ছৌ নাচ, আঞ্চলিক এই নৃত্যের উৎপত্তি এরাজ্যের পুরুলিয়া জেলায়। যদিও এখন আর এদেশের অন্য়ান্য শাস্ত্রীয় নৃত্যের মতো ছৌ নাচ আর ততটাও দেখা যায় না। তবে এই আদিবাসী নাচেরই এক অন্যরকম মুহূর্তের সাক্ষী হলেন বাংলার জনপ্রিয় অভিনেতা বিশ্বনাথ বসু। তারই কিছু মুহূর্তে ফেসবুকের পাতায় তুলে ধরেছেন মুগ্ধ অভিনেতা।
বিশ্বনাথ বসু ফেসবুকের পাতায় লেখেন, ‘রাত তখন প্রায় তিনটে হবে, আমরা আসানসোল-এ অনুষ্ঠান শেষ করে পুরুলিয়া-র মুরগুমার পথে…। হঠাৎ চোখ কানে যেন একরাশ আলো আর আওয়াজ আছড়ে পরলো। চোখ আর কানকে বিশ্বাস করতে সময় নিচ্ছিল আমার মস্তিষ্ক। শ'খানেক মানুষ আপাদমস্তক শীতের পোশাক পরে চাক্ষুষ করছে আমাদের সংস্কৃতির আদিম সৃষ্টি #ছৌ নাচকে। কে বলে, হারিয়ে যেতে চলেছে আমাদের আদি অকৃত্রিম পরম পাওয়া।'
বিশ্বনাথ আরও লেখেন, 'আমি চিরকালই এক ভাগ্যবান মানুষ, আরেকবার প্রমাণ পেলাম বেশ খানিকক্ষণ সাক্ষী থাকতে পেরে। ধামসা মাদোল ট্রাম্পেট বাঁশি আর তেমনি গান ও বাচিক অভিনয়। কিই বা দিতে পারি আমি? তাতেই হাজার ক্লান্ত হওয়ার বায়ানাক্কা। প্রণাম নেবেন শিল্পী বন্ধুরা। হাল্কা শীতের রাতের বুক চিড়ে মাটির বুকে বারবার শরীরি কসরৎ দীর্ঘজীবি হোক। যে গর্ব অহংকার আজ একজন দর্শক হিসাবে আমাকে ছুঁয়ে গেলো তা যেন বিশ্বজনীন হয়.....’।
এবিষয়ে Hindustan Times Bangla-র তরফে বিশ্বনাথ বসুর সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, ‘এই নাচকে বিলুপ্তপ্রায় কীভাবে বলি! পর্দা উন্মোচন করলে যেমন হয়না, (বিস্ময়সূচক গলায়) গতকাল (মঙ্গলবার) ঠিক তেমনই মনে হচ্ছিল। ওখানে একপ্রকার সাজো সাজো রব, সে কী পারফরম্যান্স দেখলাম কাল রাতে! এ জন্মে আর কোনওদিনও সেটা ভুলব না। আমি লন্ডনের অপেরা দেখেছি ৫ বার, মিউজিক্যাল শো দেখেছি, অনেক বড় বড় শো দেখেছি, তে এই জিনিস দেখিনি! কী বাচিকশিল্পীর অভিনয়! মনে হচ্ছিল লোকে কী যে বলে, বিশ্বনাথ অনেক রকম গলা করতে পারে! এখানে যে লব-কুশের গলা করছেন, সেই সীতা করছে, সেই ডাইনি করছে, সেই বাল্মিকী করছেন। সেকী গান, কান্না উফ! কী সিঙ্ক্রোনাইজেশন, হাতনড়া থেকে মুখ নাড়া, দুটো শরীর একসঙ্গে চলছে! অপূর্ব অপূর্ব…। আমরা প্রায় ২০ মিনিট থেকে আধ ঘণ্টা ওখানে ছিলাম। মুগ্ধ আমি।’।
বিশ্বনাথ বলেন, ‘আমি এখনও পরুলিয়াতেই আছি। আজও জয়পুর থানা এলাকায় অনুষ্ঠান আছে। ছৌ নাচের শো কিন্তু এখনও হয়, কলকাতাতেও হয়। সরকারের তরফেও শো হয়। পুরুলিয়ার ছৌ শিল্পীর একটা দল ১৯৭২/ ১৯৭৫ আমেরিকা গিয়েছিল শো করতে। সেই দলটির মধ্যে এখন অবশ্য ১জনই বেঁচে আছেন। সেদিন তিনি বাচ্চা ছেলে ছিলেন, আজ তিনি অশীতিপর বৃদ্ধ। গতকাল এই ছৌ নাচের শো দেখতে ভীষণ ভিড় ছিল। সে কী আওয়াজ, কী পরিবেশ, কী বাদ্যযন্ত্র, ট্রাম্পেট, ধামসা-মাদল বাজছে হই হই বিষয় সেখানে! প্রচণ্ড ঠাণ্ডা পুরুলিয়ায়, তারপরও লোকে শীতের পোশাক পরে শো দেখতে হাজির ছিল…। যাক আর কথা বাড়াবো না, এই মুহূর্তে আমি এখানে পাহাড়ের অপূর্ব একটা দৃশ্য দেখছি… ’।