আর ২৪ ঘণ্টাও বাকি নেই সৃজিত মুখোপাধ্যায় পরিচালিত সত্যি বলে সত্যি কিছু নেই ছবিটি মুক্তি পেতে। তার আগে এই ছবির শ্যুটিংয়ের অভিজ্ঞতা থেকে রাজুদা বিতর্ক সহ অন্যান্য কাজ নিয়ে খোলামেলা আড্ডায় হিন্দুস্থান টাইমস বাংলাকে কী জানালেন অনির্বাণ চক্রবর্তী?
এক রুকা হুয়া ফ্যায়সলা ছবির অবলম্বনে তৈরি হয়েছে সত্যি বলে সত্যি কিছু নেই, কিন্তু ট্রেলার দেখে তো ঠিক কোর্টরুম ড্রামা মনে হচ্ছে না। সেটা কি ঠিক?
অনির্বাণ: হ্যাঁ, ঠিকই। আসলে অরিজিন্যাল টেক্সট যেটা, সেখানে একটা কেস নিয়ে সিদ্ধান্তে আসার জন্য ১২ জন্য জুরি সদস্যকে ডাকা হয় যাতে তারা এটা নিয়ে আলোচনা করে একটা কমন সিদ্ধান্তে আসতে পারে যে রায় কী হবে। ভারতে তো জুরি ব্যবস্থা নেই। এখানে তাই ওই জুরি ব্যাপারটা দেখালে সেটা বিশ্বাসযোগ্য হতো না। সেজন্য সৃজিত এটাকে অন্যভাবে অ্যাডাপ্ট করেছে। আসল টেক্সটে যে কেস আছে, সেটা নিয়েই কথা হচ্ছে এখানেও, কিন্তু ১২ জন জুরি সদস্যের বদলে ১২ জন বিভিন্ন ধরনের মানুষকে নেওয়া হয়েছে যাঁদের ভাষা আলাদা, পেশা আলাদা, রাজনীতির বোধ আলাদা, সংস্কৃতির পার্থক্য আছে, পুরুষ-মহিলা আছে। যতরকম ভাবে আলাদা করা যায় আর কী, যাতে বিভিন্ন রকমের মত উঠে আসতে পারে এবং সেগুলোতে ক্ল্যাশ হতে পারে। সেটাই ও করেছে।
আরও পড়ুন: ঢেউয়ে চেয়ার উল্টে গেছিল, সেটা তোলার পর দেখা গেল তার নিচে কাঞ্চনদা: সুহোত্র
আপনার চরিত্রটা নিয়ে যদি জানান।
অনির্বাণ: আমার চরিত্রের নাম গৌরাঙ্গ আগরওয়াল। নাম শুনেই বুঝতে পারছেন অবাঙালি। পেশায় ব্যবসায়ী। নিজেকে তিনি কলকাতার মানুষ বলেই মনে করেন, কিন্তু তাঁর অরিজিন আলাদা, সংস্কৃতি আলাদা, বাংলা ভাষাটাও রপ্ত করতে পারেননি পুরোপুরি। নিজেকে সে আলাদা রাখতে চায় এমনটা নয়, আবার চেষ্টা করার পরও বাঙালি হয়ে উঠতে পারেনি।
একসঙ্গে ১২ জন মিলে কাজ করলেন। শ্যুটিংয়ের অভিজ্ঞতা কেমন?
