বলিউডে যখন শার্লিন চোপড়া, সোনা মহাপাত্ররা সাজিদ খানের উপরে আঙুল ওঠাচ্ছে, তখন টলিউডও মি টু নিয়ে উত্তাল। অভিনেত্রী সুকন্যা দত্ত শুক্রবার ফেসবুকে পরিচালক বাপ্পার বিরুদ্ধে অভিযোগ আনেন হেনস্থার। ‘শহরের উপকথা’ খ্যাত এই পরিচালককে নিয়েই এখন যত আলোচনা-সমালোচনা। অবশ্য শনিবার রাতে নিজের স্বপক্ষে জবাবও দেন তিনি। ‘অল বেঙ্গল মেল ফোরাম’-এর শ্রীমতী নন্দিনী ভট্টাচার্যই তাঁকে এই পথ নিতে বলেন বলে জানিয়েছেন বাপ্পা।
ঠিক কী অভিযোগ তুলেছিলেন সুকন্যা?
ফেসবুক ম্যাসেঞ্জারে পরিচালকের সঙ্গে বর্তালাপের স্ক্রিনশট শেয়ার করে সুকন্যা লিখেছিলেন, ‘বিভিন্ন কথাবার্তায় এটাই বুঝতে পারি যে, ওঁর সঙ্গে কাজ করতে গেলে বোল্ড সিনের ওয়ার্কশপ করতে হবে। আমি বুঝতে পারছি না উনি ছবি বানাবেন নাকি পর্ন ফিল্ম! …রেপ করার পর রেপিস্ট ধরে কী লাভ! আমার চোখে উনি একজন রেপিস্ট। আমার অভিনয়ের খিদে দেখে আমায় ট্র্যাপ করতে চেয়েছিলেন। জানি এসব পোস্ট করে কিছু হবে না, উনি আরও করবেন। যে প্রোডাকশন হাউজ ওঁর সঙ্গে কাজ করছে তাঁদের ভাবা উচিত। কাউকে স্ক্রিপ্ট পড়ার নাম করে নোংরামি করা ক্রিমিনাল অপরাধ।’
বাপ্পার জবাব
পরিচালক সাফ জানান প্রথমে তিনি ভেবেছিলেন সাইলেন্স ইস দ্য বেস্ট পলিসি। কিন্তু পরে তিনি বোঝেন মুখ খুলতেই হবে। ‘অল বেঙ্গল মেল ফোরাম’-এর পরামর্শেই আত্মপক্ষ সমর্থনে তাঁর এই পোস্ট। লিখেছেন, ‘ওঁর লুক দেখে আমার মনে হয় উনি আমার পরবর্তী কাজের সাথে যুক্ত হতেই পারেন। কিন্তু তারপর উনি যখন প্রথম আমার সাথে দেখা করতে আসেন আমাদের রিহার্সালের রুমে সেখানে অন্তত ২২-২৫জন ছেলে-মেয়ের উপস্থিত ছিলেন। ওঁর সঙ্গে কথা হয়। সেদিন আমি ওঁকে স্পষ্ট করি আমি একজন স্ট্রাগলিং ডিরেক্টর, আমি একদম ইন্ডিপেন্ডেন্টলি কাজ করছি। কিন্তু উনি জানান তাতে কি আছে,আমি এস্টাব্লিশড অভিনেত্রী তাই আমার কোনও আর্থিক সমস্যা নেই। ওঁর নিজের একটি ক্যাফের কথাও বলেন সেখানে যেতেও বলেন। কিন্তু সেটি আমার বাড়ি থেকে অনেক দূর তাই সেখানে আমার পক্ষে যাওয়া সম্ভব নয়, আমি সেটা জানাই। সেদিনই আমি ওঁকে গল্পটা বলি। ওঁর পছন্দ হয়। হাতে কাজ থাকায় আমি দেখে যেতে পারি না ওঁর অভিনয় দক্ষতা কেমন।’ আরও পড়ুন: ‘বোল্ডসিনের ওয়ার্কশপ করলে…’, অভিনেত্রীকে কুপ্রস্তাবের অভিযোগ পরিচালকের বিরুদ্ধে
