আরজি কর কাণ্ড নিয়ে উত্তাল কলকাতা সহ গোটা রাজ্য। তার আঁচ লেগেছে টলিপাড়াতেও। উঠছে যৌন হেনস্থার একাধিক অভিযোগ। তবে ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রিতে ওঠা যৌন হেনস্থার অভিযোগে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে যিনি রয়েছেন তিনি হলেন পরিচালক অরিন্দম শীল। ইতিমধ্যেই পরিচালকের বিরুদ্ধে রাজ্য মহিলা কমিশনের দ্বারস্থ ২ অভিনেত্রী। অরিন্দমের বিরুদ্ধে ওঠা এই অভিযোগের কারণে তাঁকে বরখাস্ত করেছে ডিরেক্টর'স গিল্ড। তবে এই পরিস্থিতি ঠিক কী বলতে চান অভিনেত্রী রূপাঞ্জনা মিত্র।
বর্তমানের উত্তাল পরিস্থিতিতে নয়, তারও বহু আগে ২০২০ সালে অরিন্দম শীলের বিরুদ্ধে মুখ খুলেছিলেন রূপাঞ্জনাই। যদিও সেসময় অরিন্দমের বিরুদ্ধে কেউই কোনও পদক্ষেপ নেননি। বর্তমানে যখন ফের অরিন্দমের বিরুদ্ধে সরব একাধিক মহিলা। ঠিক তখনই Hindustan Times Bangla-র কাছে আরও একবার মুখ খুললেন রূপাঞ্জনা মিত্র (Rupanjana Mitra)।
অরিন্দম শীলকে নিয়ে আপনি তো বহু আগেই মুখ খুলছিলেন, এতদিন পর তাঁর বিরুদ্ধে ওঠা একাধিক অভিযোগের কারণে পদক্ষেপ করা হয়েছে? কী বলবেন?
রূপাঞ্জনা: মুখ খুলতে তো সবাই পারে না, তার জন্য সবার আগে সোজা মেরুদণ্ড দরকার। একজন শিল্পী সোজা মেরুদণ্ড নিয়েই মুখ খুলেছিলো। আর্টিস্ট ফোরামও তখন তার সঙ্গে হওয়া অশালীন আচরণ নিয়ে কথা বলেছিল। তবে আমার আগেও ওঁর বিরুদ্ধে মুখ খুলেছিলেন আরও একজন। রবি ওঝা প্রোডাকশনের 'এক আকাশের নিচে' ধারাবাহিকের সময়ও শীলের বিরুদ্ধে একজন বড় অভিনেত্রী মুখ খুলেছিলেন। যেকারণে সিরিয়ালের শ্যুটিং থেকে অভিনেতা শীলের ডেট কমিয়ে দেওয়া হয়। আর প্রথম অভিযোগ ওর (অরিন্দম শীল) নামে আনেন একজন অত্যন্ত ভালো শিল্পী। যেটা তিনি একটা টেলিফিল্ম চলাকালীন এনেছিলেন। তোমরা জানোনা বলেও দোষীর দোষ কিন্তু কমছে না।
দোষী কি কোনওদিনও স্বীকার করে নেয়, যে সে দোষী? আর দোষ স্বীকার করার মতো সৎ সাহজ সকলের থাকে না। যে মেয়েটি এবার মুখ খুলেছে, তার ইচ্ছের বিরুদ্ধে কিছু ঘটেছে বলেই তো সে অভিযোগ জানিয়েছে।
এতদিন পর হলেও অরিন্দম শীলকে বরখাস্ত করে যে পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে, তাতে কিছুটা হলেও কি স্বস্তি পেয়েছেন?
রূপাঞ্জনা: স্বস্তি সত্যিই পেয়েছি কিনা এটা এখনই বলতে পারছি না। কারণ, রাজ্যের পরিস্থিতি ভালো নয়। এখন মানুষ আর অমানুষের লড়াই চলছে।
যখন অরিন্দম শীলের বিরুদ্ধে যৌন হেনস্থার অভিযোগ উঠছে, তখন তাঁর 'স্ত্রী' শুক্লা দাসের দাবি পরিচালককে ‘পরিকল্পনা মাফিক ফাঁসানো হয়েছে’।
রূপাঞ্জনা: ওর (অরিন্দম শীল) স্ত্রী যে কে, সেটা নিয়েই তো ঘোর বিভ্রান্তি রয়েছে। আমি তো অন্য কাউকেই ওর স্ত্রী বলে জানি। ২০২০-তে উনি নিজেই আমার সঙ্গে যোগাযোগ করেছিলেন।
আপনি যখন অরিন্দম শীলের বিরুদ্ধে মুখ খুলেছিলেন, তার জন্য আপনাকে কর্মক্ষেত্রে কি কোনও সমস্যার মুখোমুখি হতে হয়েছিল?
