বাংলা ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রির স্বার্থে একজোট হওয়ার ধ্বনি বরাবর শোনা গিয়েছে দুজনের মুখেই, কিন্তু আচমকাই ‘ঝামেলা লেগে গেল’ টলিউডের এই দুই বিখ্যাত ব্যক্তিত্বের! কথা হচ্ছে পরিচালক সৃজিত মুখোপাধ্যায় ও সুপারস্টার দেবের। ‘ব্যোমকেশ’ নিয়ে তরজা জারি দীর্ঘদিন ধরেই। সৃজিতের এক সাম্প্রতিক সাক্ষাৎকার বিতর্কের আগুনে ঘি ঢেলেছে। কম কথাতেই নিজের পক্ষ রাখলেন দেব। জানালেন সৃজিত মুখোপাধ্যায়ের সঙ্গে আপতত কোনও কাজই করছেন না তিনি। সিরাজদ্দৌলার বায়োপিক নিয়ে কোনও ধারণা নেই তাঁর। গোটা বিষয় নিয়ে খোঁচা দিতে ছাড়লেন না দেবের ‘ব্যোমকেশ’ পরিচালক বিরসা দাশগুপ্ত।
ভাবছেন ব্যাপারটা কী? তাহলে একটু প্রেক্ষাপটটা গুছিয়ে বলা যাক। ‘ব্যোমকেশ ও দূর্গ রহস্য’ বড় পর্দার জন্য পরিচালনা করার কথা ছিল সৃজিত মুখোপাধ্যায়ের। নিজের পছন্দের অভিনেতা অনির্বাণ ভট্টাচার্যকে ব্যোমকেশ হিসাবে বেছে নিয়েছিলেন সৃজিত। কিন্তু নামী প্রযোজনা সংস্থা এবং স্বত্বধারী প্রযোজকের সঙ্গে মতোবিরোধের জেরে থমকে যায় সেই প্রোজেক্ট। পরে স্বত্বধারী প্রযোজক হাত মেলান দেবের সঙ্গে এবং নির্দেশ আসে পালটাতে হবে ব্যোমকেশ। রাজি হননি সৃজিত। তিনি ‘খোকা’কেই ব্যোমকেশ হিসাবে চান। অগত্যা সেই ছবি পরিচালনার দায়িত্ব পান বিরসা দাশগুপ্ত। ওদিকে শরদিন্দুর একই ব্যোমকেশ কাহিনি নিয়ে হইচই প্ল্যাটফর্মের জন্য ‘ব্যোমকেশ ও দূর্গ রহস্য’ বানাচ্ছেন সৃজিত, সেখানে নামভূমিকায় অনিবার্ণ। যিনি হইচইয়ের ব্যোমকেশ হিসাবে ইতিমধ্যেই নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করে ফেলেছেন।
ব্যোমকেশ হিসাবে দেবকে চাননি সৃজিত। এই সময়কে দেওয়া সাক্ষাৎকারে এই প্রসঙ্গে পরিচালক বলেন, ‘আমি বলেছিলাম, আমার মতো করে ছবি করব। যদি তাতে ছবি করতে রাজি হন, ছবি হবে। না হলে হবে না।’ ১৪ বছরের কেরিয়ারে তিনি আপোস করেননি, আর ভবিষ্যতেও করবেন না স্পষ্ট বলেন সৃজিত। এখানেই থেমে থাকেননি তিনি আরও বলেন-'শরদিন্দুর যে ব্যোমকেশ, আমি সেটার ব্যাপারে খুব খুঁতখুঁতে। ছোটবেলায় লেখাটা পড়ে ব্যোমকেশের যে রূপ আমার মন গেঁথে গিয়েছে, তার সঙ্গে দেবের তুলনায় অনির্বাণ বেশি খাপ খায়।'
তবে ব্যোমকেশ হিসাবে না-পসন্দ দেবকে নিয়ে নাকি আগামিতে দুটো প্রোজেক্ট পরিকল্পনা করেছেন সৃজিত (তাঁর এমনটাই দাবি)। যার মধ্যে একটি বাংলার শেষ স্বাধীন নবাব সিরাজদ্দৌলার বায়োপিক। ‘জুলফিকার’ পরিচালকের দাবি ফুৎকারে উড়িয়ে এদিন টুইটারে ফ্যানের প্রশ্নের জবাবে দেব জানান, ‘আমি সিরাজ করছি না। বাকিটা জানি না’। দুটো ছবি নিয়ে সৃজিতের সঙ্গে অনেক দূর কথা হয়েছে, একথাও ‘পুরোটা সত্যি নয়’ বলে জানান টলি তারকা।
এরপর দেবের ‘ব্যোমকেশ’ পরিচালক বিরসা দাশগুপ্ত যেমন খুশি প্রশ্ন কর সেশনে প্রকাশ্যে নায়কের কাছে জানতে চান, ‘ব্যোমকেশ বক্সী হয়ে কেমন লাগছে? আর তোমাকে আমরা কবে সিরাজের ভূমিকায় দেখব?’ সেই টুইটের জবাবে দেব লেখেন- ‘আমার জীবনের সবচেয়ে কঠিন চরিত্রের একটা ব্যোমকেশ। আর সিরাজের ব্যাপারে কোনও আইডিয়াই নেই’। সেই পোস্টের কমেন্ট বক্সে বিরসা হাসি-মাখানো কান্না এবং হাততালি-র ইমোটিকন জুড়ে দেন। সৃজিতকে খোঁচা দিয়েই বিরসার এই প্রতিক্রিয়া, দাবি নিন্দকদের।
ব্যোমকেশ নিয়ে টানাটানি অব্যাহত। টলিপাড়ায় সাম্প্রতিক কানাঘুষো দেব তাঁর দূর্গরহস্যের যে লোকেশনে শ্য়ুটিং সেরে ফেলেছেন সেই জায়গাতেই অনির্বাণকে নিয়ে ব্যোমকেশ সৃজিতের শ্যুটিং সারছেন সৃজিত। সব মিলিয়ে ‘সত্যান্বেষী’ ব্যোমকেশ কি ফাটল ধরালো দেব-সৃজিতের পুরোনো বন্ধুত্বে? উত্তরের অপেক্ষায় ইন্ডাস্ট্রি।