স্বপ্ন ছিল আকাশ ছোঁয়ার, সেই আকাশই যেন হাতের কাছে এসে ধরা দিয়েছে দিব্যজ্যোতির। কারণ এবার তিনি সৃজিতের ছবির 'গৌরাঙ্গ'। বহু বছর বড় পর্দায় কাজ করেও বহু অভিনেতার এমন সুযোগ আসে না, সেখানে বড় পর্দার প্রথম ব্রেকই ইন্ড্রাস্টির ফার্স্ট বয়ের হাত ধরে। তবে ছোট পর্দায় নায়কের শিকড়, তা সেই মাধ্যমের প্রতিও তাঁর কৃতজ্ঞতার শেষ নেই। তাই মেগার ১২ ঘণ্টার শিফট সামলে বড় কাজের জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছেন দিব্যজ্যোতি দত্ত। কীভাবে শারীরিক ও মানসিক ভাবে এই চরিত্রের জন্য নিজেকে তৈরি করছেন নায়ক? হিন্দুস্থান টাইমস বাংলার সঙ্গে সে কথাই ভাগ করে নিলেন অভিনেতা।
ছবি ঘোষণার পরে তো হোয়াটসঅ্যাপের ডিপি বদলে ফেলেছেন দেখছি…
দিব্যজ্যোতি: হ্যাঁ, আমাদের ছবির প্রথম পোস্টার, আর সেখানে শ্রী চৈতন্য মহাপ্রভু। এখানে তিনটে যুগে, তিন ভাবে গৌরাঙ্গকে দেখানো হয়ছে।
আপনাকেও তো কয়েকদিন পর এই লুকেই দেখব…
দিব্যজ্যোতি: হ্যাঁ, তার জন্যই প্রস্তুতি নিচ্ছি।
শুনলাম অনেকটা ওজন কমাতে হয়েছে?
দিব্যজ্যোতি: কমাতে হয়েছে বললে ভুল বলা হয়। এখনও ওজন কমিয়ে চলেছি। আরও ওজন কমাতে হবে। আপাতত ২৮-২৯ দিনে আমি ৮-১০ কিলো মত কমিয়েছি। আমার হাতে আর দু'মাস মতো সময় আছে। তার মধ্যে আমাকে আরও ১৫-১৬ কেজির মত ওজন কমাতে হবে। তবে আশা করছি সেটাও করে ফেলতে পারব।
কিন্তু আপনি সাধারণত যেভাবে শরীরচর্চা করেন এটা তো তার থেকে অনেকটাই আলাদা…
দিব্যজ্যোতি: হ্যাঁ, অনেকটাই আর ভীষণ কঠিনও। কারণ শরীরের মেদ ঝরানোটা খুব একটা কঠিন কিছু নয়। কিন্তু যখন শরীরে মাসল বেশি থাকে সেটা বার্ন করা খুব কঠিন। এখন আমি অনেকটা রোগা হয়েছি। আমি যখন চওড়া ছিলাম তখন আমার শরীরে অনেক মাসল ছিল। সেই মাসেল অনেকটাই বার্ন হয়েছে, তবে আরও করতে হবে। আর এই কাজটা খুবই কঠিন। ডায়েটে বেশ কিছুটা বদল এসেছে। তার সঙ্গে আমি যেভাবে শরীরচর্চা করতাম সেখানেও অনেকটা পরিবর্তন এসেছে। আমি আগে ওয়েট লিফটিং করতাম, কিন্তু এখন সেটা করা যাবে না। তবে এক্ষেত্রে আমার নিউট্রিশন নিয়ে যে পড়াশোনা, সেটা অনেকটা সাহায্য করেছে। তাছাড়াও আমার কোচ আমাকে ভীষণ ভাবে গাইড করছেন। পাশাপাশি আমার প্রিয় বন্ধুও, সেও একজন পুষ্টিবিদ।
আরও পড়ুন: 'দাগি'র প্রথম গানে রোম্যান্টিক মুডে নিশো–তমা! প্রকাশ্যে ‘একটুখানি মন'
আর মানসিক প্রস্তুতি?
