বহুদিনের অপেক্ষা, অবশেষে Disney+ Hotstar-এ মুক্তি পেতে চলেছে 'দ্য স্টোরিটেলার'। পরিচালনায় অনন্ত মহাদেবন। কিংবদন্তি সত্যজিৎ রায়ের ছোটগল্প 'তারিণীখুড়ো' অবলম্বনে ছবিটি বানিয়েছেন অনন্ত। সম্প্রতি সেবিষয়েই তিনি কথা বললেন Hindustan Times Bangla-র সঙ্গে।
পরিচালক, চিত্রনাট্যকার, নাট্য ব্যক্তিত্ব অনন্ত মহাদেবন অবশ্য কলকাতায় এসেছিলেন সম্পূর্ণ একটি অন্য কারণে। তাঁর এই শহরে আসার কারণ নাটক 'নাথুরাম গডসে কো মরনা হোগা'। যেটি কিনা জাতীয়স্তরে প্রশংসিত একটি নাটক। সম্প্রতি ‘অনামিকা কলা সঙ্গম’-এর উদ্যোগে কলকাতার কলামন্দিরে এই নাটকটি উপস্থাপিত হয়। আর এই নাটকে কেন্দ্রীয় চরিত্রে অভিনয় করেছেন অনন্ত। আর সেকারণেই তাঁর কলকাতায় আসা। আর কলকাতায় এসে এই নাটকের পাশাপাশি তিনি কথা বললেন তাঁর মুক্তি পেতে চলা হিন্দি ছবি ‘দ্য স্টোরিটেলার’ নিয়েও।
কলকাতায় 'নাথুরাম গডসে কো মরনা হোগা' নাটকের মঞ্চায়ন, কেমন অভিজ্ঞতা?
অনন্ত মহাদেবন: দারুণ একটা অভিজ্ঞতা। আসলে এই নাটকে মহাত্মা গান্ধীর ভাবনার সম্পূর্ণ বিপরীত একটা দিক তুলে ধরা হয়েছে। এই নাটকের বিষয়বস্তুই এটা যে নাথুরাম গডসে মহাত্মা গান্ধীকে কেন হত্যা করেছিল? এখানে নাথুরাম চরিত্রটি তাঁর সপক্ষে যুক্তি সাজিয়েছেন।
গান্ধীর নীতি, আদর্শে বিষয়টি আমরা সকলেই জানি, ওঁর ভাবনাও জানি। কিন্তু নাথুরাম গডসে কেন মেরেছিলেন? তার কী কারণ ছিল? ওঁর তরফে কী ব্যাখ্যা রয়েছে? এই নাটকের বিষয়বস্তুই আসলে সেটা। আর এই নাটকে জীবনে আমি প্রথমবার মহাত্মা গান্ধীর চরিত্রে অভিনয় করার সুযোগ পাই। এটা অবশ্যই একটা চ্যালেঞ্জ। কারণ, গান্ধীর মতো বডি ল্যাঙ্গুজ, গলার আওয়াজ, সেগুলিকে তুলে ধরা কিছুটা কঠিন তো বটেই। আবার একই সঙ্গে আমি গান্ধীর ছেলে দেবীদাস মোহনদাস গান্ধীর চরিত্রেও চরিত্রেও অভিনয় করেছি। নাটকে যিনি কিনা নাথুরামের সঙ্গে দেখা করতে এসেছিলেন, তখন ওঁর সঙ্গে তর্ক-বিতর্ক হয়।
আমি ৪০ বছর ধরে থিয়েটার করছি। তবে এটা সত্যিই অন্য অভিজ্ঞতা। একদিকে আমি মহাত্মা গান্ধী, আবার ১৫ মিনিট পরই আমি মেকআপ বদলে অল্পবয়সীর চরিত্রে অভিনয় করা একটা চ্যালেঞ্জও বটে। নাটকে এই যে বিরোধ, সেটা তুলে ধরাটা আমার কাছে গুরুত্বপূর্ণ ছিল। কলকাতায় এসে এখানকার দর্শকদের সামনে এটা মঞ্চস্থ করে ভালোই লাগল।


আপনার ছবি 'দ্য স্টোরিটেলার' মুক্তি পাচ্ছে, সত্যজিৎ রায়ের 'তারিণীখুড়ো' অবলম্বনে…
