মুখ ভর্তি সাদা দাড়ি, মাথার কাঁচাপাকা চুলের মধ্যিখান দিয়ে উঁকি দিচ্ছে টাক, চোখে মোটা ফ্রেমের চশমার মধ্যে দিয়েও ধরা পড়ছে উদাসীনতা, জলপাই রঙা পঞ্জাবির ফাঁক দিয়ে দেখা যাচ্ছে ভিতরের গেঞ্জি- এ কোন প্রসেনজিৎ চট্টোপাধ্যায়? যার মধ্যে নায়কসুলভ কোনও ভাব নেই। এক বনেদী বাড়ির বারান্দায় একাকী দাঁড়িয়ে নিজের ভাবনাতেই ডুবে রয়েছেন তিনি, যেন নিজের মুখোমুখি হয়ে আত্ম-বিশ্লেষণে ব্যস্ত। শীঘ্রই টলিউডের এভারগ্রিন তারকাকে এহেন ভঙ্গিতে দেখতে পাবেন আপনি, সৌজন্যে পরিচালক অতনু ঘোষের নতুন ছবি ‘শেষ পাতা’। আসলে ছক ভাঙতে বরাবরাই ভালোবাসেন প্রসেনজিৎ চট্টোপাধ্যায়, এবারও তার ব্যতিক্রম হবে না।
গত বছর সেপ্টেম্বরে সামনে এসেছিল ‘শেষ পাতা’য় প্রসেনজিৎ-এর ফার্স্ট লুক, তারপর থেকেই তো হইহই রব। ‘ময়ূরাক্ষী’, ‘রবিবার’-এর পর অতনু ঘোষের এই ছবিতেও মুখ্য চরিত্রে অভিনয় করছেন প্রসেনজিৎ চট্টোপাধ্যায়। বুম্বাদার পাশাপাশি এই ছবিতে গুরুত্বপূর্ণ চরিত্রে অভিনয় করবেন, গার্গী রায় চৌধুরী, বিক্রম চট্টোপাধ্যায় এবং রায়তী ভট্টাচার্য।
এই জীবনে ঋণ ঠিক কত রকমের হয়? শুধু কি আর্থিক ঋণের বোঝাটুকুই থাকে মানুষের, নাকি জীবনপথে চলতে চলতে এর বাইরেও অন্য কোনও ঋণের বাঁধনে জড়িয়ে পড়ি আমরা! যে ঋণের বোঝা আর্থিক ঋণের চেয়ে বেশি ভারি, যে ঋণ একান্ত মানসিক, যে ঋণ শুধু গ্রহীতাকে নয়, দাতাকেও প্রভাবিত করে সামনভাবে- সেই জটিল মনস্তত্ত্বের গল্পই উঠে আসবে ‘ময়ূরাক্ষী’ পরিচালক অতনু ঘোষের নতুন ছবি ‘শেষ পাতা’য়। এই লুক প্রকাশ্যে আনবার পর পরিচালক জানিয়েছেন, 'ঋণ শব্দটি তুলে ধরতে গিয়ে আমার ঋণের বোঝা বেড়ে গেল'। কার জন্য বাড়ল এই ঋণ? সটান জবাব, 'বু্ম্বাদা, সোমনাথ, সৌমিকের কাছে। ছবি তৈরি করতে গিয়ে বুঝলাম, শব্দটিতে মাত্র দুটো অক্ষর থাকলে কী হবে? কী ভাবে, কত ভাবে ‘ঋণ’ শব্দটি সবার জীবনে আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে!'
ছবিতে প্রসেনজিতের লুক তৈরি করেছেন রূপটান শিল্পী সোমনাথ কুণ্ডু। যিনি এর আগে প্রসেনজিতে নেতাজির ভূমিকাতেও গড়ে তুলেছিলেন। সোমনাথের কাজ দেখে অবাক পরিচালক। তিনি বলেই ফেললেন, 'সোমনাথ বারবার চিত্রনাট্য পড়ে চরিত্রকে সাজান। তাঁর কাজের পরে আমার মনে হয়েছিল, এর থেকে ভাল সাজ আর হতেই পারে না'।
ছবিতে লেখক বাল্মিকীর চরিত্রে অভিনয় করছেন প্রসেনজিৎ চট্টোপাধ্যায়। এই চরিত্র নিয়ে কী বলছেন অভিনেতা? প্রসেনজিৎ আগেই জানিয়েছেন, ‘অতনুর স্টোরি টেলিং অন্য রকমের। এই গল্পে আমি বাল্মীকি নামে এক লেখকের চরিত্রে, যার এক সময়ে বেশ নামডাক ছিল। কিন্তু তার জীবনেও অনেক ঘটনা ঘটে যায়.. এর চেয়ে বেশি বলা যাবে না। কিন্তু এইটুকু যোগ করব এমন চরিত্রে আমি আগে কখনও অভিনয় করিনি’।
এই ছবির প্রযোজক ফিরদৌসুল হাসান। ক্যামেরার দায়িত্বভার সামলেছেন সৌমিক হালদার। ছবির পোস্ট প্রোডাকশনের কাজও শেষ। আপতত মুক্তির পরিকল্পনা চলছে।