পরিচালক জুটি শিবপ্রসাদ মুখোপাধ্যায় ও নন্দিতা রায়ের ছবি বহুরূপী সর্বকালের তৃতীয় সর্বোচ্চ আয়কারী বাংলা ছবি হয়ে উঠেছে। চলতি বছর দুর্গাপুজোর সময় প্রেক্ষাগৃহে মুক্তি পেয়েছিল এই ছবি। কিন্তু দু'মাস পর ডিসেম্বরেও দর্শকরা হল ভরিয়ে ছবি দেখেছেন। সেই পোস্টও কিছু দিন আগে সমাজমাধ্যমের পাতায় ভাগ করে নিয়েছিলেন শিবপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়। ছবির এই বিরাট সাফল্য নিয়ে তিনি এক সাক্ষাৎকারে নানা কথা ভাগ করে নিয়েছেন।
২০ ডিসেম্বর ৭৫ দিন পূর্ণ হল বহুরূপী' -এর। এটি এই বছরের সর্বাধিক উপার্জনকারী বাংলা ছবি। সবটা মিলিয়ে শিবপ্রসাদের অনুভূতিটা ঠিক কীরকম? হিন্দুস্তান টাইমসকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে পরিচালক-অভিনেতা বলেন, ‘আমি সত্যিই ঈশ্বরের কাছে কৃতজ্ঞ। আমি সেই ভাগ্যবান ব্যক্তিদের মধ্যে একজন যে এই ছবির অংশ হতে পেরে নিজেকে ধন্য মনে করছি। আমরা সত্যিই আশা করিনি যে ছবিটা এতদূর যাবে এবং আমরা এত ভালোবাসা পাব। সামনেই ২৫ ডিসেম্বর হবে, মনে হচ্ছে সান্তা ক্লজ আমাদের প্রচুর পরিমাণে উপহার দেওয়ার জন্যই এখানে আসছেন।’
বহুরূপীর সাফল্য নিয়ে জাতীয় স্তরেও নানা আলোচনা হয়েছে। এর থেকে ভবিষ্যতে বাংলা ছবি ঠিক কতটা লাভবান হবে? এই প্রসঙ্গে পরিচালক জানান, এটা অনেক বড় বিষয় বাংলা ছবির জন্য। তাঁর কথায়, ‘ছবিটি জাতীয়স্তরে স্বীকৃতি অর্জন করেছে। তাই হয়তো অনেকেই ছবিটি দেখেছেন। তাছাড়াও বহু দর্শক এই ছবি নিয়ে তাঁদের চিন্তাভাবনা আমাদের সঙ্গে ভাগ করে নিয়েছে। যা আমাদের ভবিষ্যতে আরও ভালো কাজ করার জন্য উদ্বুদ্ধ করবে।’
কিন্তু তাও কোথাও গিয়ে এখনও বাংলা ছবি সেই জায়গা অর্জন করতে পারছে না। বর্তমানে অন্য ভাষার ছবির জন্য বাংলা ছবির হল পেতে সমস্যা হয় রাজ্যেই। বাংলাতেও এখন 'পুষ্পারাজ'। তার সামনে ঝুকতে হচ্ছে বহু বাংলা ছবিকেই। সেই একই ভাবে বাংলা ছবিও কি কোনও দিন জাতীয় স্তরে বক্সঅফিসে ঝড় তুলতে পারবে? এই প্রসঙ্গে শিবপ্রসাদের মত, 'আমার মা সকালে ঘুম থেকে উঠে বহুরূপীর গান শোনেন এবং আবার রাতেও তা শুনে ঘুমাতে যান। আমার কাছে এটাই সবচেয়ে বড় জবাব। আসলে আমাদের নিজেদের গল্প বলতে হবে, যা আমাদের। অন্য কারও গল্প নয়। আমাদের দেশে, আমাদের ভাষায় অনেক গল্প আছে। এমন অনেক গল্প আছে যা এখনও অব্যক্ত রয়ে গেছে। আমাদের সাহিত্য এত সমৃদ্ধ, এত বৈচিত্র্যময়। আমরা সেখান থেকেও গল্প নেওয়ার চেষ্টা করতে পারি। আমাদের গ্রুপ থিয়েটারের জন্য এত বড় জায়গা আছে। সেটাও কিন্তু শক্তিশালী ও পুষ্ট। সেই জায়গাটা নিয়ে অভিনেতাদেরও ভাবতে হবে। আমাদের ইন্ডাস্ট্রিতে যারা কাজ করছেন, যারা প্রতিষ্ঠিত, তাঁদেরকেও নিজেদের নতুন ভাবে উপস্থাপন করতে হবে।'
পরিচালক আরও বলেন, ‘আমাদের নিজস্ব গান আছে, যা আমাদের মাটির। এই গানগুলো নিয়ে কাজ করতে হবে। আরেকটি বড় বিষয় যা প্রত্যেক বাঙালির মনে রাখা উচিত তা হল, তাঁদের অবশ্যই নিজের ভাষাকে শ্রেষ্ঠ ভাষা হিসেবে মনে করতে হবে। আমাদের মধ্যে যে ভালো লুকিয়ে আছে তা ছড়িয়ে দেওয়ার চেষ্টা করতে হবে। এই উদযাপন ও অর্জনের বোধের দিকে আমাদের এগিয়ে যেতে হবে।’
শিবপ্রসাদের কথায়, মালায়ালি দর্শকরা যেভাবে উৎসবের মতো মালায়ালি ছবির মুক্তি উদযাপন করেন, তা দেখে বাঙালীদের শেখা উচিত। তেমন উদযাপন বাংলা ছবিতেও প্রয়োজন। ভাষার ক্রমবর্ধমান বিকাশ- যা এত বিশাল, এত অঞ্চল এবং বিশ্বজুড়ে ছড়িয়ে পড়েছে, সেটাকে সঠিক পদ্ধতিতে এগিয়ে নিয়ে যেতে হবে। বাংলা সাহিত্য ও বাঙালি শিল্পীদের গল্প কীভাবে ভালোভাবে বলা যায় সেটাও ভেবে দেখতে হবে।
পাশাপাশি তিনি তাঁদের পরিকল্পনা নিয়েও নানা কথা ভাগ করে নেন। তিনি তাঁদের পরবর্তী ছবি ‘আমার বস’ নিয়েও কথা বলেন। ‘আমার বস’ আগামী বছর মুক্তি পেতে চলেছে। ছবি নিয়ে শিবপ্রসাদ বলেন, 'আমার বস' -এ আমরা রাখি গুলজারের সঙ্গে কাজ করেছি। ছবিটি ৫৫তম আইএফএফআই-এ মর্যাদাপূর্ণ আইসিএফটি-ইউনেস্কো গান্ধী পদকের প্রতিযোগিতায় অন্তর্ভুক্ত হয়েছে। আমরা ছবিটা নিয়ে অত্যন্ত গর্বিত। এই বছরের একমাত্র বাংলা ছবি ‘আমার বস’ যা এই কৃতিত্ব অর্জন করেছে।'