জেএনইউর বিক্ষোভরত পড়ুয়াদের ভিড়ে মঙ্গলবার সন্ধ্যায় আচমকাই ভেসে উঠে একটি পরিচিত মুখ। এদিন সন্ধ্যায় ক্যাম্পাসের সাবরমতী হস্টেলের বাইরে টি পয়েন্টে প্রতিবাদী সভায় হাজির হলেন দীপিকা পাড়ুকোন। জহরলাল নেহেরু বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে ছাত্রছাত্রীদের উপর ঘটা হামলায় মর্মাহত বলিউডের মস্তানি। তাই নিজের আসন্ন ছবি ছপাকের প্রচারে রাজধানীতে হাজির দীপিকা নিজেকে ধরে রাখতে পারেন নি। পৌঁছেছিলেন পড়ুয়াদের পাশে দাঁড়াতে।
দীপিকার এই পদক্ষেপ স্বাভাবিকভাবেই ভালো চোখে নেয় নি গেরুয়া শিবির, সোশ্যাল মিডিয়াও দ্বিধাবিভক্ত। টুইটারে পয়লা নম্বরে ট্রেন্ড করছে- #boycottchhapaak , অনেকেই দীপিকার সমর্থনেও পাশে দাঁড়িয়েছেন, বলছেন- #ISupportDeepika।
দীপিকার সাহসী পদক্ষেপের প্রশংসায় বলিউডের প্রতিবাদী মুখেরা। পরিচালক অনুরাগ কশ্যপ, নিখিল আডবানি, হনসল মেহতা, অনুভব সিনহা থেকে অভিনেত্রী স্বরা ভাস্কর, রিচা চড্ডা, সায়নি গুপ্তা- জহরলাল নেহেরু বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে পৌঁছে ছাত্র আন্দোলনের পাশে দাঁড়ানো দীপিকায় মুগ্ধ তাঁরা।
দীপিকার ভূয়সী প্রশংসা করে টুইট বার্তায় ব্ল্যাক ফ্রাউডে পরিচালক অনুরাগ কশ্যপ লেখেন, 'মানব জাতির দুই শ্রেণীর(নারী ও পুরুষ) মধ্যে নারীরাই সবসময় শক্তিশালী ছিল, আছে আর থাকবে #DeepikaPadukone। ছপাক ফার্স্ট ডে ফার্স্ট শো। সকলে যারা হিংসার বিরুদ্ধে, তারা বুক মাই শোতে গিয়ে দেখিয়ে দাও। তোমাদের এই মৌন প্রতিবাদই তীব্র প্রতিধ্বনি তুলবে'।
জেএনইউতে দীপিকার উপস্থিতির পরই বিজেপির নিশানায় দীপিকা। তাঁর আসন্ন ছবি ছপাককে বয়কট করার ডাক দিয়েছেন দিল্লির বিজেপি নেতা তেজেন্দ্র পাল সিং বগ্গা। গেরুয়া শিবির থেকে তাঁকে টুকরে টুকরে গ্যাংয়ের সদস্য বলেও আক্রমণ করা হয়েছ।
নিখিল আডবানি লেখেন, প্রযোজক হিবাসে আজ দীপিকা পাড়ুকোনে কোনও মুম্বইয়ের প্রেক্ষাগৃহে দাঁড়িয়ে থাকা উচিত ছিল। তাঁর প্রযোজিত প্রথম ছবির প্রসঙ্গে প্রশংসা বার্তা শোনা উচিত ছিল। তবে সেটা না করে তিনি পড়ুয়াদের প্রতি সমবেদনা জানিয়ে প্রতিবাদ সভায় সামিল হলেন। এটা জেনেও যে এর পরিণতি কি হতে চলেছে। শ্রদ্ধা নিও দীপিকা।
দীপিকার এই পদক্ষেপে রণবীর সিং এখনও পর্যন্ত কোনও মন্তব্য না করলেও, গর্বিত তাঁর অন স্ক্রিন স্বামী বিক্রান্ত মাসি। ছপাক তারকা এদিন জেএনইউতে উপস্থিত দীপিকার ছবি টুইট করে লেখেন, ‘গর্বে ফুলে উঠছি দীপিকা’ ।
রিচা চড্ডা লেখেন, 'সাহসী দীপিকা পাড়ুকোন'।
পরিচালক হনসল মেহতা লেখেন, 'দীপিকা,রিচা, সোনম, আলিয়ারাই আসল হিরো'।
দেশের বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ে বলিউডের তথাকথিত প্রথমসারির নায়ক-নায়িকাদের মৌনব্রত ধারণ করা নিয়ে এক আগে কটাক্ষ করেছেন সায়নি গুপ্ত। এদিন অক্ষয় কুমারের জলি এলএলবি টুর কোস্টার লেখেন, 'ধন্যবাদ দীপিকা এই আন্দোলনের মূলস্ত্রোতের সঙ্গে যুক্ত হওয়ায়। তোমার ক্ষমতার সঠিক ব্যবহার করে তুমি সঠিক পথ নির্বাচন করেছো। বেশিরভাগ সময়ই দায়িত্ব এসে পড়ে মেয়েদের উপর। আর হ্যাঁ তারাই পথ দেখায়। অনেক ভালোবাসা বোন। #WeAreWithJNU #noplaceforfascism.’
এদিন জেএনইউয়ের ছাত্র সংসদের সভানেত্রী ঐশী ঘোষের সঙ্গেও দেখা করেন দীপিকা। সেখানে হাজির ছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র সংসদের প্রাক্তন সভপতি কানাহাইয়া কুমারও। দীপিকার এই পদক্ষেপ ছাত্রদের মনে বল জোগাবে ফেসবুকের দেওয়ালে লেখেন কানাইয়া। এই বাম ছাত্রনেতা লেখেন,'তোমাক সাহসীকতাকে কুর্নিশ। এই সহমর্মিতা ও সমর্থনের জন্য অনেক ধন্যবাদ দীপিকা পাড়ুকোন। তোমাকে হয়ত ট্রোল করা হবে, অশ্রাব্য ভাষায় আক্রমণ করা হবে। কিন্তু ইতিহাস তোমাকে মনে রাখবে তোমার সাহসীকতার জন্য ...'
যদিও জেএনইউতে পৌঁছেও বক্তব্য না রাখায় কিছুটা হলেও আক্ষেপের সুর ঐশীর গলায়। ঐশী সংবাদমাধ্যমকে জানান, 'যখন কেউ জায়গায় আছে, তখন তাঁর মুখ খোলা উচিত। এই বাম ছাত্রনেতা বলেন,' বলিউডে অনেকেই আছেন যাঁরা নিজেদের মতামতা প্রকাশ্যে আনেন না তবুও তাঁদের রোল মডেল হিসাবে বিচার করা হয়। আমি তাঁদের কাছে আবেদন জানাচ্ছি কোনও অনুপ্রেরণা দেওয়া মতো বিষয় নিয়ে ছবি অবশ্যই তৈরি করুন, তবে যেটা ঘটছে সেটা নিয়েও কথা বলুন'।