গায়ক,সুরকার,গীতিকার হিসাবে তিনি বহু পরিচিত নাম। ওপেন টি বায়োস্কোপ দিয়ে শুরু হয়েছিল পরিচালক হিসাবে তাঁর পথচলা। জেন ওয়াইয়ের গল্প বারে বারে উঠে এসেছে তাঁর ছবিতে। করোনা আবহে যখন ধীরে ধীরে ঘুরে দাঁড়ানোর লড়াইয়ে শামিল টলিগঞ্জ। তখন ফের জেন ওয়াইয়ের প্রেমের গল্প নিয়ে হাজির তিনি। ভ্যালেন্টাইন উইকে (আজ) মুক্তি পেল পরিচালক অনিন্দ্য চট্টোপাধ্যায়ের ‘প্রেম টেম’ (Prem Tame), ছবি নিয়ে হিন্দুস্তান টাইমস বাংলার সঙ্গে একান্ত আড্ডায় ধরা দিলেন পরিচালক।
‘মনোজদের অদ্ভূত বাড়ি’র পর একটু লম্বা ব্রেক, কোনও বিশেষ কারণ?
--ব্রেক নয়- আসলে ওই সময় অন্য একটা ছবির পরিকল্পনা করছিলাম। সেটা গৌতম চট্টোপাধ্যায়কে নিয়ে একটা ছবি, সেটাও আমি করব। কিন্তু ওই সময় সেটা তৈরি করে উঠতে পারিনি। তারপর সেটা থেকে আবার নতুন করে আবার একটা ছবির পরিকল্পনা আর বাস্তবায়ন, তাই একটু সময় লেগে গেল বলতে পার। তবে আমি কিন্তু একটু ব্রেক নিয়েই ছবি করতে ভালোবাসি।
প্রেম-টেম নামটা কেন রাখলেন?
– জানোতো আমরা বাঙালিরা আসলে একটু বেশি চাই। সেই কারণে বাঙালি চা-টা খায়, ঘুরে-টুরে আসে। তাই বাঙালির শুধু প্রেম দিয়ে হয়ে যায় না, প্রেমের সঙ্গে টেমও লাগে। আমাদের ছবিটাও সেরকম, এখানে প্রেমের সঙ্গে একটু টেম জুড়ে আছে। আর একটা কথা, আমাদের এই ভালোবাসার আসলে চারখানা পা আর একখানা লেজও আছে।
অনিন্দ্য চট্টোপাধ্যায়ের ছবি মানেই নতুন মুখ, কোনও বিশেষ কারণ?
--আসলে যদি পরিচালক হিসাবে আমিও নতুন... খুব বেশি ছবি করিনি। আমিও নতুন, তাঁরাও নতুন সেটা একটা ভালো কম্বিনেশন। আর এটা তো কলেজের ছবি। কাস্টিং নির্ভর করে চিত্রনাট্য কী চাইছে সেটার উপর। কলেজের গল্প বলব আর সেখানে খুব পরিচিত মুখ নিয়ে কাজ করব, সেটা তো হয় না।
কিন্তু আপনার ফিল্মোগ্রাফি বলছে জেন-ওয়াইয়ের গল্প বলতে ভালোবাসেন অনিন্দ্য চট্টোপাধ্যায়
--আমি যে যে ধরণের গল্প বলেছি ( ওপেন টি বায়োস্কোপ, প্রজাপতি বিস্কুট) সেখানে কমবয়সীরা প্রাধান্য পেয়েছে, সেটা আমি খুব ইচ্ছা করে করেছি এমনটা নয়। হয়ে গেছ বলতে পার।
প্রেম টেমের তিন তরুণ তুর্কি ( সৌম্য, সুস্মিতা,শ্বেতা)'কে নিয়ে কী বলবে?
--তিনজনেই ফ্যান্টাস্টিক অ্যাক্টর। ভেবেছিলাম ওদের নিয়ে ওয়ার্কশপ করব, সেটা হয়ে উঠেনি। এই জেনারেশন আমাদের চেয়ে অনেক বেশি স্মার্ট। ওদের কোনও জিনিস বুঝতে কম সময় লাগে। টিপিক্যাল নার্ভাসনেসটা এদের মধ্যে থাকে না। ফ্লোরে এদের সঙ্গে দু-তিন দিন কাজ করবার পরেই আমি বুঝে গিয়েছিলাম এরা কতটা সক্ষম।
লিভ ইন নিয়ে আমাদের সমাজে ২০২১- দাঁড়িয়েও ছুৎমার্গ রয়েছে। সেই বিষয়টা কীভাবে তুলে ধরেছো?
