'টেকনিশিয়ানরা কাজ বন্ধ করেননি। মুষ্টিমেয় পরিচালক শুটিং বন্ধ করে একভাবে মুখমন্ত্রীকে অবমাননা করেছেন। কারণ উনি শুটিং বন্ধ না করার নির্দেশ দিয়েছেন’। টলিপাড়ায় অচলাবস্থার পরিস্থিতিতে সোমবারের বৈঠকের পর এমনটাই জানাল ফেডারেশন।
রাহুল মুখোপাধ্যায়ের উপর নিষেধাজ্ঞা জারি নিয়ে ফেডারেশনের সঙ্গে মতানৈক্যে জড়িয়ে পড়ে ডিরেক্টরস গিল্ড। গত শুক্রবার SVF-এর পুজোর ছবির শ্যুটিং শুরু হলে সেখানে যথারীতি উপস্থিত ছিলেন পরিচালক রাহুল মুখোপাধ্যায়। আর রাহুল সেটে পৌঁছতেই কাজ বন্ধ করে দেন টেকনিশিয়ানরা। আর তাতেই গণ্ডোগোল বাঁধে। পরিচালকদের তরফে জানিয়ে দেওয়া হয় এভাবে চললে, তাঁরাও সোমবার থেকে কর্মবিরতিতে যাবেন। যেমন বলা তেমন কাজ। সোমবার সপ্তাহের প্রথমদিনই ছিল স্টুটিওপাড়া শুনশান। তবে শেষপর্যন্ত এদিন প্রসেনজিৎ চট্টোপাধ্যায়ের বাড়িতে জড়ো হয়ে বৈঠক করেন পরিচালকরা। সেই বৈঠকে সকলে একমত হয়ে তাঁরা টেকনিশানদের সঙ্গে ঝামেলা মিটিয়ে দেওয়ার বার্তা দেন, হাত মেলানোর কথাই বলেন। তাঁদের বিশ্বাস সিনে ইন্ডাস্ট্রি আসলে একটা পরিবার।
আর এরপর অপেক্ষা ছিল টেকনিশিয়ানদের বৈঠকের। সকলেই অপেক্ষা করছিলেন, পরিচালকদের হাত মেলানোর বার্তার পর তাঁদের তরফে কী বার্তা আসে? অবশেষে বার্তা এল। পূর্ব নির্ধারিত সূচি মেনেই সোমবার বিকেল ৪টেই টেকনিশিয়ান গিল্ডের বৈঠক হয়। সেই বৈঠক শেষে ফেডারেশনের তরফে বিবৃতিতে বলা হয়, 'একজন পরিচালক বলেছেন তিনি ইঞ্জিনিয়ার। তবে সিমেন্ট না মেখে দিলে তিনি ইমারত তৈরি করতে পারবেন না।’ ফেডারেশনের কথায়, ‘মুষ্টিমেয় পরিচালক শুটিং বন্ধ করে একভাবে মুখমন্ত্রীকে অবমাননা করেছেন। কারণ উনি শুটিং বন্ধ না করার নির্দেশ দিয়েছেন’।
ফেডারেশনের সভাপতি স্বরূপ বিশ্বাস সাফ জানান, ‘কর্মবিরতি ডেকে পরিচালকরা প্রথাভঙ্গ করেছেন। এরপর যদি আমরা পাল্টা এমন পদক্ষেপ নিই তাহলে দোষারোপ করবেন না।’ অর্থাৎ ফেডারেশনের তরফে শ্যুটিং বন্ধের দায় চাপানো হল পরিচালকদের উপরই। স্বরূপ বিশ্বাসের কথায়, ‘পুরো বিষয়টাই পূর্ব পরিকল্পত, তবে আমরা আলোচনায় বসতে রাজি।’ তাঁর কথায়, ‘সিনেমা পর্যন্ত ঠিক ছিল, তবে সিরিয়ালের শ্যুটিং বন্ধ করে যে বিপুর পরিমান টাকার ক্ষতি হল, সেটা প্রযোজকরা জানান।’
ফেডারেশনের দাবি, ‘রবিবার গোটা রাত, এমনকি সোমবার বেলা পর্যন্তও কোথাও কোথাও শ্যুটিং হয়েছে। কলাকুশলীরা কিন্তু কাজ বন্ধ করেননি। আমরা দিন আনি দিন খাই। একদিন শ্যুটিং বন্ধ থাকলে আমাদেরই ক্ষতি। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় যেখানে আলোচনার পথ খোলা রাখতে বলেছিলেন, সেখানে কিছু পরিচালক কাজ বন্ধের নোটিস দিয়ে শ্যুটিং বন্ধ করে দিলেন। যার জেরে আমরা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছি। যে পরিচালক রাহুল মুখোপাধ্যায়ের জন্য তাঁরা একজোট হয়েছেন, সেই পরিচালকের ছবি ‘লহু’ ইম্পাতে রেজিস্টার্ড করানো ছিল না। নিয়মবিরুদ্ধ কাজে টেকনিশিয়ানরা সায় দেয় না। যেহেতু ইম্পার সঙ্গে ফেডারেশনের একটা মউ চুক্তি রয়েছে। সেটা উভয়পক্ষকেই মেনে চলতে হয়।’
এদিকে ফেডারেশনের বিস্ফোরক অভিযোগ, ‘৫ মে যখন রাহুল মুখোপাধ্যায়কে ডিরেক্টরস গিল্ডের সম্মতি নিয়ে বরখাস্ত করা হল, তখন কেন আপত্তি তোলা হল না? তাহলে তো সেটা আমাদের সঙ্গেও দ্বিচারিতা হল। পরিচালকদের এত অহংকার কীসের?’ এদিকে প্রসেনজিৎ চট্টোপাধ্যায়ের বাড়িতে বৈঠকের পর পরিচালক, প্রযোজকরা যখন রাজ্যসরকারের হস্তক্ষেপ চেয়েছেন, সে বিষয়ে স্বরূপ বিশ্বাস বলেন, ‘প্রশাসনিক কাজে ব্যস্ত ব্যক্তিদের, এত ছোট বিষয়ে কেন জড়ানো হচ্ছে? এটা তো দু'পক্ষের আলোচনাতেই মেটানো যায়।’
এদিকে এদিনই রাত ৮টায় পরিচালকরা ফেডারেশনের সঙ্গে বৈঠকে বসবেন বলে জানিয়েছিলেন, তবে ফেডারেশনের তরফে জানানো হয়, সাংবাদিক সম্মেলন শেষ হওয়া পর্যন্ত তাঁদের কাছে মিটিং নিয়ে কোনও তথ্য আসেননি। এখন দু'পক্ষের মধ্যস্থতায় জটিলতা কাটে কিনা সেটাই দেখার…