পুজো মানে ক্যাপ বন্দুক সঙ্গে জীবন থেকে হারিয়ে যাওয়া কিছু মানুষের স্মৃতি। তবে সব কিছুর মধ্যেও পুজোয় গান গেয়ে মানুষকে আনন্দ দেওয়াটা তাঁর পেশা। তাই সেই তাগিদেই পুজোয় বেরিয়ে পড়েন গায়ক। নানা ইভেন্টের মধ্যে প্রচন্ড ব্যস্ততায় পুজোর কটা দিন কাটে অর্কদীপের। কিন্তু এ বছরটা কীভাবে কাটাবেন বলে পরিকল্পনা করেছেন গায়ক? হিন্দুস্তান টাইমস বাংলার সঙ্গে সে কথাই ভাগ করে নিলেন অর্কদীপ মিশ্র।
কেমন আছেন?
অর্কদীপ: পুজোয় ব্যস্ততা তো থাকেই, বেশ চাপ যাচ্ছে। তবে সবটা নিয়ে চলে যাচ্ছে একপ্রকার।
পুজোর কেনাকাটা নিশ্চয়ই শেষ?
অর্কদীপ: না সেভাবে এবারে পুজোর কিছু কেনাকাটা হয়নি। কারণ এবার আমি নিজের ফ্ল্যাট কিনেছি। একা হাতে তাকে সাজাতে সাজাতে নিজের জন্য আর আলাদা করে কিছু কেনা হয়নি। ওই অনলাইন থেকে টুকটাক কিছু কিনেছি। আসলে ছোটবেলার মতো এখন তো সবটা হয় না।
ছোটবেলায় তার মানে প্রচুর জামা হত?
অর্কদীপ: তা হত, বয়স যত কম থাকে জামা দেওয়ার মানুষের সংখ্যা তত বেশি থাকে, ওটাই ছোটবেলার মজা। সবার জামা দেওয়া হলে গেলে গুনতাম, তারপর একটা লিস্ট বানাতাম কবে কোনটা পরব। তারপর আর কী এক এক দিন এক একটা জামা পরে প্যান্ডেলে ক্যাপ বন্দুক নিয়ে ছুটে বেড়াতাম।
ঠাকুর দেখা নিশ্চয়ই হত প্রচুর?
অর্কদীপ: আমি ঠাকুর দেখতে খুবই পছন্দ করতাম। একদম ছোটবেলায় তো মা-বাবা সেভাবে ছাড়তেন না। তাই পাড়ার মন্ডপের বন্ধুদের সঙ্গেই কাটত। তারপর হাফপ্যান্ট থেকে যখন ফুল প্যান্টে এলাম ওই মাধ্যমিকের পর, তখন থেকে বন্ধুদের সঙ্গে বেরোনো ছাড় পেতাম। তবে আমার বন্ধুরা কিন্তু সব আমার বয়সী নয়। যেমন আমার শিক্ষকরা থাকতেন। সবার সঙ্গে মজা করে ঠাকুর দেখতাম।
আর বাবা-মায়ের সঙ্গে?
অর্কদীপ: শুধুমাত্র আমি বাবা-মা বেরতাম এমনটা কখনও হয়নি খুব একটা। কারণ আমার বাবার একটা থিয়েটারের দল রয়েছে। তাই আমি ছাড়াও সেখানে বাবার অনেক ছেলে-মেয়ে আছেন। তাঁরাও সবাই আসতেন। আমার কাকা-কাকিমা সবাই মিলে ঠাকুর দেখতে বের হতাম।
বাবার থিয়েটারের দল, তারমানে পুজোয় তো নিশ্চয়ই শো থাকত? বাবাকে সেই সময় মিস করতেন?
অর্কদীপ: না, পুজোয় অনেক ছোট থেকেই আমি গান করি। আর আমার সঙ্গে যাঁরা বাদ্যযন্ত্রে সঙ্গত করতেন, তাঁদের মধ্যে বাবাও থাকতেন। শো করার সময় বাবাকে পাশে পেতাম। তাছাড়াও মা থাকতেন অনুষ্ঠানে। ফলে কখনও এটা নিয়ে খারাপ লাগা আসেনি। বরং আমার নিজের গানের অনুষ্ঠান থাকত বলে মন খারাপ হত।
কেন?