রূপাঞ্জনা: হ্যাঁ। অভিযোগ করার কারণে, আমাকে সেসময় বহু কাজ থেকে বাদ দেওয়া হয়েছিল। একজন পরিচালক তো বলেই দিলেন, শীলবাবু আছেন, সরি তোমাকে এই ছবিতে নিতে পারছি না। যদিও অভিনয়ের দিক থেকে তুমিই প্রথম পছন্দ ছিলে। তারপর সেই চরিত্রটি একজন শাসক দলের কাউন্সিলর-কে দিয়ে করানো হয়। অথচ সেই মহিলার আর্টিস্ট ফোরামের কোনও কার্ড আছে বলে আমি অন্তত জানি না। সেসময় আমাকে মানসিকভাবে চূড়ান্ত হেনস্থার মধ্যে দিয়ে যেতে হয়েছে। কারণ এই পিতৃতান্ত্রিক সমাজে এক মহিলা মুখ খুলেছেন! তাই অনেকের হাসির পাত্র, অনেকের গসিপের অংশ হয়েছি। মনে রেখে দিয়েছি সব। কষ্টও পেয়েছি।
এই অরিন্দম শীলই আবার আরজি কর কাণ্ডের প্রতিবাদে টলিপাড়ার মিছিলে হেঁটেছিলেন…
রূপাঞ্জনা: শুধু অরিন্দম শীল নয়, টলিপাড়ার মিছিলে আরও দুজনেকে হাঁটতে দেখেছি, যাঁরাও কিন্তু মহিলাদের এক্কেবারেই সম্মান করেন না।
আরজি কর কাণ্ডের পর এই বাংলার এক অন্যরূপ দেখা যাচ্ছে, কী মনে হয়?
রূপাঞ্জনা: বাংলার এই রূপটাই দেখার ছিল বলেই হয়ত এখন দেখা যাচ্ছে। সিস্টেমেই বদল আনা দরকার। ঝড় তো তাই গোটা দেশজুড়েই উঠেছে। আর উঠবে নাই বা কেন! যা চলছে, যেমনভাবে চলছে, একটা মেয়েকে অন ডিউটি ৩০ ঘণ্টা পরিশ্রমের পর পৃথিবী থেকেই সরিয়ে দেওয়া হল। শুধুমাত্র মেয়েটি কিছু স্বার্থপর মানুষের আখের গোছানোর পথে বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছিল বলে। আর সেটা এই সময়ে বসে কোনও মানুষ মেনে নিতে পারবেন না। ‘মানুষ’ মানে যাঁদের ‘মান’ আর ‘হুঁশ’ আছে, তাঁরা প্রতিবাদ করবেই।
মুখ্যমন্ত্রী আজ জুনিয়ার ডাক্তারদের ধর্না মঞ্চে গিয়েছিলেন, উনি যা বলেছেন, এবিষয়ে আপনি কি নিজের অভিমত ব্যক্তি করতে চাইবেন?
রূপাঞ্জনা: মাননীয়া মুখ্যমন্ত্রীকে হয়ত এখন সবাই দিদি হিসাবেই দেখতে চাইছেন। জুনিয়র ডাক্তারদের জন্য নবান্নের সভাগৃহে তাঁর দু'ঘণ্টা অপেক্ষা দেখলাম, আবার রাস্তায় রোদ-ঝড়-বৃষ্টি উপেক্ষা করে জুনিয়র ডাক্তারদের লড়াইও দেখলাম। তিলোত্তমার পরিবার বিচারের আশায় বসে আছে, আর জুনিয়র ডাক্তারদের সঙ্গেও আছে, এটাও দেখেছি।
উৎসবে যোগ দেওয়া নিয়ে আপনার কী মতামত?
রূপাঞ্জনা: মন থেকে আমরা মা (দুর্গা)-কে ডাকি, যদি তিনি আসেন, তাহলে বুঝবো অনেক কিছুর বদল নিয়েই আসছেন। বহু মানুষ সারা বছর এই পুজো ঘিরে রোজগারের অপেক্ষায় থাকেন, তাঁদের রোজগারের ক্ষেত্র আমরা কেড়ে নিতে পারিনা। তাই উৎসব নাকি উৎসব নয়, সেটা প্রতিদিনের ক্রাইসিস ম্যানেজমেন্টের (প্রতিদিনের সংকট ও ব্যবস্থাপনা) উপরই ছেড়ে দিলাম। কলকাতার এক অসুক হয়েছে, যেটার চিকিৎসা চলছে, যাতে শক্তি সেই তিলোত্তমা-ই হতে পারে।
পুজোটা আপনি কীভাবে কাটাবেন?
রূপাঞ্জনা: পুজোর মধ্যে গ্রামে থাকব দু'দিন। পরিবারের সঙ্গে থাকত, তাঁদের আগলে রাখব।
আপনিও তো মা, ওকে কীভাবে বড় করতে চাইবেন?
রূপাঞ্জনা: হ্যাঁ আমিও মা, আর তাই আরও বেশি করে চাই ও সুস্থ, স্বাভাবিক সমাজে বড় হোক। ওকে মূল্যবোধ শেখাই। যেভাবে আমরা যুগের সঙ্গে প্রয়োজনীয় মূল্যবোধ নিয়ে বড় হয়েছি। ওর সেই শিক্ষায় যেন কোনও গণ্ডোগোল না থাকে,তার দিকে নজর রাখব। বাকিটা ঈশ্বরের উপর আর সময়ের উপর ছাড়লাম।