সদ্য শেষ হয়েছে বাংলা সারেগামাপা-২০২৪। যুগ্মভাবে বিজেতার ট্রফি জিতে নিয়েছেন দেয়াশিনী রায় ও অতনু মিশ্র। আর প্রতিযোগিতায় তৃতীয় স্থান অধিকার করে কোলাঘাটের ছোট্ট শিল্পী অনীক জানা। প্রথম না হতে পারলেও দর্শক-শ্রোতাদের মন জয় করে নিয়েছিল ছোট্ট অনীকের গান। এখনও এই খুদে শিল্পীর গায়কীতে বুঁদ হয়ে রয়েছেন বহু শ্রোতা। এবার সারেগামা আর গান নিয়ে নানান কথা Hindustan Times Bangla-র সঙ্গে ভাগ করে নিলেন বছর ৭-এর অনীক।
ফোন করতেই আদুরে গলায় অনীক বলল, নমস্কার ম্যাম, ভালো আছেন? সৌজন্য বিনিময় ও আলাপচারিতা শেষে হল নানান গল্প।
সারাগেমাপা-তো শেষ এখন কী করছো?
অনীক: এই যে কয়েকটা ভিডিয়ো শ্যুট করছিলাম। আমার গানের কিছু মুখরা-র গেয়ে ভিডিয়ো বানাচ্ছিলাম। আমি গাইছি, বাবা-ভিডিয়ো শ্যুট করে দিচ্ছিল।
সারেগামাপা-তে নিশ্চয় প্রথম হতেই চেয়েছিলে, কি মন খারাপ?
অনীক: হ্য়াঁ, সেটা তো চেয়েছিলাম। তবে আমার কোনও মন খারাপ নেই। ফার্স্ট হতে তো সকলেই চায়, তবে মন খারাপ করিনি।
তবে বিচারকরা তো সকলেই তোমার গায়কীর প্রশংসা করতেন। এতজন ছিলেন কাকে বেশি ভালো লাগত?
অনীক: সকলকেই। তবে জাভেদ স্যারকে একটু বেশি ভালো লাগত। রথিজিৎ স্যার রিহার্সাল হলে দেখিয়ে দিতেন কীভাবে গাইব। আর সৌমেন স্যার (নন্দী) ছিলেন আমাদের গ্রুমার। উনি আমাদের ভুল ত্রুটি ধরিয়ে দিতেন।

এখনও নিয়মিত রেওয়াজ করছো তো?
অনীক: হ্যাঁ, রোজ রেওয়াজে বসি, সকালে ১ ঘণ্টা, আর সন্ধ্যেবেলাও ১ঘণ্টা রেওয়াজ করি।
প্রথম কবে কার কাছে গান শেখা শুরু করেছিলে?
অনীক: আমি বাইরে কারো কাছে গান শিখিনি কখনও। মায়ের কাছেই প্রথম গান শিখি। আমার বাবাও গান জানেন, একটু আধটু গাইতে পারেন। প্রথম গান শিখি ৩ বছর বয়সে। মা তখন গান গাইতেন, আর আমি শুনে শুনে তুলে নিতাম। বাবা তখন ভাবলেন, গান নিয়েই আমাকে এগিয়ে নিয়ে যেতে হবে। এরপর সারেগামাপা-র অডিশন হচ্ছিল পাঁশকুড়ায় বাবা নিয়ে গিয়েছিলেন। আমি পাশ করলাম। এটাই আমার প্রথম রিয়েলিটি শোয়ের অডিশন।
বাবা-ই আমাকে সারেগামাপা-তে থাকাকালীন গানের কথা মুখস্থ করিয়ে দিতেন, কীভাবে এক্সপ্রেশন দিতে হবে, সেগুলো শিখিয়ে দিতেন। বাবা-মা ভাই ওখানে আমার সঙ্গেই ছিল। বাবা ওখান থেকে অফিস করছিলেন, আর মা আর ভাই আমার সঙ্গে থাকত।

সারাগেমাপা তো হয়ে গেল, এখন কী পরিকল্পনা?
অনীক: ক্লাসিক্যালটা ভালো কারোর কাছে শেখার ইচ্ছে আছে। আর গানের পাশাপাশি এখন পড়াশোনা করছি। আমি থ্রিতে পড়ি। কোলাঘাটের নবারুণ শিশুবিকাশ নিকেতন স্কুলে।
গান নিয়েই কি কেরিয়ার গড়ার ইচ্ছে?
অনীক: অবশ্যই আমার গান খুবই ভালো লাগে। আমি গান নিয়েই বড় হতে চাই। আর পড়াশোনাটাও করতে চাই।
আর কোনও রিয়েলিটি শোয়ে যাওয়ার ইচ্ছে আছে?
অনীক: এবার বোম্বে, ইন্ডিয়ান আইডল, জি টিভি সারেগামাপা-তে যেতে চাই। মুম্বইতে যদিও শুনেছি খুব কঠিন। রাতে গান দেয়, পরের দিন রিহার্সাল করে সেদিনই শ্যুট হয়। চেষ্টা করব দেখি…।
তোমার বাড়িতে কে কে আছে?
অনীক: বাবা-মা, ভাই, ঠাম্মা, দাদু, কাকাই, কাকিমণি, মামী সকলে আছেন।
ভাই তো ছোট? ও কি গান ভালোবাসে?
অনীক: ভাই মানে অঙ্কিত এখন ২ বছরের। ভাইও গান ভালোবাসে। আমি তানপুরা নিয়ে রেওয়াজে বসলেই ও এসে উম…উম… করতে শুরু করবে। সারেগামাপাধানিসা বলে। শুধু ধা আর রে টা বলতে পারে না ঠিক করে।
(এদিকে কথার মাঝেই এসে হাজির অনীকের ভাই অঙ্কিত। ফোনেই গলা শোনা গেল তার। তারপর অনীকই ভাইকে দিয়ে সা রে গা মা পা, ধা নি সা বলালো, দাদার কথা শুনে সুরেই সরগম গুলি দিব্যি বলে ফেলল বছর ২-এর শিশুটি। যা শুনলে অবাক হতে হয় বৈকি !)
আর কোনও জায়গায় প্লে ব্যাক বা শো-করার প্রস্তাব পেয়েছো?
অনীক: প্লে ব্যাকের প্রস্তাব আসেনি, তবে শোয়ের প্রস্তাব আসছে অনেক। করিনি এখনও, তবে করব।
কোন ধরনের গান গাইতে তোমার ভালো লাগে?
অনীক: রক স্টাইলের আর দুঃখের গান ভালো লাগে।
সারেগামাপা-তে থাকাকালীন বন্ধুত্ব কার সঙ্গে হয়েছে বেশি?
অনীক: অতনু দা আর সৃজিতা দিদি আর অঙ্কনা দিদির সঙ্গে। যোগাযোগ আছে এখনও।
ভাই নাকি তুমি কে বেশি দুষ্টু?
অনীক: আমি (হাসি)
এর মধ্যে আর কলকাতা থেকে ডাক এসেছে কোনও অনুষ্ঠানের জন্য?
অনীক: হ্য়াঁ, দিদি নম্বর ওয়ান আর দাদাগিরি-তে যাব।