বিয়ের পর দ্বিতীয় আর মা হওয়ার পর এবার প্রথম নববর্ষ উদযাপন করছেন শ্রীময়ী চট্টরাজ। এই মুহূর্তে স্বামী কাঞ্চন মল্লিক, মেয়ে কৃষভি আর পরিবারের অনন্যাদের নিয়েই কাটছে শ্রীময়ীর জীবন। তবে নববর্ষ সমস্ত বাঙালির কাছেই ভীষণ স্পেশাল, কাঞ্চন পত্নীর কাছেও তাই। বাংলা বছরের প্রথম দিনটা কীভাবে কাটাবেন, সে বিষয়েই Hindustan Times Bangla-র সঙ্গে খোলামেলা আড্ডা দিলেন শ্রীময়ী।
ফোন করতেই হাসি মুখে জানালেন, এইমাত্র মন্দিরে পুজো দিয়ে জল খেলাম (যেদিন কথা হচ্ছিল, সেদিন ছিল নীলষষ্ঠী)।
সারাদিন না খেয়ে ছিলেন তাহলে?
শ্রীময়ী: হ্যাঁ, কিচ্ছু খাইনি, জলও না। সকালবেলা জল খেতে যাচ্ছিলাম, মা বলল শিবের মাথায় জল না ঢেলে জল খেতে নেই। তাই নির্জলা উপবাস। শুধু সন্ধ্যেবেলা লিকার চা খেয়েছি। এমনিতে বাড়িতে পুজো করেছি। বাড়িতে কাশী বিশ্বনাথ থেকে শিব আনা হয়েছে। আর কাঞ্চনের মায়ের প্রতিষ্ঠা করা শিবলিঙ্গ আছে। আর এখন এসেছিলাম কালীঘাটের কাছে নকুলেশ্বর ভৈরব মন্দিরে। এখানে কাঞ্চন অনেক ছোটবেলা থেকেই আসত ওর মায়ের সঙ্গে। আর আমিও তাই এলাম পুজো দিতে।
নববর্ষ কীভাবে কাটাবেন?
শ্রীময়ী: ১লা বৈশাখে আমার শ্যুটিং থাকবে কি না এখনও জানি না। তবে কাঞ্চনের তো শ্যুটিং আছেই (যখন কথা হচ্ছিল, নীল ষষ্ঠির দিন)। আর নববর্ষের দিন সকালটা বাড়িতেই খাওয়াদাওয়া করব। আর রাতে সপরিবারে রেস্তোরাঁয় খেতে যাব। কাঞ্চনের বন্ধু, বন্ধুর বউরাও আসবেন। গতবার কৃষভিকে পেটে নিয়ে কাটিয়েছিলাম। সেবার বাড়িতেই রান্নাবান্না করে খেয়েছিলাম। আমি আর কাঞ্চন অবশ্য যেকোনও উৎসব-উদযাপন বাড়িতেই করতে ভালোবাসি। তাই সাধারণত কোনও বিশেষ দিন হল বাড়িতেই জমিয়ে খাওয়াদাওয়া হয়।
আর কেনাকাটা নিশ্চয় হয়ে গেছে?
শ্রীময়ী: কৃষভির জন্য জামা কিনেছে। ধুতি প্যান্ট আর শেরওয়ানি। মায়ের খুব ইচ্ছে, ওকে ওভাবে সাজাবে। তবে ওকে কোথাও বের করতে পারছি না, একদম ছোট তো। তবে সাজতে ও খুবই ভালোবাসে, খুব সাজুনি (হাসি)। তবে গরম হবে এমন কিছু পরালে ও গায়ে রাখতে চায় না।
আর আমার অত সোনার গয়নার শখ নেই। তবে কাঞ্চন ওর মেয়ের জন্য সোনার গয়না কিনেছে, ১লা বৈশাখের দিন ডেলিভারি হবে। সেটা কী আপাতত বলতে চাই না, ওটা সারপ্রাইজ। আর আমি কাঞ্চনের এটিএম কার্ড নিয়ে শাড়ি কিনে নিয়েছি। আর কাঞ্চন আমার মা, বাবাকে দিয়েছে শাড়ি আর পাজামা-পাঞ্জাবি। কাঞ্চনকে ধুতি পাঞ্জাবি কিনে দিয়েছি, ধুতিটা ও হয়ত গরমে পরবে না, তবে পাঞ্জাবিটা পরবে।
আর প্রত্যেকবার আমি যাঁদের দেই পুজো এবং পয়লা বৈশাখে, তাঁরা হলেন, আমাদের বাড়ির দুজন কেয়ার গিভারস, রান্নার দিদি, গাড়ির ড্রাইভার, আর দু'জন ন্যানি। ড্রাইভারের জন্য জামা, আর বাকি সকলের জন্যই শাড়িই কিনেছি, কারণ, ওটা আমার পছন্দ। এদেরকে দিতে আমার বেশ ভালোলাগে, কারণ ওঁরা মুখের ওই তৃপ্তির হাসিটা দেখতে আমার ভালো লাগে।
ছোটবেলার পয়লা বৈশাখের কোনও স্মৃতি মনে পড়ে?
