সাংবাদিকতার জগতে নক্ষত্রপতন। প্রয়াত আশির দশকে সারা ভারতে ঝড় তোলা দূরদর্শনের সংবাদ পাঠিকা গীতাঞ্জলি আইয়ার। বুধবার না-ফেরার দেশে পাড়ি দিলেন গীতাঞ্জলি দেবী। দূরদর্শনের শুরুর দিকে ইংরাজি ভাষায় সংবাদপাঠ করতেন হাতে গোনা যে ক'জন ব্যক্তিত্ব, তাঁদের অন্যতম গীতাঞ্জলি আইয়ার। তাঁর কণ্ঠ এবং সঞ্চালনা যতটা জনপ্রিয় হয়েছিল দূরদর্শনের পর্দায়, ততটাই আলোচনায় উঠে এসেছিল গীতাঞ্জলি দেবীর স্টাইল স্টেটমেন্ট। ছোট করে ছাঁটা চুল, শাড়ি আর মুক্তোর ছিমছাম গয়নায় অনন্যা গীতাঞ্জলি দেবী।
১৯৫৯ সালে ভারতে প্রথম পথ চলা শুরু করে দিল্লি দূরদর্শন। ১২ বছর পর, ১৯৭১ সালে দূরদর্শনে যোগ দিয়েছিলেন গীতাঞ্জলি আইয়ার। এরপর একটানা ৩০ বছর ধরে সংবাদ উপস্থাপন করেছেন তিনি। চারবার সেরা সংবাদ পাঠিকার পুরস্কার পেয়েছিলেন তিনি। সত্তরের দশকে কাজ শুরু করলেও দূরদর্শনের পর্দা রঙিন হওয়ার পর গীতাঞ্জলি আইয়ারের জনপ্রিয়তা পৌঁছেছিল চরমে।
২০০২ সালে ‘আউটলুক ইন্ডিয়া’কে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে সেকথা জানান গীতাঞ্জলি দেবী। তাঁর কথায়, ১৯৮২ সালে এশিয়ান গেমসের পর সাদা-কালো পর্দা বদলে যায় দূরদর্শনের। এরপর রাস্তাঘাটে লোকজন আরও বেশি করে চিনতে শুরু করে তাঁকে। স্কুলছাত্ররা তাঁর পিছু ধাওয়া করত, অটো-রিক্সা ড্রাইভাররা ভাড়া নিতে অস্বীকার করত প্রিয় সংবাদ পাঠিকার কাছ থেকে, জানান গীতাঞ্জলি আইয়ার। আশির দশকে একাধিক বিজ্ঞাপনী প্রচারের মুখও ছিলেন প্রয়াত সংবাদ পাঠিকা। এই বিপুল জনপ্রিয়তার সুবাদেই অভিনয়ের অফারও পেয়েছিলেন ভুরিভুরি। দূরদর্শনে সম্প্রচারিত টিভি সিরিজ ‘খানদান’-এ অভিনয় করেছিলেন তিনি। পরবর্তীতে ‘ওয়ার্ল্ড ওয়াইল্ড লাইফ ফান্ড’-এর সঙ্গে যুক্ত হন গীতাঞ্জলি আইয়ার।
১৯৮৯ সালে ইন্দিরা গান্ধী প্রিয়দর্শনী পুরস্কারে সম্মানিত হয়েছেন গীতাঞ্জলি আইয়ার। কলকাতার লরেটো কলেজ থেকে ইংরাজিতে স্নাতক ডিগ্রি লাভ করেছিলেন গীতাঞ্জলি আইয়ার, পরবর্তীতে ন্যাশন্যাল স্কুল অফ ড্রামা থেকেও সাফল্যের সঙ্গে উত্তীর্ণ হন। তাঁর মৃত্যুতে সাংবাদিকতার জগতে শোকের ছায়া। নেটমাধ্যমেও শোকপ্রকাশ করেছেন তাঁর গুণমুগ্ধরা।