দিব্যজ্যোতি: সেটা তো থাকবেই। কোনও কাজ আমার মনে হয় না পড়াশোনা ছাড়া হয়। একটা কাজ করতে গেলে সেখানে অনেকটা পড়াশোনার প্রয়োজন হয়। আমি সব সময় সেই চেষ্টাই করে যাচ্ছি নিজেকে শারীরিক এবং মানসিক ভাবে এই চরিত্রটার জন্য প্রস্তুত করছি। পর্দায় শ্রীচৈতন্য দেব হয়ে ওঠা খুব একটা সহজ কথা নয়। আমি তাঁকে স্মরণ, তাঁর দয়ায় যেন এটুকু করতে পারি সেটাই আমি সব সময় প্রার্থনা করছি। এই চরিত্রটার জন্য আমাকে যথেষ্ট সময় দিতে হচ্ছে। মানসিকভাবে একটা প্রস্তুতি নিতে হচ্ছে, আর আমি সেই আমি সেই সময়টা দিচ্ছিও। এই সময়টা দিতে পেরেও আমি ভীষণ খুশি। তবে এটার জন্য আমাকে কেবল শারীরিক বা মানসিকভাবে পরিবর্তন নয়, শরীরিভঙ্গিতেও অনেক পরিবর্তন আনতে হবে।
এত কঠিন চরিত্র, তার উপর আবার কড়া পরিচালক, একটু-একটু কি ভয় হচ্ছে?
দিব্যজ্যোতি: প্রথমত আমি ভীষণ অবাক হয়েছিলাম। আর হ্যাঁ বুক ধুকপুক তো করবেই। এটাই খুব স্বাভাবিক। আর আমার মনে হয় এটা হওয়া উচিতও। এটা থেকেই বোঝা যাবে যে, আমি কাজের প্রতি কতটা সিরিয়াস। তবে এটুকু বলতে পারি আমি আমার সবটা দিয়ে অবশ্যই চেষ্টা করব।
কিন্তু সৃজিত মুখোপাধ্যায়ের থেকে অফারটা কীভাবে এল? শুনলাম তিনি নাকি আপনাকে ফোন করেছিলেন…
দিব্যজ্যোতি: হ্যাঁ, সৃজিতদা আমাকে ফোন করেছিলেন। যখন আমার কাছে ওঁর ফোনটা আসে, আমি প্রথমে কিছুক্ষণ কথা বলতে পারিনি। আসলে এটা তো স্বপ্নপূরণ হওয়ার মতো একটা ব্যাপার। ফোনের ওপার থেকে সৃজিতদা বলেন, ‘আমি সৃজিত মুখোপাধ্যায়। তোমাকে আমি শ্রীচৈতন্যর চরিত্রের জন্য ভাবছি। তোমার এখন বডি ওয়েট কত? তোমার ছবি দেখলাম। তুমি অনেকটা চওড়া, মাসল রয়েছে শরীরে। সবকিছু কমিয়ে তোমাকে ‘গৌরাঙ্গ’র মতন হয়ে উঠতে হবে।’
আরও পড়ুন: ‘সবার সামনে বলব…,’ নুসরতকে কী বলতে চলেছেন যশ? নায়কের পোস্ট ঘিরে রহস্য
শ্রী চৈতন্যের চরিত্র মানেই অনেকের চোখে যিশু সেনগুপ্ত, ফলে তুলনা আসতেই পারে। কীভাবে দেখছেন বিষয়টা?
দিব্যজ্যোতি: এটা নিয়ে আমার সত্যি কিছু বলার নেই। তবে যিশুদা আমার খুব পছন্দের একজন অভিনেতা, সর্বোপরি তিনি আমার পছন্দের একজন মানুষ। ওঁর সঙ্গে যতবার দেখা হয়েছে তিনি আমাকে সব সময় ভালো পরামর্শ দিয়েছেন, গাইড করেছেন। মানুষটার মুখে সব সময় পজিটিভ কথাই শুনেছি। সব সময় বলেছেন যে, ‘সব ভালো হবে’।
এই কাজটা পাওয়ার পর, যিশু সেনগুপ্তর সঙ্গে কোনও কথা হয়েছে?
