'ডান্স বাংলা ডান্স'-এর দর্শকাসন থেকে মীরাক্কেলের প্রতিযোগী। তারপর 'ভাষা' হয়ে সকলের মনজয় করে নেন তিনি। পথ চলা শুরু হয় 'কানামাছি'র 'কথা'র। ধীরে ধীরে হয়ে ওঠেন দুষ্টু 'অলক্ষী'। কিন্তু এরপরই ছন্দপতন, আসে লম্বা বিরতি। তবে বিরতিতে থেমে যায়নি তাঁর কাজের গতি। 'মেয়েদের ব্রত কথা' হোক বা ঝাঁঝ 'লবঙ্গ' সব ক্ষেত্রেই সাবলীল অভিনেত্রী আবার কেড়ে নেন লাইম লাইট। বর্তমানে তিনি আকাশ আটের পর্দায় 'আরতি', খুঁজে চলেছেন নিজের জীবনের সূর্যকে। তবে বাস্তবে সেই সূর্যের খোঁজ তিনি পেয়ে গিয়েছেন। সদ্যই সাতপাকে বাঁধা পড়েছেন জয়িতা গোস্বামী। বিয়ের পর প্রথম কাজ, অভিজ্ঞতাটা ঠিক কী রকম? জীবনই বা কতটা বদলেছে? হিন্দুস্তান টাইমস বাংলাকে একান্ত সাক্ষাৎকারে জানালেন অভিনেত্রী।
বিয়ের পর প্রথম কাজ, কতটা পার্থক্য অনুভব করছেন?
জয়িতা: আমার জীবনে খুব একটা পাল্টে কিছুই যায়নি কিছুই। আগে শ্যুটিংয়ের দিনগুলোতে আমার মা খাবার বানিয়ে দিতেন, এখন আমার শ্বশুর খাবার বানিয়ে দেন। তাছাড়া বর্তমানে আমার শ্বশুরবাড়ি যেখানে, ওই এলাকায় আমি মা-বাবার সঙ্গে প্রায় দু'বছর ধরে আছি। ফলে যাতায়াতেও কোনও সমস্যা হয় না।
জয়িতার জীবনে তো তেমন বদল আসেনি, কিন্তু কখনও ইতিবাচক কখনও নেতিবাচক বদলে যাওয়া সব চরিত্রের সঙ্গে নিজেকে কীভাবে পর্দায় তুলে ধরেন?
জয়িতা: এটা না হয়ে যায়। একজন অভিনেতার কাছে নেগেটিভ-পজেটিভ দু ধরনের চরিত্র সমান ভাবে করতে পারার সুযোগ পাওয়াটা অনেক বড় ব্যাপার, পাশাপাশি খুব আনন্দেরও। আমি যে সব রকমের কাজ করতে পারছি এটা আমার অনেক বড় পাওয়া। আর আমি অনেক ছোট থেকে অভিনয় করি। ফলে এই বদলে আমার তেমন সমস্যা হয় না। যখন যে চরিত্র আমাকে হয়ে উঠতে হয়, তখন সেই চরিত্রের ধাঁচে নিজেকে ফেলি, তাই কাজটা আরও সহজ হয়ে যায়।
যার যেথা ঘর-এ তো আপনার চরিত্রটা সাহিত্য নির্ভরশীল, সেটা জন্য কি আলাদা করে প্রস্তুতি নিতে হয়েছে?
জয়িতা: আরতি হয়ে উঠতে গেলে জানতাম ওর জীবনের গল্পটাকে আগে বুঝতে হবে। তাই গল্পটা ভালো করে প্রায় ৩ ঘণ্টা ধরে পড়েছিলাম। আর গল্পটা এতটাই ভালো যে ছেড়ে উঠতে পারিনি, সেদিন রাতের খাওয়া বাদ দিয়ে এটা পড়ে শেষ করি। তারপর চরিত্রটা নিয়ে ভাবনা চিন্তা শুরু হয়, আমি কী কী করতে পারি, সেটা নিয়েও পরিচালকের সঙ্গে অনেক আলোচনা হয়। তারপর তো এখন দর্শকরা দেখছেনই পর্দায়, বাকিটা তাঁরাই বলবেন।
দর্শকরা তো মাঝে তাঁদের প্রিয় নায়িকাকে পর্দায় দেখতে পাননি…
জয়িতা: হ্যাঁ, পড়াশোনার জন্য কিছুটা বিরতি নিতে হয়েছিল।
এই বিরতিতে তো অনেক নতুন মুখ এসেছে, ফিরলেন যখন সমস্যা হয়নি, নাকি পথটা মসৃণই ছিল?
