‘অগ্নিশপথ’ দিয়ে পথ চলা শুরু। তারপর ‘আই লাভ ইউ’, ‘প্রেমের কাহিনী’ থেকে ‘পাগলু’, ‘বুনো হাঁস’, ‘দুই পৃথিবী’, 'গোলন্দাজ', 'বাঘাযতীন' হয়ে আজ বাংলা ইন্ডাস্ট্রির 'বাপ' দেব। আজ তাঁর জন্মদিন। তবে অভিনেতার জন্মদিনের বেশ কিছুদিন আগে থেকেই বাংলা মেতেছে প্রিয় সুপারস্টারের ছবির উদযাপনে। বাংলা জুড়ে ‘খাদান’-এর জয়জয়কার। তিন বছরের অক্লান্ত পরিশ্রমের পর ‘খাদান’-এর এই সাফল্য তাঁর জন্মদিনকে যে আরও বিশেষ করে দিয়েছে তা তো বলাই বাহুল্য। কিন্তু জন্মদিন উপলক্ষ্যে আজ তাঁর আর কী কী বিশেষ পরিকল্পনা রয়েছে? এবার সে কথায় ভাগ করে নিলেন দেব।
এই সময়কে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে জন্মদিনে তাঁর বিশেষ কী পরিকল্পনা রয়েছে তা ভাগ করে নেন দেব। তিনি বলেন, ‘আজকের দিনটা একটা শান্তির দিন। আমি সেই সব মানুষকে ধন্যবাদ দিতে চাই যাঁরা পাশে ছিলেন। প্রযোজক, ছবির অভিনেতারা, টেকনিশিয়ান, দর্শকদের আজকের দিনটার জন্য ধন্যবাদ জানাতে চাই। আমি যখন এই খাদান শুরু করব ভেবেছিলাম, অনেকেই বিশ্বাস করেননি আমার স্বপ্নটাকে। কেউ কেউ ছবিটা ছেড়ে চলে গিয়েছেন। কিন্তু এঁরা আমার পাশে ছিলেন। আমার ইমোশনটা কোনও শব্দ দিয়ে ব্যাখ্যা করতে পারব না। এক-দু’জনই জানেন আমার মনের ভিতরে কী চলছে। তাই কোনও পার্টি, সেলিব্রেশন সেই অনুভূতিটাকে প্রকাশ করতে পারবে না। আমার পরিচালক, সঙ্গীত পরিচালক, নায়িকা নতুন। এমন অনেকে আছেন যাঁদের ইন্ডাস্ট্রি থেকে প্রায় মুছে ফেলা হয়েছিল। এ রকম অনেক লড়াই ছিল। তাই আজকের দিনটা আমি ধন্যবাদ জানাতে চাই ঈশ্বরকে, দর্শকদের, প্রিয়জন, বাবা-মা-কে।’
আরও পড়ুন: অপরাজিতা-সুদীপের অসমবয়সী প্রেম নিয়ে লীনার নতুন মেগা 'চিরসখা' কবে আসছে? জানালেন লেখিকা
কিন্তু আজকের এই বিশেষ দিনে তিনি কি কিছু বিশেষ চমক দিতে চলেছেন? তাঁর কোনও নতুন ছবির ঘোষণা কি হতে চলেছে? এই প্রসঙ্গে অভিনেতা জানান, ‘খাদান’ করতে গিয়ে তাঁকে অনেক চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হতে হয়েছিল। তাঁর কথায়, ‘এটা আমার জন্য ‘ডু অর ডাই’ সিচুয়েশন ছিল।’ তাই ছবির সাফল্যে তিনি যে তৃপ্তি পেয়েছেন সেই স্বাদই আজ তাড়িয়ে তাড়িয়ে উপভোগ করতে চান। আজ আর কোনও নতুন ছবির ঘোষণা নয়।
