১০ বছরের হারের জ্বালা মিটল বাংলার! রবিবার রাতে তিরুবনন্তপুরমের ২২ গজে ব্যাট-বল হাতে সোনালি ইতিহাস লিখল বাংলার রুপোলি পর্দার নায়করা। সেলিব্রিটি ক্রিকেট লিগ ২০২৪-এর ট্রফি উঠল যিশু সেনগুপ্তের নেতৃত্বাধীন বেঙ্গল টাইগার্সের হাতে। রুদ্ধশ্বাস ফাইনালে ১৩ রানে কিচ্চা সুদীপের কর্নাটক বুলডোজারকে হারিয়ে চ্যাম্পিয়ান বাংলা।
বেঙ্গল টাইগার্সের এই জয়ের অন্যতম কাণ্ডারি হর গৌরি পাইস হোটেলের শঙ্কর মানে অভিনেতা রাহুল মজুমদার। টুর্নামেন্টের সেরা খিলাড়ি নির্বাচিত হয়েছেন রাহুল। সিসিএলের সদ্য সমাপ্ত মরসুমে সর্বোচ্চ ১৫টা উইকেট নিয়েছেন রাহুল, অন্যদিকে ৩২১ রান এসেছে তাঁর ব্যাট থেকে। দ্বিতীয় সর্বোচ্চ রান স্কোরার তিনি। ম্যাচ জয়ের উচ্ছ্বাস এখনও থামেনি। তিরুবন্তনপুরম থেকেই টেলিফোনে হিন্দুস্তান টাইমস বাংলাকে জানালেন মনের অনুভূতি।
ফোন করতে খানিক ঘুম জড়ানো গলায় উত্তর এল। রাহুল বললেন, ‘আজ ভোর পাঁচটা অবধি আমরা পার্টি করেছি। এখনও স্বপ্নের মতো লাগছে। দারুণ অনুভূতি। গত বছর অনেক আশা নিয়ে এসেছিলাম কিন্তু সেভাবে পারফর্ম করতে পারিনি, এবার সোজা ম্যান অফ দ্য টুর্নামেন্ট, আমি যে দলের কাজে আসতে পেরেছি সেটা ভেবে ভালো লাগছে’।
ম্যাচ জয়ের পর যিশু সেনগুপ্ত কেঁদে ভাসিয়েছেন। চোখের কোণে জল সবার। রাহুল বললেন, ‘কাল সবাই কেঁদেছে। কেউ নেই যে কাঁদেনি। কোচ, ক্যাপ্টেন, ফিজিও সবাই কেঁদেছে। বনি (কাপুর) স্যার (বেঙ্গল টাইগার্সের মালিক) খুব খুশি।’
দ্বিতীয় ইনিংসে যখন কর্নাটকের ২৪ বলে ৪১ রান বাকি ছিল, তখন তো আমাদের হাত থেকে প্রায় ম্যাচ বেরিয়ে গিয়েছিল। আমি তখন যিশুদাকে নিজে গিয়ে বললাম, অনেক হয়েছে আমাকে বলটা দাও। আমি সাধারণত এমন বলি না, কিন্তু কাল বলেছি। তারপর যখন দুটো দুর্দান্ত ওভার করলাম, ম্যাচের মোড়টা ফের ঘুরে যায়। শুরু থেকেই আমরা চেয়েছিলাম যিশুদার জন্য কাপটা জিততে চেয়েছি, ১০ বছর ধরে খেলছে যিশুদা প্রত্যেক বছর শুধু হেরেছে।'
রবিবার রাতে ‘আন্ডারডগ’ হিসাবেই শুরু করেছিল বাংলা। দ্বিতীয় কোয়ালিফায়ারে মুম্বইকে হারানোর পর ফাইনালে কর্নাটকের মুখোমুখি। রবিবারের আগে পর্যন্ত সিসিএলের ইতিহাসে কোনওদিন শক্তিশালী কর্নাটককে হারাতে পারেনি বেঙ্গল টাইগার্স। রাহুল বললেন, ‘লোকজন ভাবত বেঙ্গল টাইগার্সের সঙ্গে খেলা মানেই ২ পয়েন্ট। ওরা খেলতে পারে না, আমাদের সেই নজরে দেখত সবাই। সেখান থেকে ঘুরে গিয়ে চ্যাম্পিয়ান হওয়া…সব থেকে বড় কথা সিসিএলের ইতিহাসে আমরা প্রথমবার কর্নাটককে হারালাম, সেটা স্বপ্নপূরণ বলতে পারো’।
রাহুলের এই যাত্রাপথে সারাক্ষণ পাশে থেকেছেন তাঁর বেটারহাফ, অভিনেত্রী প্রীতি বিশ্বাস। তাঁকেও ধন্যবাদ জানাতে ভুললেন না। বললেন, ‘ও তো শুধু কেঁদেই গেছে আমার প্রত্যেক অ্যাচিভমেন্টের পর, সত্যি প্রীতি এবং বাকি সবাই যেভাবে আমাদের সাপোর্ট করেছে। মাঠে আমাদের সমর্থক সংখ্যা প্রতিপক্ষের থেকে কম থাকলেও ওরা সেটা বুঝতে দেয়নি’।
একটা সময় পেশাদার ক্রিকেট খেলতেন রাহুল, তবে লিগামেন্টের চোটের পর ৮ বছর মাঠে নামেননি। ২০২২ সালে যিশু সেনগুপ্তের অনুপ্রেরণাতেই সিসিএলের ট্রায়ালে যোগদান। রাহুল বললেন, ‘যিশুদাই আমাকে বলেছিল ট্রায়ালে যেতে,আমার কাছে কোনও (ক্রিকেট) কিট ছিল না। অন্যের ব্যাটে খেলেছিলাম। পরে যিশুদা আমাকে সব দেয়’।
এই বছর মরু শহর শারজায় শুরু হয়েছিল সিসিএলের সফর। শারজার ঐতিহাসিক মাঠে খেলার সুযোগ পেয়েছেন রাহুল-যিশুরা। সেই ঘোর কাটেনি অভিনেতার। বললেন, ‘আমরা যে যে মাঠে খেলার সুযোগ পেয়েছি নতুন করে কী বলব! শুরুটাই হয়েছে শারজার মাঠে, আমি তো ওখানে খেলতে নেমে দু-মিনিট ব্ল্য়াঙ্ক হয়ে গিয়েছিলাম। চোখের সামনে সচিনের সব সোনালি ইনিংসগুলো ভাসছিল। চণ্ডীগড়ের মাঠে যখন নামলাম মনে এল বিরাটের বাউন্ডারির কথা। আমরা সত্যিই কৃতজ্ঞ সিসিএলের সুবাদে এই সুযোগটা পাওয়ার জন্য।’
সোমবার বিকালে শহরে পা দিচ্ছ টিম বেঙ্গল টাইগার্স। মঙ্গলবার ফের সময়মতো হরগৌরী পাইস হোটেলের সেটে ফিরতে হবে রাহুলকে।