‘হত্যাপুরী’তে ফেলুদা হিসাবে সফর শুরু করেন আরব সাগর পারের অভিনেতা ইন্দ্রনীল সেনগুপ্ত। সদ্য মুক্তি পেয়েছে ইন্দ্রনীল অভিনীত দ্বিতীয় ফেলুদা ছবি ‘নয়ন রহস্য’। রুপোলি ফেলুদা-তোপসে-জটায়ু হিসাবে পর্দায় ফিরেছে ইন্দ্রনীল-আয়ুশ-অভিজিৎ ত্রয়ী। সোশ্যাল মিডিয়ায় ছবি ঘিরে মিশ্র প্রতিক্রিয়া থেকে মেয়ে মীরার ফেলুদা নিয়ে প্রতিক্রিয়া ঘিরে হিন্দুস্তান টাইমস বাংলার সঙ্গে একান্ত আড্ডায় ধরা দিলেন ইন্দ্রনীল সেনগুপ্ত।
ফেলুদা-র চরিত্রে এত আইকনিক অভিনেতারা কাজ করেছেন। সে জায়গায় আপনার কাছে ফেলুদা হয়ে ওঠা কতটা কঠিন ছিল?
ইন্দ্রনীল: আমার জন্য ফেলুদার চরিত্রে অভিনয় করাটা চ্যালেঞ্জিং। তবে এটা একেবারেই গুরুত্বপূর্ণ নয় যে কোনও তারকারা আগে এই চরিত্রটা করে গিয়েছেন। একজন অভিনেতা সেইভাবে কোনও চরিত্রকে অ্যাপ্রোচ করতে পারে না। আমাকে চরিত্রটা হয়ে উঠতে হবে, কোনও অভিনেতা হলে চলবে না। এর আগে সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়, সব্যসাচী চক্রবর্তীরা ফেলুদা করেছেন। যেগুলো একইসঙ্গে দর্শকদের কাছে গ্রহণযোগ্য এবং ব্যবসাসফল ছবি। কিন্তু আমি যখন ফেলুদা হব, তখন যদি ভাবি আমি আমি সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়ের মতো ফেলুদা হতে পারছি কিনা কিংবা সব্যসাচী চক্রবর্তী মতো ফেলুদা হতে পারছি কিনা, সেটা কিন্তু ভুল কাজ। আর ফেলুদা কেমন হবে, সেটা তো সত্যজিৎ রায় তাঁর বইতে যে বিবরণ দিয়ে গিয়েছেন, সেটাই একমাত্র অনুসরণ করার জায়গা আমার কাছে। অন্য অভিনেতার মতো অভিনয় করা আমার পক্ষে সম্ভবপর নয়। বাকিরাও বইয়ের ফেলুদা হওয়ার চেষ্টা করেছেন, আমিও সেটাই করেছি।
হত্যাপুরীর চেয়ে নয়ন রহস্যে ফেলুদা চরিত্রে অভিনয় করাটা কি বেশি সহজ ছিল?
ইন্দ্রনীল: হত্যাপুরীর সময় আমার কাছে সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ ছিল, আমি ঠিকমতো ফেলুদার চরিত্রটার সঙ্গে সুবিচার করতে পারবো কিনা এবং দর্শক আমাকে ফেলুদা হিসাবে গ্রহণ করবে কিনা। হত্যাপুরীর পর আমাদের সবার ধারণা, দর্শক আমাকে বা বলা ভালো আমাদের তিনজনকে (ফেলুদা, তোপসে এবং জটায়ু) গ্রহণ করেছেন। আর কোনও চরিত্র ভালোভাবে ফুটিয়ে তোলবার চ্যালেঞ্জ তো সবসময়ই অভিনেতার সঙ্গে থাকে।
নয়ন রহস্য ঘিরে সোশ্যাল মিডিয়ায় মিশ্র প্রতিক্রিয়া, অনেকেই ছবির মান নিয়ে প্রশ্ন তুলছেন। ছবি ঘিরে নেতিবাচক প্রতিক্রিয়াকে কীভাবে দেখেন?
ইন্দ্রনীল: (খানিক বিরক্তির সুরে) আমি একটা কথা বুঝি না, আজকের দিনে দাঁড়িয়ে আমাদের সব আলোচনায় সোশ্যাল মিডিয়া কেন ঢুকে পড়ে? তাহলে তো বাকি মাধ্যমগুলোর অস্তিত্বের কোনও মানা হয় না। প্রিন্ট মিডিয়া, ডিজিট্যাল মিডিয়া, টেলিভিশন মিডিয়া-সবকিছুর উচিত নিজেদের দোকানপাঠ বন্ধ করে দেওয়া। কারণ তারা তো নিজেদের অস্তিত্বের জন্য সোশ্যাল মিডিয়ার উপর নির্ভর করছে, সেটা যদিও প্রযোজ্য হয় তাহলেই এই প্রশ্নের মানে দাঁড়ায় নতুবা নয়। দ্বিতীয়ত, সোশ্যাল মিডিয়ায় কী হচ্ছে সেটা জীবনে সব কাজ করার ক্রাইটেরিয়া হতে পারে। দর্শকদের একটা জিনিস ভালো লাগতে পারে কিংবা নাও লাগতে পারে। কিন্তু সোশ্যাল মিডিয়ায় অনেকে সব বিষয়কে টেকনিক্যালি অ্যানালাইজ করার চেষ্টা করেন। কিন্তু সেক্ষেত্রে ওই মানুষটার ক্রেডিবিলিটি কী? সে কে? বিষয়টা নিয়ে তাঁর সমালোচনার করার মতো যোগ্য়তা রয়েছে তো?
