কাঁথিতে মিউজিশিয়ানদের হেনস্থা ও তাঁদের যন্ত্রপাতি আটকে রাখার ঘটনায় শনিবার উত্তাল হয়ে উঠেছিল সোশ্যাল মিডিয়া। প্রতিবাদে সরব হন ইমন চক্রবর্তী, লোপামুদ্রা মিত্র, জয় সরকাররা। অবশেষে পুলিশি হস্তক্ষেপে সমস্যা মিটল, কাঁথির বকশিসপুরে শিল্পীদের ২৫ লক্ষ টাকা মূল্যের যে বাদ্যযন্ত্র আটক করে রাখা হয়েছিল তা ফিরিয়ে দেওয়া হয়েছে। ইতিমধ্যেই সেইসব বাদ্যযন্ত্র ও সাউন্ডের সরঞ্জাম মিউজিশিয়ানদের ফিরিয়ে দিয়েছে কাঁথির জুনপুট কোস্টাল থানা এলাকার পুলিশ।
গত ৩রা এপ্রিল পূর্ব মেদিনীপুরের বকশিসপুরে অভিনেত্রী দেবশ্রী রায়ের একটি সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান করার কথা ছিল। কিন্তু অনুষ্ঠান ভেনুতে হাজির হননি দেবশ্রী, এই অভিযোগে তাঁর সহ-শিল্পীদের লক্ষ লক্ষ টাকার বাদ্যযন্ত্র এবং সাউন্ডের নানান সামগ্রী আটকে রেখেছেন উদ্যোক্তরা, এমনই অভিযোগ ছিল মিউজিশিয়ানদের। যন্ত্র আটকে রাখায় ৬ দিন ধরে কাঁথিতেই আটকে ওই শিল্পীরা। পুলিশ শুরুতে ব্যবস্থা না নেওয়ায় শনিবার মেচেদা বাইপাস অবরোধ করে বিক্ষোভ দেখান তাঁরা।
অন্যদিকে সোশ্যাল মিডিয়ায় প্রতিবাদের ঝড় উঠলে নড়চড়ে বসে পুলিশ-প্রশাসন। পুলিশের তরফে বিষয়টি সমাধানের আশ্বাস পেয়ে বিক্ষোভ কর্মসূচি তুলে নেয় শিল্পীরা। এরপর শনিবার রাত বারোটার নাগাদ পুলিশ বকশিসপুর থেকে শিল্পীদের আটক বাদ্যযন্ত্র উদ্ধার করে আনে। সেইসব বাদ্যযন্ত্র তুলেও দেওয়া হয় শিল্পীদের হাতে। তবে আয়োজকরা বুকিং-এর টাকা বাবদ যে অর্থ দিয়েছিল সেই এক লক্ষ ৬০ হাজার টাকা ফিরত দিতে হয়েছে।
কী কারণে দেবশ্রী রায় পৌঁছাননি শো করতে? জানা গিয়েছে, ৩রা এপ্রিল রাতে কাঁথিতে যথাসময়ে পৌঁছেছিলেন অভিনেত্রী। সেখানে দু-ঘন্টা অপেক্ষা করেন নায়িকা। বহুচেষ্টা সত্ত্বেও আয়োজক কমিটির লোকেদের ফোনে পাওয়া যায়নি। এমনকি স্থানীয় পুলিশও অভিনেত্রীর অনুষ্ঠান সম্পর্কে কিছুই জানতো না। অবশেষে বিরক্ত হয়ে কাঁথি ছাড়েন দেবশ্রী রায়। এই ব্যাপারে এক সংবাদমাধ্যমকে অভিনেত্রী জানান,'আমি তো গিয়েছিলাম। ওরা পুলিশের অনুমতি পর্যন্ত নেয়নি। মিউজিশিয়ানদের যেভাবে আটকে রেখেছে তা অপরাধ। ওদের পরিবার তো কিডন্যাপের অভিযোগ করতে পারে'।
গোটা ঘটনায় নিন্দার ঝড় ওঠে ফেসবুকে। লোপামুদ্রা মিত্র তাঁর ফেসবুক লাইভে এসে শনিবার বলেন, ‘আমার কয়েকজন মিউজিশিয়ান বন্ধু কাঁথিতে অনুষ্ঠান করতে গিয়ে আটকে রয়েছেন। ঠিক কী কারণে তাঁদের আটকে রাখা হয়েছে সেটা নিয়ে নিশ্চিত নই। তবে আমিও এরকম পরিস্থিতির মধ্যে পড়েছি তাই ধারণা করতে পারি নিশ্চয় অর্গানাইজার সংক্রান্ত সমস্যায় পড়েছে। আমি এই বিষয়ে পুলিস ও পশ্চিমবঙ্গের তথ্য-সংস্কৃতি বিভাগের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি।’
ইমন বলেন, ‘গানবাজনা করতে চাওয়ার পরিণাম কী এই যে একটা দলকে চার পাঁচদিন আটকে রাখা হবে? যারা এই কাজ করেছেন তাদের দুঃসাহস দেখে আমি অবাক হয়ে যাচ্ছি। আমি পশ্চিমবঙ্গ সরকারকে করজোড়ে অনুরোধ করব যে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব একটা ব্যবস্থা নিন।’
প্রতিবাদ, বিক্ষোভের পর অবশেষে বাদ্যযন্ত্র ফিরে পেয়ে স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলছেন মিউজিশিয়ানরা। কাঁথি ছেড়ে আপতত দীর্ঘশ্বাস ফেলছেন শিল্পীরা।