উপমহাদেশের অন্যতম পরিচিত রক ব্যান্ড ‘ইউফোরিয়া’। নব্বইয়ের দশকে বেড়ে ওঠা ছেলেমেয়েদের কাছে ‘ইউফোরিয়া’ একটা আবেগের নাম। এই ব্যান্ডের প্রধান মুখ পলাশ সেন। দিল্লির ডাক্তার পরিবারে বেড়ে ওঠা পলাশ নিজেও পেশাগত সূত্রে একজন দন্ত চিকিৎসক। পরবর্তীতে নিজের প্য়াশন, গানকে বেছে নেন পলাশ। তাঁর গাওয়া ‘মায়েরি’ গান আজও বহু সঙ্গীতপ্রেমীর প্লে-লিস্টে একদম উপরের সারিতে রয়েছে।
এই রকস্টার সবসময় তাঁর গলায় মঙ্গলসূত্র পরে থাকেন, যা দেখে অনেকেই হতবাক হন। বিয়ের পর হিন্দু মহিলারা তাঁর স্বামীর মঙ্গলকামনায় কালো পুঁতিতে গাঁথা এই হার গলায় পরেন। এটি একান্তভাবেই সধবা মহিলাদের অলঙ্কার। জানেন কি পলাশের গলার মঙ্গলসূত্রটি আসলে গায়কের মায়ের। বিগত কয়েক বছর ধরেই মায়ের মঙ্গলসূত্র নিজের গলায় ধারণ করেছেন ‘ইউফোরিয়া’র লিড ভোকালিস্ট। এক সাক্ষাৎকারে এই সিদ্ধান্তের পিছনের কারণ এবং মায়ের সঙ্গে নিজের সম্পর্কের সমীকরণ নিয়ে মুখ খুলেছেন পলাশ।
মায়ের কঠিন লড়াইয়ের কথা বলতে গিয়ে পলাশ জানান, ‘আমার মায়ের তখন আট বছর বয়স যখন দেশভাগ হয়। লাহোর থেকে ৪ বছর বয়সী ভাইকে নিয়ে একা হেঁটে জম্মু-কাশ্মীরে পৌঁছান আমার মা। উনি ছেলেদের স্কুলে পড়াশোনা করতেন, ওখানে সেইসময় মেয়েদের জন্য আলাদা স্কুল ছিল না। এরপর ১৭ বছর বয়সে এমবিবিএস পড়তে মা লখনউ আসেন’।
তিনি আরও যোগ করেন, ‘যখন তুমি মানসিকভাবে এতটা শক্ত একজন মানুষ হও, তখন তোমার জীবন দর্শনটাও খুব কঠিন হয়। সেইজন্যই বোধহয় সব বিষয়ে মায়ের সঙ্গে আমার অমত হয়, দুজনের খুব ঝগড়াও হয়। তবে মা-ই আমার জীবনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ মানুষ। আমার বাবা মারা হওয়ার পর মা মঙ্গলসূত্র পরা বন্ধ করে দেন। তারপর থেকে আমি ওই মঙ্গলসূত্রটা পরা শুরু করি। স্টেজে সবসময় ওই মঙ্গলসূত্র আমার গলায় থাকে, বলতে পারেন আমার মায়ের আর্শীবাদ আমার সঙ্গে থাকে। মঙ্গলসূত্রের সঙ্গে আমি একটা খার্তুশ (মিশরীয় লকেট) ঝুলিয়েছি। ওটা মিশর থেকে আনা, আর তাতে আমার বাবা-মায়ের নাম খোদাই করা রয়েছে মিশরীয় হায়ারোগ্লিফে (চিত্রলিপি)।’
১৯৯৮ সালে ‘ইউফোরিয়া’র জন্ম। ‘মায়েরি’, ‘ধুম পিচাক ধুম’, ‘আনা তু মেরি গলি’, ‘অব না যা’-র মতো অজস্র হিট গান হিন্দি সঙ্গীত প্রেমীদের উপহার দিয়েছে পলাশ সেনের ব্যান্ড। এর পাশাপাশি বলিউডে অভিনয়ও করেছেন তিনি। ২০০১ সালে ‘ফিলহাল’ ছবির সঙ্গে তাঁর অভিনয় সফর শুরু হয়েছিল। মেঘনা গুলজারের এই ছবিতে পলাশের কো-স্টার ছিলেন তাবু ও সুস্মিতা সেন।