অনির্বাণ: অনন্যা চট্টোপাধ্যায় এবং কৌশিক গঙ্গোপাধ্যায় ছাড়া এখানে বাকি সবার সঙ্গে আমি এর আগে অভিনয় করেছি। এখানে আমাদের রোজকার শ্যুটিংয়ের অভিজ্ঞতার থেকে একেবারে আলাদা পদ্ধতি শ্যুটিং হয়েছিল। সৃজিত বলেছিল এই পুরো জিনিসটার রিহার্সাল করে নিতে। নাটকের মতো পুরো সিন সিনেমায় রিহার্সাল হয় না। যখন যে সিনের শ্যুট হয় তখন সেই সিনে যাঁরা আছেন তাঁরা আলোচনা করেন বা কথা বলে নেন। কিন্তু সিনেমার স্ক্রিপ্ট ধরে রিহার্সাল হয় না। সৃজিত সেটায় জোর দিয়েছিল। আমাদের যেহেতু এটা অভ্যাসের বাইরে, তাই শুরু শুরুর দিকে মনে হতো আবার কয়েকটা দিন এক্সট্রা বার করতে হবে, বা এটা না করলে কী হতো। কিন্তু শ্যুটিংয়ে গিয়ে বুঝলাম ও যে পদ্ধতিতে শ্যুট করবে ভেবেছিল সেটার জন্য এই রিহার্সাল দরকার ছিল। একটা গোটা সিন আমরা একবারে শ্যুটিং করেছি। আমার হয়তো একটা সংলাপ আছে গোটা সিনে কিন্তু তাও ফ্লোরে থাকতে হতো। ১২ জন সবসময় একসঙ্গে ফ্লোরে থাকতাম। পদ্ধতিগুলি নতুন ছিল, কিন্তু রিহার্সাল হয়েছিল বলে আমরা সবাই মোটামুটি তৈরি ছিলাম। শ্যুটিংয়ের অভিজ্ঞতা খুবই ভালো।
সুহোত্রর থেকে শুনলাম কিছু ক্ষেত্রে বেশ কষ্ট হয়েছে, সমুদ্রে শ্যুটিংয়ের ক্ষেত্রে আবার নানা মজার ঘটনাও ঘটেছে।
অনির্বাণ: হ্যাঁ, শ্যুটিংয়ের সময় খুবই কষ্ট হয়েছে, তখন একদমই ভালো লাগছিল না। প্রচণ্ড গরম ছিল তখন। টানা দুদিন গলফ কোর্সে শ্যুটিং হয়েছিল, ওই দুদিন যতক্ষণ রোদ আছে, ততক্ষণ লাঞ্চের সময়টুকু বাদ দিয়ে বাইরে ঠায় ১২ জনকে থাকতে হয়েছে। কখনও গড়িয়াহাট ব্রিজে সারারাত শ্যুট করেছি। সমুদ্রের উপর বা জঙ্গলের মধ্যে করেছি শ্যুটিং। থিয়েটারের মধ্যে শ্যুট করেছি। খুব সমস্যাজনক ছিল। কোনওটাই খুব সুখকর হয়নি। একমাত্র যেদিন এসি থিয়েটারে শ্যুটিং হয় সেদিন মনে হয়েছিল একটা বিরাট কিছু অর্জন করে ফেলেছি। এত এমন অভিজ্ঞতার মধ্যে দিয়ে তখন যাচ্ছিলাম থিয়েটার হলের শ্যুটিংটা স্বস্তিদায়ক ছিল। আর....
কী?
অনির্বাণ: সমুদ্রে যখন শ্যুটিং হয় তখনও খুব গরম। খুব রোদ, নোনা আবহাওয়া। তার মধ্যে সারাদিন বসে থাকতে হতো। সৃজিত চেয়েছিল যাতে আমাদের বারোটা চেয়ার কোমর অবধি জলে থাকে। যখন শ্যুট শুরু করতাম সকালে তখন পাড়ের কাছে জল। বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে সমুদ্র পিছিয়ে যেত, আমরাও চেয়ার নিয়ে এগোতাম। সে মাঝ সমুদ্রে চলে যাওয়ার মতো অবস্থা। মাঝে মাঝে বড় বড় ঢেউ আসত, চেয়ার উল্টে যেত। যাঁদের ওজন কম তাঁরা কেউ ভেসে যেত, তো কারও চেয়ার উল্টে যেত, তার তলা থেকে কাউকে পাওয়া যেত। কাঞ্চনকে অমন পাওয়া গেছিল। রাহুল ভেসে যাচ্ছিল। কারও আবার চেয়ার ডেবে যাচ্ছিল বালিতে। একটা সময় আমরা ডেসপারেট হয়ে গেছিলাম যে যা হয় হোক, আর কত হবে, হোক। ওটাই শ্যুটিংয়ের লাস্ট ফেজ ছিল, দুর্দান্ত কষ্ট হয়েছিল। এখন দেখে ভালো লাগছে, যখন ডাবিং করতে গেছিলাম, দর্শকদেরও ভালো লাগবে আশা করি। কিন্তু আমাদের প্রচণ্ড কষ্ট হয়েছিল।
সত্যি বলে সত্যি কিছু নেই কথায় বিশ্বাস করেন?
অনির্বাণ: হ্যাঁ, বিশ্বাস করি। সত্যি ব্যাপারটা আপেক্ষিক। ছোটবেলায় ‘সত্যি’ নিয়ে আমাদের এক রকম ধারণা ছিল। পরে, বয়স হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে বুঝেছি একই ঘটনার আলাদা আলাদা দেখার দিক হতে পারে। আর যে যেভাবে দেখছে সেটাই তার কাছে সত্যি হতে পারে। ধ্রুব সত্য বলে কিছু জিনিস হয়। সব জিনিস হয় না।
আপনার কাছে ধ্রুব সত্য কী?
