ছোটপর্দার বেশ পরিচিত ও জনপ্রিয় মুখ তিনি। বহু ধারাবাহিকের কেন্দ্রীয় চরিত্রে তিনি মন কেড়েছেন। শেষবার তাঁকে আপনারা দেখেছেন 'রাঙা বউ' সিরিয়ালে। আর এবার জি বাংলার ‘পুবের ময়না’ ধারাবাহিকের হাত ধরে আরও একবার দর্শক দরবারে হাজির হয়েছেন অভিনেতা গৌরব রায় চৌধুরী। এবার তিনি ‘রোদ্দুর’।
তবে এবার আগের চরিত্রগুলির থেকে অনেকটাই বদলে অন্য ধাঁচের একটা চরিত্রে তাঁকে দেখবেন দর্শকরা। এমনটাই দাবি খোদ গৌরবের। নিজের নতুন ধারাবাহিক 'পুবের ময়না' সহ আরও নানান টুকিটাকি বিষয় নিয়ে Hindustan Times Bangla-র সঙ্গে খোলামেলা কথা বললেন গৌরব রায় চৌধুরী।
‘পুবের ময়না’, আরও একটা নতুন সিরিয়াল, এখানে দর্শক নতুন কী পাবেন?
গৌরব: এই গল্পটা আসলে দুই বাংলাকে মিলিয়ে দেবে। দুই বাংলার দুই ভিন্ন ধরনের মানুষ কীভাবে একছাদের তলায় থাকবেন, তাঁদের জীবন কীভাবে এগোবে, দুটি ভিন্ন মানুষের ভাবনা চিন্তা, দুটো পরিবারকে এক সুতোয় কীভাবে লীনাদি (লীনা গঙ্গোপাধ্যায়) গেঁথেছেন, সেটাই এখানে আসল বিষয়। এই ধারাবাহিকের পরতে পরতে চমক রয়েছে।
আর এই সিরিয়ালের সবথেকে বড় বিষয় হল 'ইমোশন' (আবেগ)। এই বাংলার অনেকেই আছেন, যাঁদের পূর্বপুরুষ ওপার বাংলায় থাকতেন। কারোর কারোর পরিবারের এখনও অনেকে পূর্ব বাংলায় থাকেন, এমনও হয়ত রয়েছে। তাই এই সিরিয়ালটা দর্শকদের একটা অন্য আবেগে বেঁধে ফেলবে বলে মনে হয়। হাসি, মজা, আরও অনেককিছুই এখানে রয়েছে, তবে পুবের ময়নার মূল ইউএসপি-ই হল ইমোশন (আবেগ)। দুই দেশ, দুই বাংলার কথা যেখানে থাকবে, সেখানে আবেগটা চলেই আসে। আসলে আমরা কিন্তু সবাই বাঙালি।
'রোদ্দুর' আর গৌরব দুটি চরিত্রের কি কোনও মিল বা পার্থক্য আছে?
গৌরব: তা কিছুটা আছে। রোদ্দুর পড়াশোনা করতে ভালোবাসে, আমিও তা বাসি। রোদ্দুর ভীষণভাবে ফ্যামিলি ম্যান। আমিও পরিবারকে নিয়েই বাঁচি। তবে রোদ্দুর চরিত্রের মধ্যে অনেক শেড আছে, অনেক আবেগ আছে। আর আমি ভীষণ বাস্তববাদী। আমি মানুষটা আসলে খুব সাধারণ, টাকা বাঁচিয়ে চলতে পছন্দ করি, আমার কাছে ১ টাকার যতটা গুরুত্ব, অনেক টাকারও সেই একই গুরুত্ব।
এখন তো একটু এদিক ওদিক হলেই সিরিয়াল বন্ধ হয়ে যাচ্ছে, সেক্ষেত্রে 'পুবের ময়না' নিয়ে কতটা আশাবাদী?
গৌরব: TRP ফ্যাক্টর বরাবরই ছিল, থাকবেও। কারণ দর্শকরাই তো শেষ কথা বলেন। তবে আবেগকে পুঁজি করে এটা যে ধরনের গল্প, তাতে এটা নিয়ে আমি বড্ড আশাবাদী। বাকিটা দর্শকই বলবেন।
সিরিয়ালে রোদ্দুরের পরিবার এপার বাংলার, আর ময়না বাংলাদেশ থেকে এসেছে। ব্যক্তিগত জীববে তোমার পরিবারের সঙ্গে কি ওপার বাংলার কোনও যোগ আছে?
গৌরব: আমি আসলে বাটি। (হাসি) আমার পূর্বপুরুষদের একটা অংশ। মানে বাবার পরিবার বরিশালের। আর মা ঘটি। তাই আমি চিংড়িও খাই, ইলিশও খাই। আমি বিভিন্ন কিছু বাটাও খাই আবার ওপারের বিভিন্নরকম ভুনাও খাই। তবে বরিশালের রান্নাটা আমি বড্ড পছন্দ করি। কিছু কিছু জিনিসের ভাগ হয়না। তবু মাঝখান দিয়ে পদ্মনদী বয়ে গিয়েছে। তারপরেও আবেগটা কিন্তু একই থেকে গিয়েছে।
রান্নার কথা যখন এল, একটা কথা জানতে চাইব, আপনি নিজে কি কখনও রান্না করেছেন?