--লিভ ইন এখানে গল্পের প্রয়োজনে এসেছে। লিভ ইন নিয়ে সত্যি এখনও অনেকের নাক সেঁটাকানো রয়েছে, তবে ধীরে ধীরে দুনিয়া বদলাচ্ছে। হোমো-সেক্সুয়ালিটি নিয়েও আজকাল সাধারণ মধ্যবিত্ত বাড়ির দৃষ্টিভঙ্গি বদলাচ্ছে। বিয়ের বাইরের সম্পর্ক, লিভ ইন নিয়ে আগে যেমন মানুষ একদমই মেনে নিত না। সেখান থেকে একটা মধ্যপন্থা খুঁজে নেওয়ার চেষ্টা চলছে।
প্রেম-টেমের মিউজিক নিয়ে কী বলবে? বিশেষত টলিগঞ্জে ডেবিউটান্ট মাহমিত শাকিবকে নিয়ে
নতুনদের নিয়ে ছবি তো, আমরা একটা নতুন গলা খুঁজছিলাম। আর এই গানটা (তাকে অল্প কাছে ডাকছি) যে কম্পোজ করেছে এবং লিখেছে সেই শিবব্রত বিশ্বাস সেও কিন্তু নবাগত। আমাদের চন্দ্রবিন্দু ব্যান্ডের সবচেয়ে কনিষ্ঠ সদস্য। সেও প্রথমবার মিউজিক কম্পোজার হিসাবে কাজ করল। ইউটিউবে মাহতিমের গান শুনে আমার খুব ভালো লেগেছিল। আমি সত্যি খুশি আর গর্বিত ওঁরা (মাহতিম-শিবপ্রসাদ) এই গানটা তৈরি করে এই জায়গা নিয়ে গেছে। তবে বাকি অনান্য গানগুলোর জন্যও আমি খুব ধন্যবাদ জানাবো প্রসেন (তোমারই তো কাছে), শান্তনু-শ্রেয়া-পাপন (কাছে থেকো) এবং অনুপমকে (জলফড়িং)।
প্রেম টেম অম্পূর্ন খগেন ছাড়া। এই মিষ্টি সারমেয়র সঙ্গে শ্যুটিংয়ের অভিজ্ঞতা কেমন ছিল?
আমার প্রোডাকশন ম্যানেজার দীপঙ্কর ওর খোঁজ দেয়। সে বলে বম্বে থেকেই কুকুর আনা শ্রেয়। ছবিটা করবার সিদ্ধান্ত নেওয়ার পর সবার আগে খোঁজ করা হয়েছিল খগেনের। আমি সেখানে গিয়ে ওকে খুঁজি।একটা গোটা বিকাল ওকে নিয়ে আমি দৌড়াদৌড়ি করেছিলাম। ওর মালিক আমায় আশ্বস্ত করেছিল যে খুব কথা শোনে। আমাদের ৮-১০ দিন শ্যুটিং হয়ে যাওয়ার পর খগেন শ্যুটিং শুরু করে। আমি খুব ভয়ে ছিলাম, কারণ এত সুন্দর গতিতে চলছিল ছবিটা, যদি কুকুরটা ঠিকভাবে কাজ না করতে পারে তাহলে সব গন্ডোগোল হয়ে যাবে। তবে প্রথম যে শটটা ও দিল, রাজি আর পাবলো দুজনে বসে আছে- পাবলো রাজির কাঁধে মাথা রাখবে আর খগেন পিছন থেকে এসে মাথাটা মাঝখানে ঢুকিয়ে দেবে। এটা সিঙ্গল লেনথের প্রায় ৪০ থেকে ৫০ সেকেন্ডের একটা লং শট, এটা হওয়ার পর গোটা ইউনিট হাততালি দিয়ে ওঠে। আমরা তখনই বুঝে গিয়েছিলাম এই ছবিটা খগেন একাই টেনে নিয়ে যাবে।
করোনার জন্য মুক্তি পিছিয়েছে প্রেমের সপ্তাহে রিলিজ করল প্রেম টেম।
গত বছর মে মাসে মুক্তি পাওয়ার কথা ছিল। তবে করোনার জন্য আমরা সকলেই এফেক্টেট হয়েছি। ফাইনালি যে এটা মুক্তি পেল সেটাই যে কত বড় খুশির আর আনন্দের বিষয় আমাদের সেটা বলে বোঝাতে পারব না। আশা করছি দর্শকরা হলে এসে ছবিটা দেখবেন। সেটাই আমাদের সবচেয়ে বড় প্রাপ্তি হবে।