দাঁড়িয়ে রয়েছে একেরপর এক লাশবাহী ফ্রিজিং গাড়ি। ঢাকার রাজারবাগ এলাকা থেকে কাঁদতে কাঁদতে ভিডিয়োটি তুলেছেন কোনও এক ব্যক্তি। কাঁদতে কাঁদতে তাঁকে বলতে শোনা গেল, 'সবাই দেখুন রাজারবাগ সিরুমিয়া থেকে, যেসমস্ত পুলিশ ভাইয়েরা মরছে, তাঁদের সবার লাশ নিয়ে আসা হয়েছে…আপনারা রক্তের সঙ্গে বেইমানি করবেন না ভাই…'।
ভিডিয়োটি উঠে এসেছে বাংলাদেশের নামী অভিনেত্রী জ্যোতিকা জ্যোতির ফেসবুকের পাতায়। ঠিক কী ঘটেছে? বাংলাদেশে এই মুহূর্তে কী পরিস্থিতি? এবিষয়ে জানতে সরাসরি Hindustan Times Bangla-র তরফে যোগাযোগ করা হয়েছিল অভিনেত্রী জ্যোতিকা জ্যোতির সঙ্গে। এরপরই বাংলাদেশের সামগ্রিক বিষয় নিয়ে মুখ খোলেন নির্ভিক জ্যোতিকা।
জ্যোতিকা বলেন, ‘এই দেহগুলি সবই নিম্ন পদস্থ পুলিশ আধিকারিকদের। তাঁরা ৯ দফা দাবিতে কর্মবিরতিতে গিয়েছেন। আসলে সরকার পরিবর্তনের পর তাঁদের উপর হামলা হয়েছিল, অত্যাচার চলেছিল। এই হামলার মূল শিকার উচ্চ পদস্থ আধিকারিকরা কিন্তু নন, নিচুতলার পুলিশ কর্মীরাই আক্রান্ত হচ্ছেন। অনেকে হাসিনা সরকারের গণহত্যার কথা বলছিলেন, গণহত্যা কিন্তু তখন হয়নি, ওঁর পদত্যাগ করার পর সেদিন ঘটেছিল। বহু মানুষের মৃত্যু হয়। হিন্দু মহিলাদের উপর অত্যাচার তো চলছেই। তবে শুধু হিন্দু নয়, বহু সাধারণ মানুষও তো অত্যাচারিত। নতুন সরকার গঠনের আগে কয়েকদিন আতঙ্কে কেটেছে। আর এখন যেটা হচ্ছে সেটা লুটপাট আর ডাকাতি।'
জ্যোতিকা বলেন, 'কী ভয়ঙ্করভাবে অত্যাচার হচ্ছে, তার উদাহরণ হিসাবে যদি বলি, গত ৮ অগস্ট নোয়াখালিতেই দুলাল চন্দ্র পাল নামে এক ব্যক্তির মেয়েকে তুলে নিয়ে যেতে দেখা গিয়েছে। সোশ্যাল মিডিয়ায় দেখেছি ভিডিয়োটা। আমার প্রশ্ন, কেন মেয়েটিকে তুলে নিয়ে যাওয়া থেকে কেউ আটকাতে পারলেন না? কেউ বাধা দিতে পারলেন না? ওখানে কী কেউ ছিলেন না? যদিও পরে সেনা ওই মেয়েটিকে উদ্ধার করে।'
অনেকে ছবি পোস্ট করছেন, ইসলাম ধর্মালম্বী মানুষকে হিন্দু মন্দির পাহারা দিতে দেখা যাচ্ছে? সেবিষয়ে কী বলবেন?