দিব্যজ্যোতি: না, আমার সঙ্গে আলাদা করে আর কোনও কথা হয়নি।
তবে আপনি বললেন এই চরিত্রের জন্য পড়াশোনা করছেন অনেক, সঙ্গে একটা রেফারেন্স থাকলেও তো খানিকটা সুবিধা হয়, সেই জায়গা থেকে যিশুর ‘শ্রী চৈতন্য’ দেখেছেন কি?
দিব্যজ্যোতি: ওঁকে শ্রী চৈতন্য হিসেবে আমি দেখেছি। লকডাউনের সময় দেখতাম। আর যদি বলেন এখন দেখছি কি না তাহলে বলব কিছু কিছু কাজ হয় বার বার দেখার জন্যই। এটাও সে রকমই একটা কাজ। জানেন আমার মন খারাপ হলে আমি ‘নায়ক’ দেখি। বার বার দেখি। এমনকী বেশ কিছু কার্টুন আছে সেগুলোও দেখি। কিছু কিছু কাজ কখনও পুরানো হয় না। তবে একটা বিষয় জানেন? ওঁর সঙ্গে না আমার একটা মিল আছে।
কী বলুন তো?
দিব্যজ্যোতি: তখন আমি 'জয়ী' করতাম, সেই সময় শুনেছিলাম। যিশুদার প্রথম কাজ এন টি ওয়ানে। আর আমার প্রথম কাজও ওই স্টুডিয়োতেই।
হ্যাঁ, তবে কেবল তো যিশু নন, সৃজিতের সঙ্গেও আপনার একটা বিষয়ে মিল আছে…
দিব্যজ্যোতি: সাপ তো?
হ্যাঁ…
দিব্যজ্যোতি: এই বিষয়টা মিল আছে ঠিকই, তবে এক্ষেত্রে সৃজিতদা লাকি। তিনি বাড়িতে সাপ রাখতে পারেন। তবে আমার মনে হয় না আমি আর রাখতে পারব বলে। কিন্তু সাপ আমার খুব ভালো লাগে। আসলে আমার সরীসৃপ জাতীয় প্রাণী ভীষণ ভালো লাগে। এটা শুনতে খুব অদ্ভুত হলেও আমার জন্য সত্যি। আমি জানিনা আমি কেন পছন্দ করি। এই নিয়ে আমি অনেক পড়াশোনাও করেছি। কত রকমের সাপ হয়, তাদের বিষ কী রকম হয়। কোন বিষ কী ধরনের ইত্যাদি। তবে আমার ব্যক্তিগত ভাবে পছন্দ গ্রীন ট্রি পাইথন। বাড়িতে সাপ রাখা আমার কাছে খুব সাধারণ হলেও এটা তো সবার কাছে নয়। তাই খুব স্বাভাবিকভাবেই মায়ের কাছে বা আমার বাড়ির সকলের কাছে এই বিষয়টা অস্বাভাবিক। তো সেই কারণে একটু তো আপত্তি রয়েছে। তাছাড়া আমি বাড়িতে সাপ রাখলে আমার বন্ধু-বান্ধবরা আমার বাড়ি আসা বন্ধ করে দেবে। যাইহোক, দেখা যাক ভবিষতে যদি কখনও সুযোগ পাই।
আর ‘অনুরাগের ছোঁয়া’র ভবিষৎ? কানাঘুষোয় শোনা যাচ্ছিল মেগা নাকি শেষ হতে চলেছে?
দিব্যজ্যোতি: মেগা শেষ হওয়ার কোনও খবর এখনও নেই। ‘অনুরাগের ছোঁয়া’ যেরকম চলছে সে রকমই চলবে। শেষ পাওয়ার টিআরপি অনুযায়ী আমাদের কিন্তু বেশ ভালো টিআরপি রয়েছে। বর্তমানে বেঙ্গল টপার ধারাবাহিকের টিআরপি ৬.৮। সেখানে তিন বছর পরও আমাদের টিআরপি ৫.২।
কিন্তু আপনি কি মেগায় থাকবেন?
