চিরঞ্জিত চক্রবর্তী। বাংলা সিনেমার সুপারস্টার। পরপর তিনবারের বিধায়ক। রাজনীতি-সিনেমা দুটো কেরিয়ারকে সমানভাবে ব্যালেন্স করে চলেন। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ঘনিষ্ঠ বৃত্তের লোক হিসেবেই পরিচিত অভিনেতা। দর্শক তাঁকে শেষ দেখেছে ‘দাবাড়ু’ ছবিতে। সম্প্রতি বক্স অফিসে ২৫ দিন পূর্ণ করল এই ছবি। ছবি থেকে রাজনীতি, হিন্দুস্তান টাইমস বাংলার সঙ্গে অকপটে আড্ডা দিলেন অভিনেতা।
ইন্ডাস্ট্রিতে প্রায় সাড়ে চার দশক ধরে টিকে রয়েছেন। এত লম্বা সময় ধরে প্রাসঙ্গিক থাকাটা কতটা চ্যালেঞ্জিং?
চিরঞ্জিৎ: কিছুটা তো কাজ-কম্মর জন্য মনে রেখেছে দর্শক। পাশাপাশি আমি সাধারণ দর্শককে আমি সম্মান দিই, প্রাধান্য দিই। অনেকে সেটা করে না। সেটা দর্শক মনে রাখে। আমার কাছে এই সম্মান করাটা খুব জরুরি। তুমি যাকে সম্মান করবে সে মনে রাখবে।
দাবাড়ু ছবিতে আপনার একটি সংলাপ রয়েছে, ‘এই পৃথিবীকে সাধারণ যাঁরা হয় তাঁদের কেউ মনে রাখে না’, সেটা বিশ্বাস করেন?
চিরঞ্জিৎ: আমি দুজন অসাধারণ মানুষের সান্নিধ্য পেয়েছি। একজন আমার বাবা, আরেকজন স্বনামধন্য সত্যজিৎ রায়। আজও দেখি মানিকদাকে পৃথিবী কীভাবে মনে রেখেছে। আসলে অসাধারণ যাঁরা হয়, তাঁদের মৃত্যু নেই। আমি সিনিয়র পিসি সরকারে সান্নিধ্যও পেয়েছি। বা শিবরাম চক্রবর্তী…. এঁরা জ্যোতিষ্ক, এঁরা চিরস্থায়ী।
ইন্ডাস্ট্রিতে আপনার কাছের বন্ধু কে, আর সবচেয়ে কঠিন প্রতিদ্বন্দ্বী কাকে মনে করেন?
চিরঞ্জিৎ: ইন্ডাস্ট্রিতে সবাই বন্ধু, না হলে তো কাজটা হবে কী করে? কারুর সঙ্গে শক্রুতা নেই। বন্ধু হিসাবে কাউকে বেছে না নিলেও শক্রুতা কারুর সঙ্গে নেই। কিন্তু প্রতিযোগী কাউকেই মনে করি না। আমি আমার মতো কাজ করে গেছি। তাই অনেক কম কাজ করেছি। সেটা না হলে তো অন্যকে হারাতে অনেক বেশি ছবিতে কাজ করতাম, কারুর ছবি কেড়ে নিতাম। সেইরকম মনোভাব আমার কোনওদিন ছিল না। আজও নেই, নিজের কাজ নিজে করে যাই।
প্রসেনজিৎ চট্টোপাধ্যায়ের সঙ্গে আপনার রেষারেষি নিয়ে তো একটা সময় অনেক চর্চা হয়েছে..
চিরঞ্জিৎ: (প্রশ্ন শেষের আগে) এটা মিডিয়ার ব্যাপার। আমাদের দুজনের কেউই এটাকে পাত্তা দিই না। আমার প্রসঙ্গঃ চিরঞ্জিত বলে একটা বই আছে। সেখানে বুম্বা আমাকে নিয়ে লিখেছিল, সেটা পড়লেই সকলে বুঝবেন ও আমাকে কতটা ভালোবাসে-শ্রদ্ধা করে। আমিও ওকে ভালোবাসি।
দেব-জিতের পর বাংলা ইন্ডাস্ট্রিতে সুপারস্টার তৈরি হচ্ছে না, এমনই অভিযোগ। এটা নিয়ে ইন্ডাস্ট্রির সিনিয়র সদস্য হিসাবে কী বলবেন?
