বাংলা চলচ্চিত্র জগতে জাতীয় পুরস্কার আর সৃজিত মুখোপাধ্যায় কার্যত সমার্থক শব্দ হয়ে দাঁড়িয়েছে। মাত্র এক দশক দীর্ঘ ফিল্মি কেরিয়ারে পাঁচ নম্বর ব্যক্তিগত জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার সৃজিতের ঝুলিতে গেল গুমনামী'র সুবাদে। প্রত্যেকটা স্বীকৃতি ভীষণ স্পেশ্যাল, তবে গুমনামীর জন্য দুটো জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার জয়টা অনেকটা স্বস্তির হাসি এনে দিয়েছে সৃজিতের মুখে। কারণ এই ছবির জন্য প্রাণনাশের হুমকি পেয়েছেন, জ্বলেছে সৃজিতের কুশপুতুল, হাইকোর্টে দাখিল হয়েছে মামলা- সব বিতর্ক, বাধা পেরিয়ে বক্স অফিসের সাফল্য, দর্শকদের প্রশংসার পর এবার জাতীয় মঞ্চে সেরার তকমা।
সোমবার ৬৭তম জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার ঘোষিত হয়েছে। তালিকায় সেরা বাংলা ছবি নির্বাচিত হয়েছে গুমনামী। পাশাপাশি এই ছবির জন্য সেরা অ্যাডাপ্টেড স্ক্রিনপ্লে (কাহিনি অবলম্বনে লেখা)-র পুরস্কার পেয়েছেন সৃজিত মুখোপাধ্যায়। ডবল সেলিব্রেশন টিম ‘গুমনামী’র। শ্যুটিংয়ে ব্যস্ত সৃজিত এই জয় সম্পর্কে এক সাক্ষাত্কারে জানালেন, ' আমি মৃত্যুর হুমকি পেয়েছি, আদালতের নোটিশ পেয়েছি, এবং জাতীয় টেলিভিশনে আমাকে আক্রমণ শানানো হয়েছে এই ছবির জন্য। তবে সব বাধা পেরিয়ে গুমনামীর যাত্রাপথটা আমার জন্য খুব সন্তোষজনক।
গুমনামীর এই সাফল্যের কৃতিত্ব বুম্বাদা ও মেক-আপ আর্টিস্ট সোমনাথ কুণ্ডুর সঙ্গে ভাগ করে নিলেন পরিচালক। টাইমস অফ ইন্ডিয়াকে পরিচালক জানান, ‘খুব গরমে আমরা শ্যুট করেছিলাম, প্রস্থেটিক মেক-আপের পর বুম্বাদা ভিতর থেকে ঘামে ভিজে যেত। তবুও কেবলমাত্র প্রসেনজিত্ চট্টোপাধ্যায়ের অভিনয়ের প্রতি সমপর্ণ. কাজটা সহজ করে দিয়েছিল। সোমনাথও দারুণ কাজ করেছে’।
২০১৯ সালের দুর্গাপুজোয়, ২রা অক্টোবর মুক্তি পেয়েছিল এই ছবি। অনুজ ধর ও চন্দ্রচূড় ঘোষের লেখা 'কোনানড্রাম' থেকে অনুপ্রাণিত হয়েই তৈরি হয়েছে এই ছবি। নেতাজি কি সত্যি ১৯৪৫-এর ১৮ অগস্ট বিমান দুর্ঘটনায় মারা গিয়েছিলেন? এই প্রশ্ন বছরের পর বছর নাড়া দিয়েছে বাঙালি মননকে। সেই নিয়েই ছবি। যার সঙ্গে জড়িয়ে রয়েছেন ‘গুমনামী’ বাবাও। নেতাজির অন্তর্ধান নিয়ে যে রহস্য , তা সমাধানে বিভিন্ন সময়েগঠন করা হয়েছিল তিনটি কমিশন— শাহনওয়াজ(১৯৫৬), খোসলা (১৯৭০) এবং মুখার্জি(১৯৯৯)। সেই তিন কমিশনের তথ্য ঘুরে ফিরে এসেছে এই ছবিতে।
সৃজিতের কথায়, ‘চিত্রনাট্যই ছবির মেরুদণ্ড, অ্যাডাপ্টেড স্ক্রিনপ্লের ক্ষেত্রে চিত্রনাট্যকারের দায়িত্ব বেড়ে যায়, কারণ মূল গল্পের তথ্য যাতে বাদ না পড়ে’।
এবছর জাতীয় মঞ্চে বাংলার জয়জয়কার। অরিজিন্যাল স্ক্রিন প্লে-র পুরস্কার গিয়েছে কৌশিক গঙ্গোপাধ্যায়ের ‘জ্যেষ্ঠপুত্র', সেরা আবহসংগীতের পুরস্কারও (প্রবু্দ্ধ বন্দ্যোপাধ্যায়) জিতে নিয়েছে এই ছবি।
এছাড়াও দুই বাঙালি বিশেষ সম্মান পেল জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারের মঞ্চে। বৌদ্ধায়ন মুখোপাধ্যায়ের হিন্দি ছবি দ্য শাওয়ার সেরা প্রচারমূলক ছবি নির্বাচিত হয়েছে। অন্যদিকে বিশাখজ্যোতি পুরস্কৃত হয়েছে ‘নন-ফিচার’ ছবিতে সেরা সংগীত পরিচালক হিসাবে। ক্রান্তি দর্শী গুরুজি-র জন্য তাঁর ঝুলিতে এল এই সম্মান। সেরা সিনেমা সমালোচকের শিরোপা পেয়েছেন সোহিনী চট্টোপাধ্যায়।