জয়িতা: কোনও কিছুই মসৃণ নয়, নিজের ইচ্ছায় বিরতি নেওয়া যায় কিন্তু ফেরাটা নিজের ইচ্ছায় পুরোটা হয় না। তার জন্য অপেক্ষা আর ধৈর্য্যর প্রয়োজন। আমি যখন বিরতি নেব ঠিক করি তখন অনেকেই আমাকে বারণ করেছিলেন। বলেছিলেন এটার কোন প্রয়োজন হয় না, অনেকের সঙ্গে এ নিয়ে রাগারাগি হয়েছিল। প্রচুর কাজের অফার আমি ফেরাই তখন। সেই সময় যারাই ফোন করতেন তাঁদেরই না করেছি। তাই অনেকেই ভাবতে শুরু করেন আমি হয়তো আর কাজই করব না। অনেকের সঙ্গে এই নিয়ে তিক্ততাও হয়। তবে তারমধ্যেও কয়েকজন ছিলেন যারা বলেছিলেন যে যদি আবার কাজে ফিরি তাহলে যেন তাঁদের সঙ্গে যোগাযোগ করি। তো, যখন ফিরব ঠিক করি তখন তাঁদের জানাই, তবে সঙ্গে সঙ্গে যে কাজ পেয়ে গিয়েছিলাম তা নয়। বেশ কিছু মাস অপেক্ষা করতে হয়, তারপর 'মেয়েদের ব্রতকথা'র অফার আসে। তারপর 'রামপ্রসাদ'-এর। তবে যখন 'রামপ্রসাদ'-এর জন্য জানায়, তখন ওনারা বলেন যে 'কাজ করবি না জানি, কিন্তু তাও একবার ফোন করলাম'।
এই যে বললেন 'তিক্ততা', পরবর্তীতে কী এর কোনও প্রভাব কাজে পড়েছিল?
জয়িতা: না, আসলে আমি যখন একটার পর একটা কাজে না করতে থাকি তখন একটা সমস্যার শুরু হয়। ২০১৯-এও আমাকে ওনারা কাজের জন্য অফার করেন, কিন্তু আমি সেই কাজটা না করার কারণে একটা বড় গণ্ডগোল হয়। তবে বিরতির পর যখন ফিরলাম সবটা অদ্ভূত ভাবে মিটে য়ায়। তাঁদের সঙ্গে কাজ করারও সুযোগ পাই, এখন আর কোনও তিক্ততা নেই।
কিন্তু বিরতির যে সিদ্ধান্ত নেন, সেটাতো বেশ সাহসী ছিল, সেটা নিয়ে অনুশোচনা হয়নি কখনও?
জয়িতা: ভেবেছি হয়তো, যে এরপর আদেও আমার কাছে কাজ আসবে কিনা। কিন্তু নিজের নেওয়া সিদ্ধান্ত নিয়ে কখনওই অনুশোচনা হয়নি। বরং আমার মধ্যে একটা বিষয় রয়েছে আমি যে কাজ করব বলে স্থির করি তা পুরো না করে ছাড়ি না। পড়াশোনাটা কীভাবে ছাড়তাম? তাই পড়ার জন্য কিছুটা বিরতি নিতেই হল। শুধু তাই নয়, মাকেও পাশে পেয়েছি, উনি আমাকে অনুশোচনা যাতে না করি তা বোঝাতেন।
কী বলতেন মা? যতদূর জানি আপনার কেরিয়ারে তো মায়ের অনেকটা অবদান রয়েছে…
জয়িতা: হ্যাঁ, মা সব সময় পাশে থেকেছেন। যখন বিরতির সিদ্ধান্তটা নিলাম তখন মা বলেছিলেন, 'তুমি নিজের ইচ্ছায় বিরতি নিচ্ছ, ফলে এরপর কাজ না পেলেও সেটা তোমার সিদ্ধান্তের কারণেরই হবে। কিন্তু এটা নিয়ে কখনও অনুশোচনা করবে না। আমি সব সময় তোর পাশে আছি।' মীরাক্কেলের সময় থেকেই মা ভীষণ সাপোর্ট করে এসেছে আমাকে।
হ্যাঁ মীরাক্কেল দিয়ে তো শুরু, পরে মনে হয়নি এটা নিয়ে এগিয়ে যাওয়ার কথা?
