আরজি করের নৃশংস ঘটনা নিয়ে দীর্ঘ সময় চুপ থাকায় সোশ্যাল মিডিয়ায় তোপের মুখে পড়েছিলেন তৃণমূলের তারকা সাংসদ দেব। বিদেশে ছুটির মুডে থাকা দেব প্রযোজনা সংস্থার তরফে খাদানের টিজার রিলিজ পিছিয়ে শোকপ্রকাশ করেই ক্ষান্ত থেকে ছিলেন। পরে অবশ্য আর্টিস্ট ফোরামের ডাকে আরজি কর কাণ্ড নিয়ে প্রতিবাদে পা মেলান দেব।
ঘটনার প্রায় এক মাসের ব্যাবধানে সামনে এল টেক্কার টিজার। দেবের পুজো রিলিজ সৃজিত মুখোপাধ্যায় পরিচালিত এই ছবি। আরজি কর ইস্যুতে বারবার কাঠগড়ায় তোলা হচ্ছে শিল্পীদের। 'উৎসবে ফিরছি না', দেবের সহ-অভিনেত্রী, স্বস্তিকা এই কথা বলায় ‘টেক্কা’ বয়কটেরও ডাক নিয়েছেন অনেকে। রাজ্যের বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ে টেক্কার টিজার লঞ্চে নিজের মতামত রাখলেন দেব। যা রীতিমতো বিস্ফোরক।
দুর্গোৎসব তথা মুখ্যমন্ত্রীর উৎসবে ফিরুন মন্তব্য ঘিরে যে বিতর্ক তৈরি হয়েছে, এদিন সেই নিয়ে খোলাখুলি কথা বললেন দেব। তিনি জানালেন, 'উৎসবটা কী? উৎসব মানে মানুষকে বাঁধা, উৎসব মানে মানুষকে এক রাখা। উৎসব মানে শুধুই সেলিব্রেশন নয়। উৎসব মানে প্রতিবাদের ভাবনাও ভাগ করে নেওয়া। উৎসবের কনসেপ্ট আমাদের দেশে এসেইছিল যাতে ধনী-দরিদ্রের ভেদাভেদ মুছে, ছোট-বড় সব জাতপাতের ভেদাভেদটা মুছে সব মানুষ এক হতে পারে। উৎসব তো প্রতিবাদ করতে আটকাচ্ছে না। উৎসবের তো জন্ম হয়েছে ব্রিটিশ আমলে। আমি তো বাঘাযতীনে অভিনয়ের সময় জেলে বসেও গণেশ পুজো সেলিব্রেট করেছি। উৎসবে সব মানুষ এক হবে, মানুষ আলোচনা করার সুযোগ পাবে। তাই তো?
এটা শুধু তোমার-আমার উৎসব নয়, আমাদের পাঁচদিনের উৎসবটা অনেকের পাঁচ মাসের রোজগার। মল-কালচারের যুগে পুজোর সময়েই সিঙ্গেল-স্টান্ড অ্যালোন দোকানে কেনাবেচা হয়। উৎসবে ফিরছি না বলে, ওদের কেনাবেচা হচ্ছে না। ওদেরকে জাস্টিস কে দেবে? আমি কিন্তু কারুর বিরুদ্ধে কথা বলছি না।'
দেব আরও জানান, ‘উৎসবটা সবার নিজের, কিন্তু প্রতিবাদটা সবার। আমি বলব উৎসবে ফিরছি না আবার নিজের ছবির প্রমোশন করছি, নিজের ইভেন্টগুলো করছি- সেটাও একটা খারাপ বার্তা। ঢাকিদের ৬-৮ মাসের খরচ চলে পুজোর সময়ের উপার্জন দিয়ে। আমরা সরকার বিরোধী হতে পারি, তবে বাংলার মানুষের বিরোধী হতে পারব না, দুটো আলাদা জিনিস। আমি সরকারের বিরোধী হতেই পারি, আজ এই সরকার আছে কাল অন্য সরকার আসবে। কিন্তু একটা জাস্টিস পাওয়ার জন্য আমি বাংলার অন্য মানুষের সঙ্গে অবিচার করতে পারি না। কেউ তো চাকরি বন্ধ করে প্রতিবাদ করছে না। সবাই প্রতিদিন কাজে যাচ্ছে, যেটা তোমাদের কাছে বিনোদন, সেটা আমার কাছে আমার রুজিরোজগার’।
সবার স্বার্থের কথা মাথায় রেখেই ছবি মুক্তির সিদ্ধান্ত। দেব জানালেন, তাঁকে কোনও সরকার সুপারস্টার বানায়নি, বাংলার মানুষ বানিয়েছে। তিনি বলেন, ‘এই ১৭-১৮ বছর ধরে দেবকে দেব কোনও সরকার বানায়নি, বাংলার মানুষ বানিয়েছে। আমি ১০০টা হলে ছবিটা আমি রিলিজ করব, আমি ধরেনি সেই হলে ১০টা বা ২০টা লোক কাজ করে, কেউ পপকর্ন বিক্রি করে, কেউ বাথরুম পরিষ্কার করে। ওদের তো একট টিম আছে। আমি যদি এই ১০০টা হলে ছবি রিলিজ না করি, তাহলে ওরা কী করবে?’
প্রসঙ্গত, টেক্কার টিজারে দেবের দেখা মিলল কিডন্যাপার হিসাবে। পেশায় জমাদার দেব কেন স্কুল ছাত্রীকে অপরহরণ করল, সেই জট খুলবে পর্দায়। ছবিতে দেবের সঙ্গে প্রথমবার স্ক্রিন শেয়ার করছেন স্বস্তিকা। এছাড়াও পুলিশের চরিত্রে থাকছেন রুক্মিণী মৈত্র।