অর্কদীপ: (একটু হেসে তিনি বলেন) তখন পুজোয় অনুষ্ঠান আছে শুনলেই মন খারাপ হত। কারণ পাড়ার সব বন্ধুরা প্যান্ডেলে খেলছে আর আমি অনুষ্ঠানে গান করছি। কেমন লাগে বলুন তো।
পাড়ার বন্ধুদের সঙ্গে দেখা হয় পুজোয়?
অর্কদীপ: আসলে আমার পড়ার বন্ধুদের মধ্যে এখন আর অনেকেই এই পৃথিবীতে নেই। নানা দুর্ঘটনায় তাঁদের হারিয়েছি। পুজোর সময়টা এলে ওঁদের কথা খুব মনে পড়ে। আসলে একসঙ্গে বড় হওয়া তো। আর তাছাড়া গত ১০-১২ বছর আমি পুজোর সময় কলকাতায় থাকি না। বাইরে অনুষ্ঠান করতে চলে যাই।
এবছরও কলকাতায় থাকবে না তাহলে?
অর্কদীপ: এ বছরও কলকাতায় থাকা হবে না। তবে রাজ্যের বাইরে যাব না। বিভিন্ন জেলায় জেলায় আমাদের অনুষ্ঠান রয়েছে।
কিন্তু এবার তো সময়টা একটু উত্তাল, কী মনে হয় শ্রোতারা গানে কতটা সাড়া দেবেন?
অর্কদীপ: সাড়া দেওয়া না দেওয়াটা তো একেবারেই ওঁদের ব্যক্তিগত ব্যাপার। কিন্তু আমাদের তো গানটাই পেশা। একজন ফুচকা বিক্রেতা এই সময় তাঁর কাজটা যেমন করবেন, আমাদের বিষয়টাও তাই, একেবারে পেশাগত তাগিদে।
আর পুজোর গান, সেখানে তো অনেক বদল এসেছে, সেটা আপনি কীভাবে দেখেন?
অর্কদীপ: আমারাদের ছোটাবেলা সেই সময়কার পুজোর গান আমাদের কাছে নস্টালজিয়া। 'এক এক্কে এক' পুজো এলেই এই গানগুলো ফিরে ফিরে আসে। তখন পুজোর গান নিয়ে আমাদের মধ্যে একটা আলাদা উন্মাদনা থাকত। পুজোর গানগুলো সকলের মন ছুঁয়ে যেত। কিন্তু এখন পুজোয় এত গান তৈরি হয় ইউটিউবের দৌলতে যে, সব গান সবার কাছে সঠিকভাবে পৌঁছয় না। তাই ২০২২ পর থেকে আর আমরা পুজোর গান নিয়ে আসিনি। এখন তাই পুজোর ভিড়টা কাটলে, পুজোর পর আমরা আমাদের গান নিয়ে হাজির হই।
এবারও নিশ্চয়ই গান আসবে?
অর্কদীপ: হ্যাঁ, পুজোর পর আসবে। তাছাড়াও পুজোর পর আমি নিজে ১০ টা গান নিয়ে কাজ করছি, সেগুলো একে একে আসবে। সেগুলো সব আমার নিজের লেখা ও নিজের সুর করা। পুজোর পর আমার প্রথম যে গানটা আসবে সেটা হল 'টক্সিসিটির ভয়'। এছাড়াও বেশ কিছু ছবি গানও আসছে।
আর পুজো মানেই তো পুজো প্রেম, আপনার জীবনে তেমনটা এসেছে কখনও?
অর্কদীপ: ছোটবেলায় তো প্রেম নিয়ে আলাদা করে কিছু ভাবতাম না। তখন প্রেম মানে ক্যাপ-বন্দুক আর চকোলেট বোম। আর তারপর যখন বড় হলাম, বুঝতে শিখলাম, তখন তো আমি বিভিন্ন জায়গায় অনুষ্ঠান করা শুরু করে দিয়েছি। ওই অনুষ্ঠানে করতে গিয়েই কাউকে দেখে ভালো লাগলো এই পর্যন্ত।