শ্রীময়ী: ছোটবেলার পয়লা বৈশাখ দারুণ কাটত। আমার ঠাকুমার বাড়িতে ৪০-৫০ জন সদস্য। নববর্ষে জমিয়ে খাওয়া-দাওয়া হত। সকলের একসঙ্গে রান্নাবান্না হত।
আর বাবা প্রত্যেক বছর ঠাকুমা ও মায়ের জন্য সোনার গয়না কিনতেন। সেজন্য বিভিন্ন সোনার দোকানে আমাদের নিমন্ত্রণও থাকত। আমি আর দিদি লাড্ডু আর ক্যালেন্ডার জমাতাম। ওটা একটা অন্য আনন্দ ছিল। আমাদের হাতিবাগানের ওই বাড়ির ওপরে একজন কাকু থাকতেন, ওনার সোনার দোকান ছিল। ওনাদের বাড়িতে পাঁঠার মাংস, বিরিয়ানি, নানান কিছু রান্না হত, রাতে আমরা সকলে একসঙ্গে খাওয়াদাওয়া করতাম। সেদিনগুলো ছিল খুবই মজার ছিল।
আর যেটা আনন্দ হত সেটা হল বাক্স প্যাকিং করা। বাবার বন্ধুবান্ধবের দোকান ছিল। সকলেরই পাশাপাশি বাড়ি। তাই নববর্ষে মানেই বিশাল আনন্দ। ওই একটা দিন পড়াশোনা করতে হত না, কেউ বকত না। আসলে সেসময় ছোটবেলা অনেক সহজ সরল ছিল (নস্টালজিক হয়ে)। এখন বাচ্চারা যেন বয়সের তুলনায় বড্ড বড় হয়ে যাচ্ছে। ফোনের যুগে সেই আনন্দটা আর নেই। আমরা নিখাদ আড্ডা দিয়েছি।
আমার ক্রিশ্চান স্কুল, তাই ওখানে অনুষ্ঠান হত না। তবে যৌথ পরিবারে একটা আলাদাই আনন্দ। মা নতুন ফ্রক কিনে দিত, চুল বেঁধে দিত। আমার ও দিদির দুর্গাপুজো এবং পয়লা বৈশাখে অনেক জামা হত, কারণ অনেকেই দিতেন। আমি আমার সেই ছোটবেলাটা খুবই মিস করি। মাঝে মাঝে মনে হয় কৃষভি এত পরে এল, আমি ওই আনন্দগুলো ওকে দিতে পারব না, এখন তো সবকিছুই অন্যরকম। খুব আফসোস হয়।
আপনার বাড়িতে ৪০-৫০ সদস্য, অতজনের একসঙ্গে রান্না হত?
শ্রীময়ী: হ্য়াঁ, আমাদের বাড়িতে তখন ৮-৯কেজির নিচে মটন হত না। আর চিকেন হতই না, কারণ বাড়িতে দুর্গাপুজো হয়। লুচি থেকে শুরু করে সবকিছুই ঠাকুমা নিজে রাঁধতেন। সেযুগে আমার ঠাকুমার একটা স্কুলের প্রিন্সিপ্যাল ছিলেন। আমাদের বনেদি পরিবার, আগে বাড়িতে নিয়মই ছিল না বউরা গিয়ে বাজার করবে কিংবা মিষ্টি কিনবে। আমার মা আসানসোলের মেয়ে, তাই এখানকার কালচার জানতেন না। তবে মাকে শাড়ি পরা থেকে লিপস্টিক লাগানো, সবই ঠাকুমা শিখিয়েছেন।
আমরা যতদিন ঠাকুমাকে পেয়েছি, টিনএজ পর্যন্ত, কোনওদিন কেনা জামা পরিনি, সব ঠাকুমা নিজের হাতে বানিয়ে দিতেন। পরে যখন ওনার বয়স বাড়ল, তখন বাতের ব্যাথায় আর কিছু করতে পারতেন না। আর খুব আফসোস কাঞ্চন ঠাকুমার ওই আতিথেয়তা দেখতে পেল না, যেটা আমার জামাইবাবু পেয়েছেন। ঠাকুমার কথা খুব মনে পড়ে এখনও।