বাংলাদেশের শিল্পসাহিত্য জগতে সাদাত হোসাইন ইতিমধ্যেই একটা ব্র্যান্ড। তবে নিজেকে তিনি কবি বা সাহিত্যিক নন, পরিচয় দেন স্টোরিটেলার বলে। ওপার বাংলায় তিনি এখন সাহিত্য জগতের 'হার্টথ্রব'। সীমানা পেরিয়ে এপার বাংলার 'কাজল চোখের মেয়ে'দের মধ্যেও তাঁর জনপ্রিয়তা দেখার মতো। ভ্যালেন্টাইনস ডে থেকে শুরু করে ভালোবাসা, সবকিছু নিয়ে তাঁর অনুভূতি হিন্দুস্তান টাইমস বাংলা-র কাছে ব্যক্ত করলেন তিনি। শুনলেন রাহুল মজুমদার।
ভালোবাসা দিবস এলেই লোকে নানান টিকা টিপ্পনি কাটে। ভালোবাসার নানান ধরন, সংজ্ঞার কথা জানতে চায়। এইসব দিবস টিবস কেন দরকার সেসব নিয়ে প্রশ্ন তোলে। অর্থাৎ নানারকম সংশয়, সংস্কার, শঙ্কার কথা বলে।
আমি বরং বলি কী, ঘৃণার চেয়ে তো ভালোবাসা ঢের ভালো,তাই না? আজকাল তো চারদিকে কেবল ঘৃণার ছড়াছড়ি। ফেসবুকের কমেন্ট বক্স জুড়ে ঘৃণা। পত্রিকার পাতা, ফুটপাতের দেয়াল থেকে শুরু করে এখানে-সেখানে সব জায়গাতেই ঘৃণা, অসহিষ্ণুতার ছড়াছড়ি । ধর্ম, জাতি, বর্ণ, রাষ্ট্র, রাজনীতি,পথ, মত সবখানেই কেবল বিভেদ আর বিভেদ। ঘৃণা আর ঘৃণা। সেখানে লোকে যদি কখনও ভালোবাসাকে উদযাপন করতে চায়, তো তাতে ক্ষতি কী? তা সে যেমন ভালোবাসাই হোক না কেন! এত এত বিভেদ আর বিচ্ছিন্নতায় ভালোবাসার মতো এমন প্রগাঢ় আচ্ছন্নতা, সম্প্রীতি, সংযুক্ততা কি আর আছে? এই যে হাসিমুখ মানুষ, রঙিন প্রজাপতির মতো ডানা মেলে উড়ে বেড়াচ্ছে, এর চেয়ে সুন্দর দৃশ্য আর কী আছে?
ফলে আমার মনে হয় না, এ নিয়ে এত টিকা টিপ্পনির কিছু আছে। বরং মানুষ সবসময়ই ভালোবাসায় অবগাহন করুক। আবার আলাদা করে একটি দিনও উদযাপন করুক। আরও বেশি ভালোবাসতে শিখুক মানুষ । মুছে দিতে থাকুক বিভেদের বেড়াজাল । সেই ভালোবাসা প্রিয়তম নারী কিংবা পুরুষের জন্য যেমন হোক। তেমনি হোক সব মানুষের প্রতিও। প্রকৃতি ও প্রাণীর প্রতিও। আমরা যদি ভালোবাসতে শিখি, তাহলে তা ধীরে ধীরে ছড়িয়ে পড়বে চতুর্দিক। তখন আমাদের আর রুখবে কে?
এই প্রকৃতি তখন আর রুদ্র হবে না। দিকে দিকে বোমা পড়বে না। মানুষ মরবে না। যুদ্ধ হবে না। বুলেটের বদলে ছুটে আসবে ফুল। বারুদের বদলে সম্প্রীতির সুঘ্রাণ। ঘৃণার বদলে ভালোবাসা। মানুষ ভালোবাসতে শিখলে ঘৃণা যাবে নির্বাসনে। সুতরাং, ভালোবাসা উদযাপিত হোক ১৪ই ফেব্রুয়ারি ভ্যালেন্টাইন ডে তে যেমন। তেমনই প্রতিদিনই। প্রিয় মানুষের প্রতি যেমন, তেমনি প্রকৃতি ও সকল প্রাণের প্রতিও। যদি তাই হয়, তাহলে আমাদের পৃথিবী সত্যিকার অর্থেই হয়ে উঠবে স্বপ্নের আবাসভূমি ।
এই যে ভালোবাসতে গিয়ে ভালোবাসাহীনতায় কিংবা বিচ্ছিন্নতায় তরুণরা ভেঙেচুড়ে যায়, চূর্ণ হয়ে যায়, তাদের উদ্দেশ্যে আমি কী বলব? আমার ভাবনা কী? আমি বলি কী, ভালোবাসা কেন এত মহার্ঘ্য? বিচ্ছেদ আছে বলেই, তাই না? যন্ত্রণা না থাকলে তা উপশমের আনন্দ কি আমরা পেতাম? কিংবা দুঃখ না থাকলে সুখের অনুভব? অপ্রাপ্তি না থাকলে প্রাপ্তি?
পেতাম না। ফলে ভালোবাসাটা এত মহার্ঘ্য ওই বিচ্ছেদ কিংবা বিচ্ছিন্নতা আছে বলেই। তাই ওটাকেও মেনে নিতে হবে। ভেঙেচুরে যাও, দুঃখ পাও, তাতে ক্ষতি নেই। তবে আবার উঠে দাঁড়াতে হবে। কারণ, এই পৃথিবী জুড়ে অসংখ্য ভালোবাসা ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে। তাহলে আমরা কেন কেবল দুঃখকেই কুড়োব? বরং যদি উঠে দাঁড়াই, চোখ মুছে আবার তাকাই, দেখব, কত কত ভালোবাসা আমাদের অপেক্ষায়। তাই দুঃখ পেলেও তা যেন আমাদের নিশ্চল, নিশ্চিহ্ন করে দিতে না পারে। বরং হয়ে উঠতে পারো উঠে দাঁড়াবার, স্বপ্ন দেখবার শক্তি। আমি আমার কবিতার ভাষাতেই বলি -
'চোখ মুছে দেখো ঘুচে গেছে সব নোনা জলে লেখা দাগ,
ভেঙে যাওয়া তুমি উঠে দাঁড়ালেই আঘাতেরা হতবাক!'
সুতরাং ভালোবাসা ধ্বংস নয়, হোক সৃষ্টি, সম্ভাবনা ও শক্তির নব নব উৎস।