অনন্ত মহাদেবন: হ্য়াঁ, ২৮ জানুয়ারি Disney+ Hotstar-এ ছবিটি মুক্তি পাচ্ছে 'দ্য স্টোরিটেলার'। 'গল্প বলিয়ে তারিণীখুড়ো', সত্যজিৎ রায়ের এই ছোটগল্পের উপর ভিত্তি করে আমি হিন্দি ছবি বানিয়েছি। যেখানে পরেশ রাওয়াল, আদিল হুসেন, রেবতী রয়েছেন কেন্দ্রীয় চরিত্রে। কলকাতাতেই শ্যুটিং করেছি ছবিটির। সন্দীপ রায়ের থেকে স্পেশাল পারমিশন (অনুমতি) নিয়ে, রাইটস কিনে তবেই ছবিটা বানিয়েছি। এই ছবিটি আন্তর্জাতিক স্তরেও প্রশংসিত। ‘বুসান আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসব’-এ এই ছবির প্রিমিয়ার হয়েছে। ‘পাম স্প্রিং আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসব’এও ছবিটি দেখানো হয়। দেশে ইফি বা আইএফএফআই গোয়া এবং কেরালার আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবেও ছবিটি দেখানো হয়। ছবিটি প্রশংসাও পেয়েছে। আর এবার সকলেই চাইলে এই ছবিটি দেখতে পাবেন।
সত্যজিৎ রায়ের ছোটগল্প অবলম্বনে সিনেমা, গল্পটা সম্পূর্ণ এক নাকি কিছু বদল আছে?
অনন্ত মহাদেবন: সিনেমার প্রয়োজনে কিছু পরিবর্তন তো করতেই হয়েছে। কারণ এটা তো ছোট গল্প ছিল। তাই সিনেমাটা বাড়াতে কিছু ফ্ল্যাশব্যাকের মাধ্যমে কিছু কিছু বিষয় আনা হয়েছে। তবে গল্পটা পুরো এক, একই আদলেই ছবিটা বানিয়েছি। এটা ১ ঘণ্টা ৫০ মিনিটের একটা ফিচার ফিল্ম।
মানিকদা (সত্যজিৎ রায়)র মৃত্যুর পর এটাই প্রথম ছবি যেটা ওঁর নামেই মুক্তি পেতে চলেছে। ওঁর মতো কিংবদন্তির প্রতি শ্রদ্ধা জানাতেই এটা বানিয়েছি। যে ভাবনা নিয়ে, সহজভাবে উনি সিনেমা বানাতেন, গল্প বলতেন, সেটা মাথায় রেখেই ছবিটা বানিয়েছি। এটা যেন কারোর দেখে একবারও না মনে হয়, সত্যজিৎ রায়ের গল্প নিয়ে এটা কী বানিয়েছেন! ছবি দেখে দর্শকদের যেন মনে হয়, যদি মানিকদা এই ছবিটা বানাতেন, তাহলে হয়তবা এভাবেই বানাতেন। সেটা মাথায় রেখেই এটা করা।
এই ছবিতে কলকাতার অনেক অভিনেতাও কাজ করেছেন…
অনন্ত মহাদেবন: ‘হ্য়াঁ, অবশ্যই, যেহেতু গল্পটা সত্যজিৎ রায়ের, তাই উনিও চাইতেন ওঁর ছবিতে কলকাতার অভিনেতারা কাজ করুন। আর এতে গল্পের সত্যতাও বজায় থাকে। তাই প্রধান তিন অভিনেতা ছাড়া বাকি সকলেই কলকাতার অভিনেতা-অভিনেত্রী।’
প্রসঙ্গত, এই ছবিতে অনিন্দিতা বোস, তন্নিষ্ঠা চট্টোপাধ্য়ায়, সেঁজুতি রায় মুখোপাধ্যায়, কাবেরী বসু, প্রতীক দত্ত, রোহিত মুখোপাধ্যায় সহ আরও অনেক বাঙালি অভিনয় করেছেন।