বাপ্পা জানিয়েছেন এরপর সুকন্যার সঙ্গে তাঁর দেখা হয় ৮ অক্টোবর একটি ক্যাফেতে, যার খোঁজ তাঁকে বিপরীত তরফ থেকেই দেওয়া হয়েছিল। সেদিন ক্যাশ সঙ্গে না থাকায় আর অনলাইনে টাকা পাঠাতে কিছু সমস্যা থাকায় তিনি সুকন্যাকে ম্যাসেজ করে বলেছিলেন টাকাটা দিয়ে দিতে। এরপর ওই ক্যাফের বাইরে দাঁড়িয়ে তাঁরা কথা বলেন। ক্যাব বুক করে সুকন্যাকে বাড়ি ফিরে যেতে বলেন তিনি। তারপর রাতে একবার শুধু খোঁজ নেন সুকন্যা ঠিক মতো বাড়ি পৌঁছতে পেরেছে কি না। এরপর দুজনের মধ্যে অভিনেত্রীর উচ্চারণগত সমস্যা নিয়েও কথা হয় বলে জানান বাপ্পা। তাঁর কথায়, ‘উনি সেই রাতেই আমাকে লেখেন উচ্চারণ নিয়ে...'ভাল নয় ভালো হবে তো' আমি সম্মতি জানাই। যেহেতু উনি বারবার 'ভাল' বলছিলেন কথার সময়, সেটা শুধরে দিই।। এরপর দিন ওঁর শ্যুট থাকায় আমি ওঁকে এর জন্য শুভেচ্ছা জানাই। উনি শ্যুটিং এ গিয়েও কথা বলেন। আমার কাছে ভোকাল ট্রেনিং শিখতে চান ও আমার সিনেমাটিও দেখতে চান।’
বাপ্পা এরপর জানান ১২ অক্টোবর রাত সাড়ে বারোটা নাগাদ তাঁকে সুকন্যা নিজের ছবি পাঠান। যা তিনি থাম্বস আপ দিয়ে ছেড়ে দেন। অনেকবার কলও করেন তাঁকে। বাপ্পার কথায়, ‘এরমধ্যে উনি আমাকে অনেকবার কল করেন আমি স্পষ্টই জানাই, আগামী ছবিতে তোমাকে নিয়ে কাজ করা সম্ভব নয়। তুমি অভিনয়টা শিখে নিলে তারপর অবশ্যই কাজ হবে। উনি লিড রোল করতে চান..তার বিনিময়ে ইনভেস্ট করবেন বলেন কিন্তু আমি কোনওভাবে সেই প্রস্তাবেও রাজি হই না। আমি কষ্ট করেই কাজ করছি তার নিদর্শন আপনাদের কাছে আছে।। এরপর মাঝে রইলো ১৩ তারিখ, কোনো কথা হয়নি ওইদিন। আর ১৪ তারিখে সকালে উনি এইরকম উক্তি লেখেন যা নিয়ে একটা আলোচনা শুরু হয়।’
এরপর নিজের বক্তব্য পয়েন্ট আকারে তুলে ধরেছেন বাপ্পা। তাঁর প্রথম যুক্তি ‘প্রথম মিটিং রিহার্সাল রুমে হওয়ার পর আমার ইনটেনশন খুবই স্পষ্ট হওয়া উচিত ছিলো ওঁর কাছে, উনি সেকেন্ড মিটিং টাই করতেন না।’ দ্বিতীয় যুক্তি, ‘এরপর আমি যদি ওঁকে ৮ অক্টোবর কু-প্রস্তাব দেই যদি তাহলে উনি সেইদিন বাড়ি ফিরে উচ্চারণ সংশোধনের কথা বলতে পারেন না বা আমি বাড়ি ফিরেছি কিনা সেটাও জানতে চাইবেন না। কারণ উনি মানসিকভাবে ডিপ্রেসড থাকবেন। সেটাই স্বাভাবিক।’
‘শহরের উপকথা’ পরিচালক এরপর বলেন, ‘তারপরও ১২ অক্টোবর অবধি উনি আমার সঙ্গে কথা বলেছেন, ছবি পাঠিয়েছেন ও কাজ করতে চেয়েছেন। এরমধ্যে বহুবার ফোন করেছেন, কল লিস্ট চেক করলেই পাওয়া যাবে। আর আমি ওঁকে কখনই হোয়াটসঅ্যাপ বা মেসেঞ্জারে কল করিনি, যদি করে থাকি উনি তার স্ক্রিনশট দিতেই পারেন।’
বাপ্পা সবার কাছে আবেদন করেছেন দু তরফের কথা শুনেই যাতে সকলে কোনও সিদ্ধান্তে আসে। সঙ্গে সোশ্যাল পোস্টে জানিয়েছেন সুকন্যার নামে অভিযোগ এনে থানায়ও গিয়েছেন তিনি। এখন দেখার পালটা কোনও জবাব অভিনেত্রীর তরফে আসে কি না!