অডিয়ো-ষড়যন্ত্রের অভিযোগে দলের বামেদের যুবনেতা কলতান দাশগুপ্ত গ্রেফতার হয়েছেন বিধাননগর পুলিশের হাতে। তাঁর নামে কুণাল ঘোষ প্রথম অভিযোগ আনেন, স্বাস্থ্য ভবনের কাছে জুনিয়র চিকিৎসকদের ধর্নায় হামলা চালানোর ষড়যন্ত্র হয়েছিল বামেদের তরফে। সেই দলে রয়েছেন কলতান। গত শনিবার আদালত তাঁদের সাতদিন পুলিশ হেফাজতে রাখার নির্দেশ দিয়েছেন। এই ঘটনার প্রতিবাদে পথে নেমেছে বামেরা। মীনাক্ষী-দীপ্সিতারা এই ঘটনাকে ‘ষড়যন্ত্র’ বলেই ব্যাখা করেছেন।
কলকাতনের গ্রেফতারির নিয়ে এবার মানবিক আবেদন রাখলেন পরিচালক পারমিতা মুন্সী। গত কয়েকদিন ধরে জুনিয়র ডাক্তারদের ধরনা মঞ্চে নিময়িত দেখা যাচ্ছে ‘গুহামানব’ পরিচালককে। ডাক্তারদের খাবার পৌঁছে দিচ্ছেন নিজের হাতে। কিন্তু কলতানের গ্রেফতারির ঘটনায় বিচলিত তিনি।
কলতান দাশগুপ্ত'র অবিলম্বে নিঃশর্ত মুক্তির দাবি করে ফেসবুক পোস্টে পারোমিতা মুন্সী লেখেন, ‘শুনেছি, ওনার মায়ের স্টেজ ফোর্থ ক্যান্সার। স্ত্রী সন্তানসম্ভবা। সিমপ্যাথাইজার হচ্ছি না মোটেও। সেই স্পর্ধা নেই আমার। কলতানের লড়াকু জেদের শরিক হচ্ছি। ওনার পার্টি আদর্শের সঙ্গে আমার মেলেনা। কিন্তু এক্ষেত্রে লড়াইটা একটাই। এখানে সবাই এক।’
পারোমিতা মনে করান, ৯ই অগস্টের রাতে আরজি কর হাসপাতালে পুলিশের সামনে বুক চিতিয়ে দাঁড়িয়ে নির্যাতিতা তরুণীর দেহ আটকানোর চেষ্টা করা মানুষগুলোর দলে কলতানও ছিল। তিনি লেখেন, ‘কার সাথে আছি বড় কথা নয়/কার বিরুদ্ধে আছি/শত্রুর শত্রুকে চেয়েছি /সংগ্রামে পাশাপাশি… সেদিন তিলোত্তমা-র শববাহী গাড়ি যারা আটকেছিলেন, তাদের মধ্যে কলতান দাশগুপ্ত একজন। জানা কথা আরেকবার জানালাম।’
অনেকেই পারোমিতার এই বক্তব্যের সমর্থন জানান, আবার অনেকে বিরোধিতাও করেন। জুনিয়র ডাক্তারদের অবস্থানে হামলার ছক কষা হয়েছিল। সেই দলে রয়েছেন কলতান, এমনই অভিযোগ। সূত্রের খবর, ভাইরাল ক্লিপের এক সংলাপকারী পুলিশের সামনে সবটা স্বীকার করে নিয়েছেন। সেই প্রসঙ্গ টেনে এক নেটিজেন পারোমিতার উদ্দেশে লেখেন, ‘ডাক্তারদের উপর হামলার যে প্ল্যানিং শোনা যাচ্ছে সেটা যদি ঠিক হয় তবে কি সেটা সমর্থনযোগ্য। পুলিশ জানিয়েছে একজন স্বীকার করে নিয়েছে। যাইহোক এটা যদি ফাঁসানো হয় তবে পুলিশের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হোক আর যদি সত্যি হয় তবে কলতানের বিরুদ্ধেও কঠোর আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হোক।’
জবাবে পরিচালক লেখেন, ‘সময় আগুন হয়ে আছে দাদা। আপনি কে আমি জানিনা। তবে এইসব ‘যদি’ নির্ভর কথাগুলো একটু ভেবে বললেই ভালো।’
২০১৯ সালে শুভেচ্ছা মিত্রর সঙ্গে গাঁটছড়া বেঁধেছিলেন কলতান। অন্তঃসত্ত্বা অবস্থাতেও স্বামীর জন্য দৌড়াদৌড়ি করছেন শুভেচ্ছা। বাম নেত্রী দীপ্সিতা জানিয়েছেন, ‘কলতান দার স্ত্রী, সন্তানসম্ভবা, গত পরশু ওর সাথে দেখা, নিজের এবং আসন্ন প্রাণের যত্ন রাখছে ও, যত্ন রাখছে কাকিমারও। মেয়েটির চোখে ভয় নেই, একটু চিন্তা, এতদিন কোনো কথাবার্তা ছাড়া থাকেনি। ঐটুকুই। কি অসীম সাহস, কি অসীম জেদ ভাবুন তো?’
ওয়াইএফআই কলকাতা জেলা সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য কলতান, দলের সারাক্ষণের কর্মী। সিপিএম নেতা সুজন চক্রবর্তী দাবি করেছেন, আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স ব্যবহার করে গভীর ষড়যন্ত্র করা হয়েছে। তবে কলতান চুপই থেকেছেন। এই মামলায় কলতানের পাশাপাশি গ্রেফতার হয়েছেন সঞ্জীব দাসও। গোটা ঘটনাকে রাজনৈতিক প্রতিহিংসা হিসাবেই দেখছে বামেরা।