অভিনেতার মতে ‘খাদান’-এর সাফল্যই তাঁর এই বছরের জন্মদিনের উপহার। এই প্রসঙ্গে দেব বলেন, ‘মানুষ দেখেছেন আমি কতটা পরিশ্রম করেছি। গ্রামে-গ্রামে যাওয়া, আজকের দিনে এ রকম একটা ছবি প্রযোজনা করে রিলিজ করা, সবটাই তাঁরা দেখেছেন। আর তারপর যে ভালোবাসাটা দিয়েছেন সেটাই আমার কাছে একটা বিরাট প্রাপ্তি।'
পাশাপাশি দেব এও জানান, কয়েক দিন আগে রুক্মিনী মৈত্রর সঙ্গে একটি ছবির শ্যুটিংয়ে গিয়েছিলেন। সেখানে সব টেকনিশিয়ানরা এসে তাঁকে বলেন, ‘দাদা এ রকম একটা ছবির খুব দরকার ছিল। থ্যাঙ্ক ইউ এ রকম একটা ছবি বানানোর জন্য।’ দেবের কথায়, 'এটা ব্লেসিং, মানুষের আশীর্বাদ। কোথাও মনে হয় ‘কার্মা’ও রয়েছে। কোথাও হয়তো ভালো কাজ করেছিলাম। ঠাকুরের আশীর্বাদ পেয়েছি। মানুষের ভালো লেগেছে। এবং অবশ্যই ছবিটাও ভালো হয়েছে। তাই এত লড়াই, এত পরিশ্রমের পর এখন শান্তি হচ্ছে। হল পাব কি না, মানুষ কীভাবে নেবেন ছবিটা—সব কিছুর পর এখন ভীষণ একটা শান্তি হচ্ছে।’
দেব কথায়, ‘কেউ কখনও বাংলা ছবির জন্য মাল্টিপ্লেক্সে কয়েন ছুড়তে, নাচতে দেখেছেন? যেখানে সবাই বলেন বাংলা কমার্শিয়াল ছবির যুগ শেষ হয়ে গিয়েছে, সেখান থেকে এ ভাবে প্রতিদিন প্রায় এক কোটি টাকার ব্যবসা করা, নর্থ বেঙ্গল থেকে বর্ধমান, কলকাতা সব জায়গার শো হাউজফুল পাওয়া, এ এক দারুণ অনুভূতি।' ১২-১৪ দিনের শ্যুটিং করে ফ্যামিলি ড্রামায় আটকে না থেকে এবার অনেক অভিনেতাই ভালো মাস ছবি করার সাহস পাবেন বলে দেবের আশা।
আর দেব তিনি কী করবেন? এ বার থেকে কি বেশি কমার্শিয়াল, অ্যাকশন ছবিতেই তাঁর দেখা মিলবে? প্রশ্নে দেব-এর উত্তর, ‘একজন অভিনেতা হিসেবে আমি সব ধরনের ছবিই করতে চাই। আমার ‘খাদান’ করতে তিন বছর লেগেছে। এরপর যদি আমাকে মাস ফিল্ম করতে হয়, তা হলে ‘খাদান’-এর থেকে বেটার কিছু করতে হবে।' তাছাড়াও বেশ কিছু কাজের জন্য অভিনেতা আগে থেকেই প্রতিশ্রুতি বদ্ধ। তাই তাঁকে শুধু অ্যাকশন ড্রামাতেই দেখা যাবে এমনটা মোটেই নয়।
তবে ছবি মুক্তির আগে গোটা বাংলা জুড়ে ব্যপক প্রচার করেছিলেন দেব। সেই নিয়ে ইন্ডাস্ট্রি থেকেই অভিনেতার দিকে ধেয়ে এসেছিল নানা কটাক্ষ। রাজ চক্রবর্তীকে বলতে শোনা গিয়েছিল, কনটেন্ট ভালো হলে প্রচারের প্রয়োজন হয় না। তবে এই কটূক্তি অভিনেতাকে কতটা বিচলিত করেছিল? প্রশ্নে দেব সাফ বলেন, ‘আমি এখন এমন একজন মানুষ হয়ে গিয়েছি যে আমাকে খারাপ লাগাতে গেলেও ট্যালেন্টেড হতে হবে। আমি জানি আমি কী করছি। তাই এই সব কথায় একদম খারাপ লাগে না আমার।’