৭১-এর মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি বিজড়িত ৩২ নম্বর ধানমন্ডির সেই বাড়ি, যেটি বঙ্গবন্ধু মুজিবুর রহমানের বাড়ি হলেও পরবর্তীকালে সেটা সংগ্রহশালা হয়ে ওঠে। পাঁচ দশক আগে বাংলাদেশে রক্তাক্ত পালাবদলের সময় সেই বাড়ির সিঁড়িতেই গুলিতে ঝাঁঝরা হয়ে গিয়েছিলেন বঙ্গবন্ধু। সোমবার শেখ হাসিনার সরকারের পতনের পর তাঁর সেই বাড়িতে ভাঙচুর করে আগুন ধরিয়ে দেয় বাংলাদেশের কিছু উন্মত্ত জনতা।
১৯৭৫ সালের ১৫ অগস্ট ৩২ নম্বর ধানমন্ডির বাড়িতে অভ্যুত্থানকারী সেনাদের গুলিতে নৃংশস ভাবে খুন হয়েছিলেন বঙ্গবন্ধু। বাড়িতে বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে তাঁর স্ত্রী ফজিলাতুন্নেসা, তিন ছেলে, দুই পুত্রবধূও নিহত হয়েছিলেন ঘাতকের বুলেটে। বিদেশে থাকায় তখন বেঁচে গিয়েছিলেন মুজিবের দুই কন্যা, হাসিনা ও রেহানা। আর আজ এতবছর পর ২০২৪-এর অগস্টেই বঙ্গবন্ধুর বাড়িতে আগুন জ্বালিয়েছে বাংলাদেশীরা।
তবে এই সবই এখন স্মৃতি। বাংলাদেশের পরিস্থিতি এখন নতুন করে উত্তাল। হাসিনার পদত্যাগের পর নতুন স্বাধীনতার আনন্দে উন্মত্ত সেদেশের বহু মানুষ। তবে আবার সেদেশের শিল্পীমহল থেকে শুরু করে বহু মানুষ বঙ্গবন্ধু মূর্তি ভাঙা, বাড়িতে আগুন লাগানোর ঘটনায় ক্ষুব্ধ। তাঁরা এই ঘটনার তীব্র নিন্দাও করেছেন। দেশবাসীকে শান্ত হওয়ার আহ্বানও জানিয়েছেন। এদিকে এই মুহূর্তে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠনের পথে হাঁটছে বাংলাদেশ। ছাত্রদের প্রস্তাবে নোবলজয়ী অর্থনীতবিদ ডঃ মহম্মদ ইউনুসের নেতৃত্বে গঠিত হতে চলেছে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার। আর এই সরকার গঠনের পর বঙ্গবন্ধুর বাড়ি পুনর্বাসনের কাজ শুরু করার কথা বললেন বাংলাদেশের খ্যাতনামা পরিচালক মোস্তফা সরয়ার ফারুকী। এবিষয়ে নিজের মতামত জানিয়ে ফেসবুকের পাতায় পোস্টও করেছেন তিনি।
ফারুকী লিখেছেন, ‘আমি মনে করি, অন্তর্বর্তীকালীন সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর প্রথম কাজ হবে ৩২ নম্বরের বাড়ির পুনর্বাসনের কাজ শুরু করা। এই বাড়িকে আগের চেহারায় ফিরিয়ে নিয়ে আসা এবং এ বাড়ি সম্পর্কিত বিভিন্ন ছবি, স্মৃতিস্মারক যা যা পাওয়া যায় তা দিয়ে যাদুঘর আবার চালু করা। এবং অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান প্রফেসর ইউনুসের উচিত হবে নিজেই বাড়িটা ভিজিট করা। তিনি এই বাড়ি ভিজিট করলে একটা সিগনিফিকেন্স তৈরি হবে, একটা বার্তা দেবে। এ ছাড়া দেশের বিভিন্ন জায়গায় বীরশ্রেষ্ঠদের ভাস্কর্য ভাঙচুর করা হয়েছে। এগুলো সব ঠিকঠাক করে আগের অবস্থায় ফিরিয়ে আনতে হবে। বাংলাদেশের মন্দির থাকবে, মসজিদ থাকবে, প্যাগোডা থাকবে, গির্জা থাকবে, বোরকা থাকবে, জিনস থাকবে। সবকিছুই থাকবে বহুজনের এই সমাজে।’
এদিকে পরিচালক মোস্তফা সরয়ার ফারুকীর এই প্রস্তাবে সায় দিয়েছেন বাংলাদেশের বহু মানুষ।
প্রসঙ্গত এর আগে অভিনেত্রী রাফিয়াত রশিদ মিথিলাকে ও ভেঙে যাওয়া ভাস্কর্য পুননির্মাণ বা মেরামতের জন্য ভাস্কর ও শিল্পীদের কাছে আবেদন করেছিলেন, যাতে তাঁরা বিনাপারিশ্রমিকে নিজেদের শিল্প সত্তার দায়ে কাজ করতে এগিয়ে আসেন, সেই আবেদন করেছিলেন।