ইমরান হাশমির সঙ্গে কাজের অভিজ্ঞতা কেমন?
একদমই অন্যরকম একটা অভিজ্ঞতা। এত শান্ত, শিক্ষিত, অবিডিয়েন্ট ভদ্রলোক খুবই কম দেখা যায়। ফিল্মে যেমন দেখি, বাস্তবে তার চেয়ে একেবারে আলাদা একজন মানুষ। অনেক কিছু শেখার রয়েছে ওঁর কাছে। অসম্ভব শান্ত। খুব কম কথা বলেন। ডিরেক্টোরিয়াল টিম, আর্টিস্ট, টেকনিশিয়ান সহ ফ্লোরের প্রত্যেককে যথেষ্ট সম্মান দিয়ে কথা বলেন। শুটিংয়ের ফাঁকে সারাক্ষণ বই পড়েন। প্রথম যখন কাজটা আরম্ভ হয় তখন খুব ভয়ে ভয়ে ছিলাম। আমি একেবারেই নতুন আর এদিকে বড় বড় সব স্টার কাস্টিং! কিন্তু যখন শুটিং আরম্ভ হয়, তখন বুঝতেই পারলাম না যে আমি নতুন! ইমরান স্যার তো বটেই, অন্যন্য কোঅ্যাক্টর এবং টিম মেম্বাররা এতটাই সাহায্য করলেন যে নিমেষেই সব কিছু খুব সহজ হয়ে গিয়েছিল আমার কাছে। জড়তা, ভয় সবই কেটে গিয়েছিল। প্রত্যেকদিন আমরা একসঙ্গে সবাই মিলে লাঞ্চ, ডিনার করতাম, তখন প্রচুর আড্ডা আলোচনা চলত, এর ফলে প্রত্যেকের সঙ্গে সম্পর্কটা সহজ হয়ে গিয়েছিল। যেটা শুটিংয়ের সময় খুব কাজে দিয়েছে। আমার দ্বারা যতটা সম্ভব মনপ্রাণ ঢেলে কাজটা করেছি। এবার দেখা যাক দর্শকের কেমন লাগে। পোস্ট প্রডাকশনের সব কাজই মোটামুটি শেষ। এবার অপেক্ষা মুক্তির সঠিক সময়ের।
কেমন করে এল এই সুযোগ?
টলিউডের পাশাপাশি বলিউডেও চেষ্টা চালাচ্ছিলাম কাজ করার। প্রথম প্রথম কিছু বিজ্ঞাপানে কাজের সুযোগ আসে মুম্বই থেকে। তখন থেকে কলকাতা এবং মুম্বই এই দুই জায়গা মিলিয়ে যাতায়াত করেই কাজ করতে থাকি। এই ছবিটার জন্য ডিরেক্টর জয় কৃষ্ণ্ন অনেকদিন ধরেই নাকি একটা নতুন মুখ খুঁজছিলেন। আমার প্রফাইল ওঁরা সোশ্যাল নেটওয়ার্কিং সাইটে প্রথম দেখেন। ডাক আসে মুম্বই থেকে। ঘটনাচক্রে আমি সেই সময় কলকাতা থেকে মুম্বই ট্র্যাভেল করছিলাম অন্য একটা অ্যাড ফিল্মের শুটিংয়ের জন্য। ডাক পেয়ে সঙ্গে সঙ্গে যোগাযোগ করি। এরপর অডিশন দিই। তারপর আমার তিন চার রকম লুক-সেট হয়। সবশেষে ফাইনালি আমাকে সিলেক্ট করা হয় ওই চরিত্রের জন্য। পরে কাস্টিং ডিরেক্টরের কাছে জেনেছিলাম, এই চরিত্রটার জন্য আমার আগে তিনশ জনের অডিশন হয়েছিল।
নিজেকে কীভাবে তৈরি করেছিলেন এই ছবির জন্য?
যখন শুনেছিলাম তিনশ জনের মধ্যে থেকে আমাকে সিলেক্ট করা হয়েছে তখন এটা আমার কাছেও যথেষ্ট চ্যালেঞ্জিং ছিল। আমাকে আমার বেস্টটা দিতে হবে এটা মাথায় রেখেই আমি হোমওয়ার্ক শুরু করি। এই ফিল্মটা একটি তামিল ছবির রিমেক। ডিরেক্টর জয় কৃষ্ণন স্যার আমায় বলেছিলেন কোনও ভাবেই যেন তামিল ভার্সানটা আমি না দেখি, ওটা দেখলে আমার নিজস্বতা হারিয়ে যাবে। এরপর আর কখনও ছবিটা দেখার চেষ্টা করিনি। যা করেছি সবটাই আমার নিজের স্টাইলে করেছি। কো-অ্যাক্টররা খুব সাহায্য করেছেন।
আপনার মতে টলিউড এবং বলিউডের বেসিক পার্থক্যটা কোথায়?