অনির্বাণ: জন্ম যদি হয়, মৃত্যু হবেই। মাঝে জীবনে অনেক কিছু আমরা টার্গেট করতে পারি, আকাঙ্খা হতে পারে। সেগুলো ঘটতে পারে, নাও পারে। নিশ্চিত নয়। কিন্তু তুমি চাও, বা না চাও সেটা হবেই, বা একমাত্র নিশ্চিত জিনিস হল মৃত্যু। নশ্বর না কিছু। যার সৃষ্টি আছে, তার বিনাশ আছে। মানুষের তৈরি কিছুও চিরকাল থাকে না।

অপরিচিত নিয়ে কেমন সাড়া পাচ্ছেন? একেনেরও তো ট্রেলার বেরিয়ে গেছে। রেসপন্স কেমন?
অনির্বাণ: অপরিচিত ছবিটা খুব কম হলে রিলিজ হয়েছে, কম শো পেয়েছে। অদ্ভুত শোটাইম পেলে দর্শকরা দেখবেন কী করে। খুব বেশি মানুষ জানতেও পারেননি। তবে যাঁরা দেখেছেন তাঁদের ফিডব্যাক কিন্তু খুব ভালো। এটা থ্রিলার হলেও ধীর গতির, বা গল্পটাও আলাদা সেই হিসেবে দর্শকদের ভালো লেগেছে। পুরোপুরি একেনের ট্রেলার দর্শকদের ভালো লেগেছে। এই সিরিজের একটা আলাদা অনুরাগী আছেন। সেই জন্যই ৬ বছরে ১০ নম্বর কাজ আসছে একেন বাবুর। আমি জানি ২৩ তারিখ এটা রিলিজ করবে, আর তার পরের দিনই দর্শকরা জিজ্ঞেস করবেন পরের সিজন কবে আসবে? সেটা খুবই আনন্দের আমাদের জন্য। সত্যি বলে সত্যি কিছু নেই নিয়েও দর্শকদের মধ্যে আগ্রহ আছে যে কীভাবে অ্যাডাপ্ট করা হয়েছে বিষয়টা। মূল যে টেক্সট সেটা একটা ঘরের মধ্যে ঘটে, আর সেটা দমবন্ধকর একটা জায়গা। কিন্তু খোলা জায়গায় থেকেও তো দমবন্ধ লাগতে পারে সেটা কিন্তু এই ছবিতে আছে। এটা একটা অদ্ভুত বৈপরীত্য যেটা সৃজিত দেখাতে পেরেছে যে খোলা জায়গাতেও পরিস্থিতির জন্য দমবন্ধ লাগতে পারে।
রাজু দাকে নিয়ে যে বিতর্ক সেটা....
অনির্বাণ: অনেকেই না জেনে বলেছেন ‘কেন ওকে সিরিজে নেওয়া হল’, ‘কেন এমন হল?’ পরে যখন জানলেন এটা প্রমোশন তখন কেউ সমর্থন করেন, কেউ আবার বিরোধিতা করেন। কিন্তু প্রমোশন তো যাঁরা ট্রেন্ডিংয়ে থাকেন, পরিচিত হন তাঁদের দিয়েই করানো হয়। আমরা তো বিভিন্ন ছবির প্রচারের জন্য বিভিন্ন ক্যাফেতে যাই, সেখানকার মালিকের সঙ্গে কখনও আলাপ করাই, সেই ক্যাফের কথা বলি। তাহলে একজন মানুষ যিনি রাস্তায় কচুরি বিক্রি করেন তাঁকে দিয়ে কেন প্রচার করানো যাবে না? তিনি তো তাঁর নিজের পরিচয়েই প্রচার করেছেন। তিনি পরোটা বিক্রেতা রাজুদা, প্রমোশনেও তাই আছেন, আলাদা কোনও চরিত্রে তো অভিনয় করেননি। এতে এত গেল গেল করার কি আছে সেটাই বুঝিনি। আর তাঁকে তো ভাইরাল জনগণই করেছে।
আরও পড়ুন: পারফর্ম করতে উঠে আচমকাই অসুস্থ হয়ে পড়েন মোনালি, ভর্তি করতে হয় হাসপাতালেও! কেমন আছেন এখন?
অপরিচিত যে হল কম পেয়েছে বললেন, এটা কি কম প্রমোশনের জন্য? প্রচার যত বেশি হল বা শো সংখ্যা তত বাড়ে বলেই কি মনে করেন না?
অনির্বাণ: হ্যাঁ, এটা তো ঠিকই যে প্রমোশন আরও দরকার ছিল। প্রচুর মানুষ জানত পারেননি ছবিটার কথা। প্রচার করাটা খুব জরুরি। আর যার কাছে প্রচারের যতরকম অস্ত্র রয়েছে সে তো সেটা ব্যবহার করবেই। সবাই চান প্রচার করতে, কিন্তু কখনও সামর্থ্য, সাধ্যের ব্যাপার থাকে।