সুশান্ত সিং রাজপুতের মৃত্যুর সঙ্গে জড়িত আর্থিক তছরুপের মামলার তদন্ত করছে কেন্দ্রীয় সংস্থা এনফোর্সমেন্ট ডিপার্টমেন্ট। শুক্রবার সন্ধ্যায় আচমকাই বেশ কিছু মিডিয়া রিপোর্টে দাবি করা হয় সুশান্ত সিং তাঁর প্রাক্তন প্রেমিকা অঙ্কিতা লোখান্ডের ৪.৫ কোটি টাকার ফ্ল্যাটের ইএমআই দিতেন। উল্লেখ্য ২০১৬ সালে সুশান্ত-অঙ্কিতার সম্পর্কে ইতি পড়ে। সুশান্তের মৃত্যুর পর থেকে প্রাক্তন প্রেমিকের পরিবারের যেভাবে পাশে দাঁড়িয়েছেন অঙ্কিতা -তাতে সোশ্যাল মিডিয়ায় প্রশংসিত হয়েছেন অভিনেত্রী। কিন্তু শুক্রবার সংবাদমাধ্যমে এই খবর সামনে আসবার পর থেকেই অঙ্কিতাকে নানারকমের গুঞ্জন শুরু হয়। তবে এদিন মাঝরাতে সব জল্পনায় জল ঢেলে প্রমাণ সহ যোগ্য জবাব দিলেন সুশান্তের প্রাক্তন প্রেমিকা।
টুইট বার্তায় অঙ্কিতা লেখেন, এখানেই সব জল্পনা শেষ হোক। আমি ততটাই স্বচ্ছ হওয়ার চেষ্টা করলাম, যতটা হওয়া সম্ভবপর। আমার ফ্ল্যাটের রেজিস্ট্রেশন এবং আমার ব্যাঙ্কের টেস্টমেন্ট। ১লা জানুয়ারি ২০১৯ থেকে ১লা মার্চ ২০২০ পর্যন্ত। যেখানে হাইলাইট করা রয়েছে, যে আমার ফ্ল্যাটের ইএমআইয়ের টাকা আমার খাতা থেকেই প্রতিমাসে কাটা হয়েছে। এর থেকে বেশি আমার কিছু বলবার নেই। #justiceforssr'।
নিজের টুইটের সঙ্গে সমস্ত প্রয়োজনীয় নথি সামনে আনেন অঙ্কিতা।
অঙ্কিতা নিজের ফ্ল্যাটের দলিলের স্ক্রিনশটও এদিন শেয়ার করে নেন। যেখানে স্পষ্টই দেখা যাচ্ছে ২০১৩ সালের মে মাসে ১ কোটি ৩৫ লক্ষ টাকায় মালাডের ইন্টারফেস হাইটস আবাসনের চারতলায় একটি ফ্ল্যাট কেনেন অঙ্কিতা। যার জন্য সেই সময়ই তিনি ৬.৭৫ লক্ষ টাকার স্ট্যাম্প ডিউটিও ভরেছিলেন।
অঙ্কিতার এই পোস্টে কমেন্ট করেন সুশান্তের দিদি শ্বেতা সিং কীর্তি। লেখেন, আমি জানি তুমি একজন স্বাধীনচেতা নারী। এবং আমি তোমাকে নিয়ে গর্বিত অঙ্কিতা'।
শুক্রবার সংবাদ সংস্থা এএনআই এক ইডি অফিসারকে উদ্ধৃত করে জানায়, সুশান্ত সিং রাজপুত তাঁর বান্ধবী অঙ্কিতা লোখান্ডে যে ফ্ল্যাটে থাকতেন তাঁর ইএমআই দিতেন। সুশান্তের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট স্টেটমেন্টে তার উল্লেখ আছে। ফ্ল্যাটটি রেজিস্টার করা সুশান্তের নামে'। ইন্ডিয়া টুডেতে প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলা হয় রিয়া চক্রবর্তীও নাকি ইডি অফিসারদের এই কথা জানিয়েছেন।
তাহলে ইডির দাবি কী মিথ্যা? আসলে বিষয়টি হল ২০১৩ সালের মে মাসে ১ কোটি ৩৫ লক্ষ টাকায় মালাডের ইন্টারফেস হাইটস আবাসনে অঙ্কিতার পাশাপাশি একটি ফ্ল্যাট কেনেন সুশান্ত সিং রাজপুতও। ৬৮৩ স্কোয়ার ফিটের সেই ফ্ল্যাটটির ইএমআইয়ের টাকাই টাকা হত সুশান্তের অ্যাকাউন্ট থেকে।সুশান্তও নিজের ফ্ল্যাটের জন্য ৬.৭৫ লক্ষ টাকাই স্ট্যাম্প ডিউটি হিসাবে ভরে ছিলেন। তাঁর ফ্ল্যাটটির তখন মূল্য ছিল ১.৩৫ কোটি টাকা, যার বর্তমান বাজার দর ৪.৫ কোটি টাকা। এই আবাসনে অঙ্কিতার ফ্ল্যাট নম্বর হল ৪০৪ এবং সুশান্তের ফ্ল্যাটের নম্বর ৪০৩। চারতলাতেই দুজনের ফ্ল্যাট। সুশান্ত অন্ধেরি থেকে মালাডের ওই ফ্ল্যাটে শিফট করেছিলেন ২০১৩ সালে।
শুক্রবার আর্থিক তছরুপের মামলায় সুশান্তের প্রাক্তন কর্মচারীদের জেরা করে ইডির আধিকারিকরা। এদিন মুম্বইয়ের ইডির অফিসে বয়ান রেকর্ড করা হয় রজত মেওয়াতি, পঙ্কজ দুবে এবং দীপেশ সাওয়ান্তের। সুশান্তের পরিবারের বয়ানও আগামী সপ্তাহে রেকর্ড করা হবে। তাঁর মুম্বইস্থিত দিদি মীতু সিংয়ের বয়ান ইতিমধ্যেই রেকর্ড করেছে ইডি।
এই মামলায় দু-দফায় জেরা করা হয়েছে সুশান্তের গার্লফ্রেন্ড রিয়া চক্রবর্তীকে। ৩১শে জুলাই বিহার পুলিশের এফআইআরের ভিত্তিতে ইসিআইআর রিপোর্ট দাখিল করে স্বতঃপ্রণোদিতভাবে সুশান্তের মৃত্যুর সঙ্গে কোনও আর্থিক কেলেঙ্কারির দিক জড়িয়ে রয়েছে কিনা খতিয়ে দেখছে ইডি। সুশান্তের বাবা তাঁর দায়ের করা এফআইআরে সুশান্তের অ্যাকাউন্ট থেকে ১৫ কোটি টাকা অজানা অ্যাকাউন্টে ট্রান্সফার হওয়ার কথা জানিয়েছেন।