দিব্যজ্যোতি: আমি এইসব নিয়ে আপাতত কিছুই ভাবিনি। আমার হাতে দুটো কাজ রয়েছে ‘অনুরাগের ছোঁয়া’ আর ‘লহ গৌরাঙ্গের নাম রে’। আমি সেগুলোর উপরই ফোকাস করার চেষ্টা করছি। পরে কি হবে, না হবে সেটা পরে দেখা যাবে।
কিন্তু দুটো একসঙ্গে করতে গেলে লুকের ক্ষেত্রে তো একটা সমস্যা আসতে পারে, এতটা ওজন কমাচ্ছেন, ধারাবাহিকে কাজের ক্ষেত্রে সমস্যা হবে না? এটা নিয়ে কোনও কথা হয়েছে?
দিব্যজ্যোতি: হ্যাঁ, প্রাথমিক ভাবে একটা কথাবার্তা হয়েছে। কিন্তু এখনও শ্যুটিং শুরু হতে দু'মাস মতো সময় আমার হাতে আছে। জুনে আমাদের শ্যুটিং শুরু হবে। আমার ইচ্ছে আছে আমি দুটোই কাজকেই সমান ভাবে এগিয়ে নিয়ে যাব। এরপর দেখা যাক কি হয়।
কিন্তু এত বড় একটা খবর শুনে সেটের সকলের কী রকম রি-অ্যাকশন ছিল?
দিব্যজ্যোতি: সকলেই বেশ খুশি। অনেকেই আমাকে এই কাজের জন্য শুভেচ্ছা জানিয়েছেন। তবে একজনের কথা আলাদা করে বলতে হয়, আমার ভাই প্রারব্ধি (প্রারব্ধি সিংহ)। আমার এই কাজের খবর শুনে ওঁর চোখের কোণে আনন্দের জল দেখেছিলাম। ১২ ঘণ্টা শিফট করে, এই চরিত্রটার জন্য তৈরি হচ্ছি। কাজের ফাঁকে ফাঁকে অনেক সময় আয়নার সামনে দাঁড়িয়েও প্যাকটিস করে নিচ্ছি। তবে এই সবটার মধ্যে আমাকে সব থেকে বেশি যে সাহায্য করছে সে হল প্রারব্ধি। আমার তো নিজের বোন আছে, কোনও ভাই নেই। এই অনুরাগের ছোঁয়ার সেটে এসে আমি আমার সেই ভাইকে পেয়েছি। ও আমার মায়ের পেটের ভাইয়ের মতই। 'অনুরাগের ছোঁয়া' আমার কাছে আমার সন্তানের মত। এই সেটটা আমাকে অনেক কিছু উপহার দিয়েছে। তবে তার মধ্যে সবচেয়ে মূল্যবান হল আমার ভাই।
১২ ঘন্টা মেগায় কাজ করে প্রস্তুতি নেওয়া, অনেকটা কষ্টসাধ্য হচ্ছে তাহলে?
দিব্যজ্যোতি: তা তো বটেই। তবে তাতে কোনও দুঃখ নেই। বরং ভালোলাগা আছে। আসলে আমার মনে হয় যে কোনও কাজ শুরুতে কঠিন থাকে, সেটাকে ধীরে ধীরে সহজ করে নিতে হয়। তবে এ কথা ঠিক, বলাটা যতটা সহজ, করাটা ততটা সহজ নয়। সেটা আমি কাজটা করতে গিয়ে বুঝতে পেরেছি। আমার শরীরচর্চার পুরো প্যাটার্ন চেঞ্জ হয়ে গিয়েছে। আমি যা যা খেতে ভালোবাসতাম সে সব অনেক কিছুই খেতে পারছি না। রাতের দিকে কিছু ক্ষেত্রে না খেয়ে থাকতে হচ্ছে। অনেক পছন্দের জিনিস ত্যাগ করছি এই কাজটার জন্য, কিন্তু খুশি খুশি।