হ্যাঁ, অবশ্যই। আমার বাবা-মা দুজনেই কাজে ব্যস্ত থাকতেন। তাই অল্প বয়সেই আমি ঠাম্মারর কাছে শুনে শুনে মা-বাবার জন্য রান্না করতাম। শুরুর দিকে ভাত, ডাল, বেগুনভাজা এগুলোই করতাম, আবার সঙ্গে পড়াশোনাও করতাম। তারপর মটন, চিকেন সবই বানাতে শিখেছি। এখন যদিও ব্যস্ততার জন্য রান্নাটা সেভাবে করা হয়ে ওঠে না। তবে স্পেশাল কিছু, বা নিজে আবিস্কার করে কখনও কখনও এটা ওটা বানাই। এই তো সেদিন একটা হেলদি স্মুদির রেসিপি বানিয়েছিলাম। নিজে থেকেই, কোথাও দেখে নয়। তাতে নানান কিছু উপকরণ ছিল, আবার খেতেও ভালো হয়েছিল আমার একটা বন্ধুর সেটা খেয়ে দারুণ লেগেছে। আমার মা তো রান্না করতেনই, তবে বাবাও খুব ভালো রান্না করতেন, আর সেখানে একটা শিল্প ছিল। বাবা আসলে রেসিপি নিয়ে গল্প করে করে রান্না করতেন। সেটাই হয়ত আমিও পেয়েছি।
পর্দার ‘রোদ্দুর’ অর্থাৎ গৌরব রায়চৌধুরীকে তাহলে খাদ্য রসিক বলা যায়?
গৌরব: হ্য়াঁ, আমি খাদ্যরসিক তবে গত তিনমাস ধরে শুধুই সবজি সিদ্ধ খেয়ে কাটাচ্ছি। তাও আবার নুন, চিনি ছাড়া। আসলে এই চরিত্রে আমাকে যাতে একটু অন্যরকম লাগে, তাই ওজন কমাচ্ছি। কারণ আমি তো অনেক কাজই করেছি, তাই একটু লুক চেঞ্জ করতে চাইছি।
ঐশানির সঙ্গে এটা তো প্রথম কাজ। ওর সঙ্গে রসায়নটা কতটা তৈরি হয়েছে?
গৌরব: ঐশানি খুবই মিষ্টি মেয়ে। আমার থেক ও অনেকটাই ছোট। যদিও শিল্পীর কোনও বয়স হয় না। তবে এই গল্পে আমাদের বয়সের ফারাক অনেকটা হলেও আবেগই এখানে শেষ কথা বলবে। এইটুকু বয়সেও ও যেভাবে ডায়ালগ বুঝে অভিনয় করছে, তা সত্যিই মুগ্ধ করার মতোই। দর্শকরা দেখলেই সেটা বুঝতে পারবেন।
ব্যক্তিগত জীবনে গৌরবের লাভ লাইফ কেমন চলছে?
গৌরব: এই বিষয়টা নিয়ে আমি এখন সত্যিই কথা বলতে চাইনা। আমি এখন শুধুই পুবের ময়না নিয়ে খুশি থাকতে চাই।
ব্যক্তিগত জীবনে আমি আসলে একটু বাস্তববাদী। আমি সেই অভিনেতাদের মধ্যে পড়িনা যে আজ অভিনয়, কাল একটু নিজের পিআর করে নিলাম। আমি খুব একটা প্রচারে থাকতে পছন্দ করি না। আমি এডিট করি, পড়াশোনা করি, আবার ক্যামেরার বিষয়টাও বুঝি। যাঁরা আমার শিক্ষাগুরু এই ইন্ডাস্ট্রিতে, তাঁরা হলেন টেকনিশিয়ানস। আমি খুব কষ্ট করে এই জায়গাটা তৈরি করেছি। আবার ডিরেকশনের কাজও করছি। অমি শুধু একটাই কথা বুঝি, অভিনয় করলে অভিনয়টা শিখতে হয়, নিজেকে আপডেট করতে হয়। বিশ্বাস করি আমার রোজগার যদি ২টাকাও হয়, সেটাই যেন স্বীকার করতে পারি। শো-অফ করা আমার পছন্দ নয়, আমি খুবই সাধরণ। শুধু অভিনয়ের জন্যই আমি চরিত্র হয়ে উঠি। তখন পরিচালক, প্রযোজক যা বলেন আমি শুনি। তবে শটের সেটে আমি অন্যমানুষ। ১২ বছর আগে আমি যেমন ছিলাম, আমি আজও সেভাবেই বাঁচি।
আসলে যে মানুষটা ডাল-ভাত খেয়ে দিনের শেষে আমার সিরিয়ালটা দেখছেন, আমাকেও তাঁদের সঙ্গে কানেক্ট করতে হবে তো। শো-অফ করে, নিজেকে বিশাল দেখিয়ে কী করব! আমি নিজের শিকড়কে ভুলি না।
প্রযোজনা সংস্থা খুলেছিলেন, সেই কাজ কেমন চলছে?
হ্যাঁ, প্রযোজনা সংস্থা খুলেছি। অভিনয় ছাড়াও আমি এখন প্রম্পট ইঞ্জিনিয়ার হয়ে গিয়েছি, এডিটরও হয়েছি। সবরকম কাজ করছ। প্রযোজনা সংস্থাটাও বাড়াচ্ছি। এগুলো নিয়েই এগোচ্ছে, সঙ্গে অভিনয়টাও করছি। তবে থিয়েটারটা এখন আর করা হয়না।