চিরঞ্জিৎ: ক্রাইসিস তো অনেকদিন ধরেই চলছে। হাউস ছিল ৭৫০ আমাদের সময়। এখন সেটা ৪০টা হয়ে গেছে, ফলে সিনেমা দেখার হল নেই। সিনেমা দেখার মতো দর্শকও খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। হল না থাকলে বেশি লোক, মানে লক্ষ লক্ষ লোক ছবি না দেখলে স্টার তো তৈরি হবে না। সেটাই সমস্যা। একটা আরেকটাকে রেসিপ্রোকেট করে। সেইজন্যই স্টার, সুপারস্টার আর তৈরি হচ্ছে না।
আপনি বেদের মেয়ে জ্যোৎস্নার মতো বাণিজ্যিক ছবিও করেছেন, আবার বাড়িওয়ালি-তেও অভিনয় করেছেন। তারপরেও চিরঞ্জিৎ সুপারস্টার…
চিরঞ্জিৎ: চিরকালই দুই ধারার ছবি পারস্পরিক সহাবস্থান করে এসেছে। বেদের মেয়ে জ্যোৎস্নার মতো বড় হিট ছবি আজ পর্যন্ত হয়নি, ওটা একটা ফেনোমেনা। সেটা নিয়ে কথা না বলাই ভালো। তার থেকে অন্য অনেক সুপারহিট ছিল রয়েছে। উত্তম-সুচিত্রার ছবি যেমন হিট হত, তাঁদের সঙ্গে সত্যজিৎ রায়, মৃণাল সেন, ঋত্বিক ঘটকও রয়েছেন। এটা চিরকালীন প্রসেস। সুপ্রিয়া দেবী তো মেঘে ঢাকা তারাও করেছেন, আবার কর্মাশিয়াল ছবিও করেছেন। এটা আলাদা কিছু নয়।
আপনি তো নিজের এলাকায় সিনেমা হল তৈরির ভাবনা কতদূর এগোল?
চিরঞ্জিৎ: ওটা এখনও হয়নি। ফিনান্সটা সরকারের থেকে এখনও জোগাড় করতে পারিনি। ওটা সুন্দর একটা আইডিয়া। সুনন্দন বা ওইরকম কিছু নাম রাখব ঠিক করেছিলাম। একটা জমি একজন দেবে বলেছিল। থ্রি-ইন ওয়ান হল। একটা কফি হাউস, একটা আর্ট এক্সিবিশনের জন্য গ্যালারি আর একটা হল। সেখানে ওখানকার ট্যালেন্টেড শিল্পীরা পারফর্ম করতে পারত। ছোট একটা হল, হয়তো ২০০ সিটের।
ভোটের পর তারকা রাজনীতিবিদদের নিজের এলাকায় দেখা যায় না, এই অভিযোগটা নিয়ে কী বলবেন?
চিরঞ্জিৎ: আমি যেহেতু চিরকালই কম ছবি করি সেই হিসাবে আমার হাতে সময় থাকে। বেছে করি বলেই আমার হিট পার্সেন্টেজটা বেশি। আর সেই সময়টা আমার নির্বাচনী এলাকায় দিতে পারি। আমি সপ্তাহে দু-দিন নিজের এলাকায় যাই। আগামী ২ বছর পূর্ণ হলে আমি ১৫ বছর বিধায়ক থাকব। সেক্ষেত্রে আমি দেড় হাজার বা দু-হাজার বার নিজের এলাকায় গেছি। অন্যরা সেটা যায় না। যাঁরা নতুন আসছে তাদের বলব, একটু সিনসিয়ারলি কাজটা করতে। এমন নয়, যে সপ্তাহে সাতদিনই যেতে হবে। কিন্তু যেতে হবে। কাজটা একটু মন দিয়ে করতে হবে।
এই বছর লোকসভা নির্বাচনে আপনার একঝাঁক সহকর্মী লড়ছেন, সিনিয়র হিসাবে কী বলতে চাইবেন?
চিরঞ্জিৎ: আগে দু-চার এসেছেন, গ্ল্যামারে জিতে যাওয়া যায়, কিন্তু টিকে থাকতে গেলে সিনসিয়াললি কাজ করতে হবে। কেউ কেউ ফাঁকি দিয়েছিল, যারা ফাঁকি দিয়েছিল, তাঁরা সরে গিয়েছে। সায়নী (ঘোষ) খুব সিরিয়াস মাইন্ডের, জুন খুব সিরিয়াস মেয়ে। এঁরা সিরিয়ালসি কাজটা করে। দেব বলেছিল না, ‘আমি ছাড়লেও পলিটিক্স আমায় ছাড়ে না’। মমতা খুব স্নেহ করে ওকে। মমতা চায় ও থাকুক রাজনীতিতে। আগের চেয়ে ও আরও সিনসিয়ার হবে আশা করি।