এই প্রশ্নের উত্তরে জ্যোতিকা বলেন, ‘পাহারাই বা দিতে হবে কেন? দেশটা তো সবার। এমন পরিস্থিতি তৈরিই বা কেন হবে যে পাহারা দিতে হবে! আর যেটা দেখছেন সেটাও আসলে আইওয়াশ। পাহারা যেগুলোতে দেওয়া হয়েছে, সেগুলো না হয় ঢাকা কিংবা সংলগ্ন এলাকায়। বাকি বাংলাদেশের গ্রামেগঞ্জে পাহারা ছিল না। সেখানে তাই মানুষজন অত্যাচারিত হয়েছেন। শুধু হিন্দু নয়, বহু মুসলিম ধর্মালম্বীও যাঁরা সরব হয়েছে, তাঁদের উপর অত্যাচার হয়েছে। অনেক জায়গায় আবার যাঁরা পাহারা দিচ্ছেন, তাঁরাই পরে লুঠপাঠ চালাচ্ছেন।’
জ্যোতিকা বলেন, ‘আসলে জামাত কিন্তু শুধু হিন্দু নয়, যেসমস্ত মুসলিম ধর্মালম্বী এর বিরোধিতা করছেন, আওয়াজ তুলছেন তাঁদেরকেও মেরেছে। জামাতরা আসলে দেশদ্রোহী। ওরা শুধু হিন্দু নয়, সব ধর্মের মানুষদের উপরই চড়াও হয়। এছাড়া মূর্তি ভাঙার ঘটনা তো সকলেই জানেন। সত্যিই দেশকে ভালোবাসলে নিজের দেশ ও দেশবাসীর এত ক্ষতি কি কেউ করে নাকি! হাসিনা যতদিন ছিলেন দেশকে আগলে রেখেছিলেন। আসলে যতদূর খবর পেয়েছি বা শুনছি, সবই মার্কিন ইন্ধনে ঘটল। সুন্দর একটা দেশকে শেষ করে ফেলতে চক্রান্ত করা হল। পরিকল্পনা করে দেশে গৃহযুদ্ধ লাগিয়ে দেওয়া হল। হাসিনা আগলে রেখেছিলেন, শেষপর্যন্ত পারলেন না। ছাত্র আনন্দোলনকে ঢাল করা হল। ছাত্রদের দাবি তো মেনেই নেওয়া হয়েছিল। আসলে এটা ঘটানোর জন্যই কলকাঠি নাড়া হল। আজ বহু মানুষ কিন্তু হাসিনার জন্যই চোখের জল ফেলছেন, কাঁদছেন। তাঁরা বুঝতে পারছেন, কিন্তু তাঁদের এখন কিছুই করার নেই।
জ্যোতিকার কথায়, ‘হাসিনা কোনও গণহত্যা করেননি। বিষয়টাকে ভুলভাবে তুলে ধরা হচ্ছে। দেশে রাষ্ট্র বিরোধিতা হলে, সেটাকে থামানোর জন্য পদক্ষেপ করা তো হবেই। হাসিনার পদত্যাগের পর সেদিন যে গণহত্যা হয়েছে, সেই খবর দেশের বহু মানুষের কাছে পৌঁছোয়ও নি। এখানকার বহু সংবাদমাধ্যমগুলোও সঠিক তথ্য তুলে ধরছে না’
শেষ হাসিনা নাকি পদত্যাগ করেননি, ওঁর ছেলে এমনটা দাবি করেছেন, আপনার কি মনে হয় উনি আবারও দেশে ফিরবেন?
জ্যোতিকার উত্তর, ‘আমি যতদূর ওঁকে জানি, উনি নিশ্চয় ফিরবেন। দেশ ওঁর প্রাণ। উনি পদত্যাগ করেননি। শুনেছি, উনি বলেছিলেন, তাঁকে প্রয়োজনে গুলি করা হোক, আর দেহ যেন ওঁর বাবার (শেখ মুজিবুর রহমান) পাশে কবর দেওয়া হয়। তবে শেষমূর্তে ওঁর বোন ভেঙে পড়েছিলেন, কান্নাকাটি করছিলেন, তাই ওঁর ছেলে ও মেয়েদের কথায়, উনি দেশ ছাড়েন। কারণ, ওঁর সন্তানরা ওঁকে দেশ ছাড়ার জন্য বুঝিয়েছিল। উনি পদত্যাগ করলে তো এতক্ষণে পদত্যাগ পত্র সকলের সামনে আসত। উনি শুনেছি, একটা ভাষণ রেকর্ড করতেও চেয়েছিলেন, তবে ওঁর হাতে সেই সবকিছুর জন্যই সময় ছিল না। ৪৫ মিনিটের মধ্যে ওঁকে দেশ ছা়ড়তে বলা হয়। উনি তো রেডি হওয়ার সময়টুকুও পাননি।’
বাংলাদেশে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান হিসাবে দায়িত্ব নিয়েছেন মহম্মদ ইউনুস, তাঁকে নিয়ে কী বলতে চান?
জ্যোতিকা বলেন, ‘হ্য়াঁ, উনি দায়িত্ব নিয়েছেন। উনি যদি পরিস্থিতি সামলে বাংলাদেশে আবারও শান্তি ফিরিয়ে আনতে পারেন, তাহলে শুভেচ্ছা রইল।'