আমি তো বলব বাজেটের কথা। আমাদের টলিউডে অনেক ভালো ভালো স্ক্রিপ্ট, গল্প, মনের মতো করে বানানো যায় না বাজেটের জন্য। সব ক্ষেত্রেই কম্প্রোমাইজ করতে করতে ছবির আসল বিষয়টাই কেমন পালটে যায়! কিন্তু বলিউডে বাজেটের ক্ষেত্রে কোনও কম্প্রোমাইজ নেই। যা যা দরকার তাই ব্যবস্থা করা হয়। তাছাড়া বলিউডে প্ল্যানিং এবং প্রিপ্রোডাকশনে এতটাই গুরুত্ব দেওয়া হয় যে ফাইনাল ডিসিশনটা একবারই হয়। শুটিং শুরুর আগে নতুন করে কোনও আলোচনা বা ভাবনাচিন্তার কোনও জায়গা নেই।
কেবলমাত্র সিনেমা? টেলিভিশন নয়?
প্রথম থেকে মূলত সিনেমাতেই কাজ করতে চেয়েছিলাম। সেই মতই নিজেকে তৈরি করেছি। টেলিভিশন অবশ্যই, তবে সেটা মেগা সিরিয়াল নয়। কারণ টানা একবছর দু’বছর ধরে একটাই চরিত্র, একই ভাবে, একই ফ্লোরে, সেই একই লোকজন, একই মেক-আপ, আমার পক্ষে করে যাওয়া সম্ভব নয়, এটা আমার জন্য অনেক বড় একটা চ্যালেঞ্জ! আর সেটা জেতার জন্য যে ধৈর্য্যটা দরকার তা আমার নেই। তবে ওয়েব সিরিজ, অ্যাড ফিল্ম এইগুলো সবসময় করতে চাই। কলকাতায় বিজ্ঞাপন দিয়েই আমার কেরিয়ার শুরু। এরপর বাংলা ওয়েব সিরিজ এবং মেইন স্ট্রিম বাংলা ছবিতে কাজ করার সুযোগ আসে। এই মুহূর্তে কলকাতা, মুম্বই ছাড়াও তেলেগু ছবিতে কাজ করলাম।সেটা এখন মুক্তির অপেক্ষায়। সাউথের আরও কিছু ফিল্ম প্রজেক্ট ফাইনাল হয়েছে।
এখন মুক্তির অপেক্ষায় কোন কোন ছবি ?
অয়ন চক্রবর্তীর ষড়রিপু ২, এবং রাজীব বিশ্বাসের প্রতিঘাত। এই দু’টিই মেইন স্ট্রিম বাংলা ছবি। প্রতিঘাতে বিট্টুদা (সোহম) এবং প্রিয়াঙ্কা সরকার অভিনয় করেছেন। ষড়রিপু ক্রাইম থ্রিলার। দু’টি ছবিতেই আমার চরিত্র বেশ চ্যালেঞ্জিং। পোস্ট প্রডাকশনের সব কাজ শেষ। শুধুমাত্র মুক্তির অপেক্ষায় ছিল, কিন্তু এখন করোনা কাণ্ডের জন্য যা পরিস্থিতি তাতে লকডাউন শেষ না হওয়া পর্যন্ত মুক্তির সঠিক তারিখ বলা যাচ্ছে না। এর পাশাপাশি বাংলাদেশের একটি বিগ বাজেট ছবি ‘অপারেশন সুন্দরবন’- এ কাজ করলাম। একেবারে ভিন্নধর্মী একটি কাজ। আমি নিজেও খুব আশাবাদী প্রজেক্টটা নিয়ে। ছবিটার কাজ প্রায় শেষ। এখন দেখা যাক কবে আবার সব কিছু স্বাভাবিক হয়।
মুম্বইতে এই মুহূর্তে পরিস্থিতি কেমন? কেমন করে সময় কাটছে?
এখানে কিন্তু সব কিছুই খুব নিয়ম মেনেই চলছে। খুব দরকার ছাড়া বাড়ির বাইরে লোকজন যাচ্ছে না। দোকানে বাজারে দূরত্ব বজায় রেখেই কেনাকাটা চলছে। কিছু দরকার থাকলে বাইরে যাচ্ছি, তখন দেখলাম রস্তাঘাট একদম ফাঁকা। দোকানের ভিতরে একেকবারে একজনকেই প্রবেশের অনুমতি দিচ্ছে। তাঁর হয়ে গেলে অন্য আরেকজন ঢুকতে পারবেন। সপ্তাহে একদিনই, শুধুমাত্র শনিবারই ফল, সবজি পাওয়া যাচ্ছে। আমি ১৫-ই মার্চ একটা কাজে মুম্বই এসেছিলাম। তারপর আটকে পড়েছি। তবে লকডাউন শেষ হলে কলকাতা ফিরতে পারব কিনা এখনও জানিনা, কারণ দক্ষিণের ছবির কাজ শুরু হওয়ার কথা। সেক্ষেত্রে হয়ত এখান থেকেই সোজা চেন্নই চলে যেতে হবে। আমি সবাইকে অনুরোধ করব, এত দিন যখন ধৈর্য্য ধরে থাকলেন আরও কিছুটা দিন একটু কষ্ট করে গৃহবন্দী থাকুন। তাহলেই আমরা একটা সুস্থ পৃথিবীতে ফিরতে পারব।