ায় দর্শনা-সৌরভের ছবি দেখলে কেউ কেউ তো মজা করে বলছেন, ‘সুখবর কবে শুনব’, কী বলবেন…
দর্শনা: এই বিষয়ে আমি কিচ্ছুটি বলতে চাই না… (লাজুক হেসে)