জয়িতা: মানে... ঠিক বুঝলাম না।
মানে, যে সময়টা আবার ফিরবেন ভাব ছিলেন, তখন মনে হয়নি নিজের মতো করে স্যোশাল মিডিয়ায় মজাদার কনটেন্ট বানানো বা ওই ধরনের কিছু?
জয়িতা: 'ডান্স বাংলা ডান্স'-এর পারফর্মার ছিল আমার দিদি। তো আমি যখন দেখতে যেতাম তখন অনেক সময় অরিত্ররা আমাকে মঞ্চে ডেকে নিত, সেখান থেকেই পরে মীরাক্কেলের জন্য ডাক পাই। অডিশনে সিলেক্ট হয়ে যাই। কিন্তু বাস্তবে আমি একটু চুপচাপ প্রকৃতির মানুষ। তাই এই ধরনের কনটেন্ট বানাবো তা কখনওই ভাবিনি। তবে হ্যাঁ, মজাদার চরিত্রে যদি অভিনয় করতে হয় সেটা আমি করতে ইচ্ছুক।
মজাদার চরিত্র তো বুঝলাম, আর কী কী ধরনের কাজের ইচ্ছে রয়েছে?
জয়িতা: আমি একটু বেছে কাজ করি। যে কোনও কাজ পেলেই, হ্যাঁ বলে দিতে পারিনা। এমন কী অনেকদিন বসে আছি, পর পর এমন চরিত্র আসছে যা পছন্দ নয়, কিন্তু কাজ না থাকার জন্য তারমধ্যে থেকেই একটা করে নেব এমনটা পাড়ি না। সেখানে আমার অনেক কিছু করার থাকে সেই ধরনের চরিত্রই করি। নিজের মতো থাকি।
নিজের মতো থাকেন! কিন্তু অনেকেই যে বলতে শুনি ইন্ড্রাস্টিতে বন্ধু না থাকলে, পার্টি বা অনুষ্ঠানে না গেলে কাজ পেতে সমস্যা হয়…
জয়িতা: সেটা হলে তো আমি কাজই পেতাম না। আমার খুব একটা বন্ধু নেই ইন্ড্রাস্টিতে, পার্টিতেও খুব একটা যাই না। আর গেলেও সেখানে আমার সঙ্গে আমার বাড়ির লোকের থাকাটা খুব প্রয়োজন। তবে, এটাও আবার অনেক সময় দেখি, এমন অনেককে আছেন যারা লাইটটাও নিতে পারে না অথচ একটার পর একটা কাজ পেয়ে যাচ্ছেন। স্যোশাল মিডিয়ায় চোখ রাখলে, তাঁদের পার্টি করতেও দেখা য়ায়। তবে নিজেদের কাজে মন দিয়ে কাজ পাচ্ছেন নাকি বন্ধুত্ব করে তা অবশ্য জানি না। আসলে দুটোই হয়।
আবার অনেকে বলেন স্যোশাল মিডিয়ায় ফলোয়ারের উপরও নাকি এখন কাজ পাওয়া অনেকটা নির্ভর করছে?
জয়িতা: হ্যাঁ, সেটা তো খুবই দুর্ভাগ্যজনক। হতে পারে কোনও একজন অভিনেতা-অভিনেত্রী যিনি বহুদিন ধরে কাজ করছেন, তিনি একটা চরিত্র হয়তো খুব ভালো করতে পারতেন। কিন্তু তাঁর জায়গায় এরকম কাউকে বেছে নেওয়া হচ্ছে কেবলমাত্র ফলোয়ার্সের জন্য। সেটা তো সত্যিই খুব খারাপ। কিন্তু সেটাতে কিছু করার নেই। তবে অনেকেই এখনও পর্যন্ত আগের কাজটা দেখেই নেন এটা একটা ভালো ব্যাপার।