সমালোচনা তো সবসময়ই হত। হয়ত শুধু সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়ই ফেলুদার জন্য সমালোচিত হননি। কারণ সেইসময় কোনও রেফারেন্স ছিল না, কোনও তুলনা করার জায়গা ছিল না। আমি নিশ্চিত সব্যসাচী চক্রবর্তীও সমালোচিত হয়েছেন ফেলুদার জন্য। তবে ওইসময়টা সোশ্যাল মিডিয়া ছিল না বলে, সমালোচনাগুলো ডিরেক্ট ওঁনার কানে পৌঁছায়নি। আজকাল কেউ নিজের বাথরুমে বসে কিছু বললেও সেটা আমাদের কানে পৌঁছে যায় সোশ্যাল মিডিয়ার দৌলতে। সবার কথা শোনার মতো সময় বা এনার্জি কোনওটাই আমার কাছে, আমি সেটা করতেও চাই না। সোশ্যাল মিডিয়ার নয়েজটায় আমি কান দিই না সচেতনভাবে। নিজের কাজটা করে যাই।
ফেলুদা হিসাবে সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায় বা সব্যসাচী চক্রবর্তীর মতো সিনিয়রকে বাদ রেখে যদি জিগ্গেস করি, সমসাময়িকদের মধ্যে আপনার চোখে সেরা কে?
ইন্দ্রনীল: আমি সত্যি কারুর কাজ দেখেনি। আমি শুধু সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায় ও সব্যসাচী চক্রবর্তীর ফেলুদা দেখেছি। বাকি কারুরটাই দেখা হয়নি। আবিরের বাদশাহি আংটির কিছু অংশ দেখেছি। বাকি কোনও ফেলুদাই দেখা হয়নি। তাই আমি একদমই বলতে পারব না।
মেয়ে মীরা তো এখন বড় হয়েছে। ও কী বাবাকে ফেলুদা হিসাবে পর্দায় দেখেছে?
ইন্দ্রনীল: না, ও দেখেনি। মীরা এখনও ফেলুদা ফলো করে না।
নয়ন রহস্য মেয়েকে দেখাতে চাইবেন?
ইন্দ্রনীল: আমার মনে হয় না… তবে দেখলে ভালো হবে। ও নিজের সময় মতো দেখবে। আমি জোর করে কিছু করানো পছন্দ করি না। যখন মীরা বড় হবে তখন যদি ওর ইচ্ছে হয় তাহলে (ফেলুদা) পড়বে বা ইচ্ছে হলে দেখবে।
মেয়ে কী বাংলা ভাষায় কথা বলে?
ইন্দ্রনীল: বাংলাটা বোঝে। আশেপাশে এত কথা যখন বাংলায় হয়, তখন নিশ্চিতভাবেই বাংলাটা বোঝে, তবে না মীরা একেবারেই বাংলা বলে না।
শেষে জানতে চাইব, শেষ কয়েক বছরে আপনার ব্যক্তিগত জীবন (ডিভোর্স) নিয়ে এত চর্চা হয়েছে। সেটা কোনওভাবে আপনার কেরিয়ারকে প্রভাবিত করেছে বলে মনে হয়?
ইন্দ্রনীল: আমার কাছে দুটো জীবনের একদম ভিন্ন জায়গা। পার্সোনাল জীবনে যা হয় সেটা দিয়ে মানুষ প্রভাবিত হয়। তবে লোকে কী বলছে, কী লেখা হচ্ছে সেটা নিয়ে আমি প্রভাবিত হই না। কারণ গোটা দুনিয়ার জন্য আমি বাঁচতে পারব না, আমাকে নিজের জন্য বাঁচতে হবে। মিডিয়া কী লিখছে, পাবলিক কী বলছে সেটা নিয়ে আমি পড়ে থাকলে তো আমি ফাঁদে পা দিয়ে দেব, লোকের ভাবনা আমাকে পরিচালিত হবে। সেটা আমি হতে পারি না। তাই মিডিয়াতে আমাকে নিয়ে কী লেখালেখি হচ্ছে, সেই নিয়ে আমি মোটেই ভাবিত নই।