কেউ থাকেন শিকাগো, কেউ মুম্বইয়ে, কেউ কেউ আবার কলকাতা নিবাসী। কিন্তু সেই শত-হাজার কিলোমিটারের দূরত্বের ব্যবধান মুছে তাঁরা একসঙ্গে আসছেন একটাই লক্ষ্যে, একটাই বার্তা দিতে। যা বিশ্ববাসীকে বলবে - ‘একা নও জেনো’। অর্থাৎ করোনাভাইরাসের কবলে থাকা দুনিয়ায় কেউ একা নন। সবাই একসঙ্গে আছেন।
তবে সেই বার্তাটা খানিকটা ভিন্নভাবেই দিচ্ছে টিম ‘একা নও জেনো’। ভিডিয়োটির পরিকল্পনা ও রূপায়নকারী যশ চক্রবর্তী জানান, দেশ-বিদেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে কবিতা আবৃত্তির মাধ্যমে মানুষকে করোনার বিরুদ্ধে লড়াই করার বার্তা দেওয়া হচ্ছে। যিনি তথ্যপ্রযুক্তি বিশেষজ্ঞ হিসেবে শিকাগোয় কর্মরত। একইসঙ্গে কবি এবং গীতিকারও। তাঁর লেখা একাধিক গান প্রকাশ হয়েছে।
সেই যশ বলেন, ‘আমরা এক অদ্ভূত কঠিন সময়ের মধ্য দিয়ে যাচ্ছি। একটা অদৃশ্য ভাইরাস খুঁজে খুঁজে শুধু মানুষকেই তাড়া করে চলেছে বিশ্বজুড়ে। আর তার ভয়ে আমরা সবাই আজ গৃহবন্দি। এ যেন এক তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধের আবহ। এই অভিনব যুদ্ধে আমাদের হাতে আজ দৃশ্যত কোনও অস্ত্র না থাকলেও, কিছু অদৃশ্য হাতিয়ার তো আছেই। সাহস, শপথ, স্বপ্ন, আত্মবিশ্বাস, নতুন কিছু অভ্যাস ও ধৈর্যকে সম্বল করে আমরাও আজ মেঘনাদের মতো যুদ্ধ করব। যে কোনও সঙ্গবদ্ধ প্রচেষ্টার কাছে প্রবল পরাক্রমশালী শত্রুও তুচ্ছ হয়ে যায়। যেহেতু এই যুদ্ধে সমগ্র বিশ্ব আজ এক, তাই জয় আমাদের সুনিশ্চিত।’
সেই লড়াই করার বার্তা দেওয়ার প্রথম চিন্তাটা মাথায় এসেছিল যশের বন্ধু উৎপল চক্রবর্তীর। যিনি ইংরেজি শিক্ষকতার পাশাপাশি একাধিক পত্রিকায় নিয়মিত লেখালেখি করেন। যশ জানান, উৎপল কবিতা লিখে বলেছিল এরকম একটা উদ্যোগ নেওয়ার। সেইমতো ছোটো ছোটো পায়ে এগোতে থাকেন তাঁরা। কলকাতার পরিচিত শিল্পীদের আবৃত্তির প্রস্তাব দেওয়া হয়।
যশ বলেন, ‘একে একে অনেকে আমাদের উদ্যোগে সামিল হন। রূপম ইসলাম, রাঘব চট্টোপাধ্যায়, মনোময় ভট্টাচার্য, সুরজিৎ চট্টোপাধ্যায়, অনিন্দ্য বোস, অনীক ধর, অন্বেষা, অরিন্দম চট্টোপাধ্যায়, অর্ণব দত্ত, জিনিয়া পান্ডে (আর জে জিনিয়া), মানালি গঙ্গোপাধ্যায় (আর জে মানালি), ইন্দ্রনীল সেন, উজ্জ্বয়িনী মুখোপাধ্যায়, কেকা ঘোষাল, কৌশিক চক্রবর্তী, প্রশ্মিতা পাল, বিশাখ জ্যোতি, রণজয় ভট্টাচার্য, শমীক সিনহা, সায়ক বন্দ্যোপাধ্যায় এবং সায়ন্তী মজুমদার। ভিডিয়োর দৃশ্য সম্পাদনা ও আবহ তৈরি করেছেন দেবপ্রিয়া চক্রবর্তী।'
কিন্তু দূরে থেকে এরকমভাবে কাজ করতে কোনও সমস্যা হয়নি? যশ জানিয়েছেন, কোনও সমস্যা তো হয়নি, বরং সবাই অত্যন্ত সহযোগিতা করেছেন। তাঁর কথায়, ‘সবাই খুব প্রতিষ্ঠিত শিল্পী। তাঁরা ভিডিয়ো করে পাঠিয়েছেন। মনের মতো না হলে একাধিকবার ভিডিয়ো করতে বলেছি। একবারও বিরক্ত হননি। দু'বার-তিনবার ভিডিয়ো পাঠিয়েছেন। সকলের থেকে সহযোগিতা পেয়েছি। সামাজিক দায়িত্বে সবাই এগিয়ে এসেছেন। সবাই চেয়েছেন, যাতে বার্তাটা মানুষের কাছে পৌঁছায়।’
রবিবার সেই আবৃত্তি প্রকাশ করার আগে অবশ্য কিছুটা টেনশনে রয়েছে টিম ‘একা নও জেনো’। সেই টেনশনকেই পাশে রেখে তাঁদের বক্তব্য, ‘দূর থেকেই আজ আমরা হাতে হাত রাখব, ছুঁয়ে থাকব একে অপরকে, যাতে একসাথেই আমরা পৌঁছে যেতে পারি এক নতুন যুগের ভোরে, যেখানে নতুন আলোর সোনার কাঠি নিয়ে অপেক্ষা করছে এক ঐক্যবদ্ধ বিশ্ব। শুধু মনে রাখতে হবে এই দুর্যোগে তুমি নিজেকে একা ভেব না কখনও। আমরাও আছি পাশে। সবাই সবার সঙ্গে ভালোবেসে।’