হাতে আর কয়েকটা দিন। আগামী ১২ মে মুক্তি পাচ্ছে ঋতাভরী-আবির জুটির 'ফাটাফাটি'। তাই আপাতত ছবির প্রচারের জন্য দৌড়ঝাঁপের মধ্যেই কাটছে ঋতাভরী চক্রবর্তীর সময়। তারই ফাঁকে গাড়িতে যেতে যেতেই হিন্দুস্তান টাইমস বাংলার সঙ্গে কথা বললেন 'ফুল্লরা'।
কেমন চলছে সবকিছু?
ঋতাভরী: ফাটিয়ে (এক গাল হাসি)। আসলে ছবিটা নিয়ে একটা ক্রেজ তৈরি হয়েছে, খুূবই ব্যস্ততার মধ্যে কাটছে। বুঝতেই পারছেন আমার গলা ভেঙে গেছে। কিন্তু তারপরও আমি সবকিছুই 'ফাটাফাটি' উপভোগ করছি।
'ফাটাফাটি'র জন্য একসঙ্গে অনেককিছু করতে হয়েছে? কীভাবে প্রস্তুত হয়েছিলেন?
ঋতাভরী: অস্ত্রোপচারের ফলে আমার ৫-৬ কিলো ওজন তো বেড়েই ছিল। এটা সবাই জানে। তারপর ফাটাফাটি করার জন্য আরও ১৯ কিলো বাড়াই। মোট ২০ কিলো বাড়াতে চেয়েছিলাম। সবমিলিয়ে ২৫ কিলো +-এর ঋতাভরী। ভাবতে পারছো! এগুলো তো ছিলই, তার উপর চরিত্রের মতো করে তৈরির করার একটা বিষয় ছিল। আমি ছোট থেকেই খুব আত্মবিশ্বাস নিয়েই বড় হয়েছি। কিন্তু ফুল্লরার ক্ষেত্রে সেটা নয়। ও মুটকি, ঢেপসি, হাতি, এসব শব্দ শুনে বড় হয়েছে, তাই ওর এত আত্মবিশ্বাস নেই। পরে ধীরে ধীরে ও কীভাবে নিজেকে তৈরি করেছে, আত্মবিশ্বাস বাড়ায়, সেটা এই ছবিতে রয়েছে, আমাকেও ওই চরিত্রের মধ্যে ঢুকেই সেসময়টা কাটাতে হয়েছে। পুরোপুরি নিজেকে চরিত্রের জন্য তৈরি করতে হয়েছে।
ওজন বাড়ানো বিষয়টাও কিন্তু সোজা নয়, অসুবিধা হয়নি?
ঋতাভরী: হ্যাঁ, তা তো হয়েছেই। বেশ সমস্যা হয়েছে। ওটা অনেকের হয়ত স্বভাবিক ওজন, তবে আমার কিন্তু নয়। যেমন আমার পরিবারে আমার মাসীরই থাইরয়েডের সমস্যার কারণে অনেক ওজন, আমার মাসতুতো দিদিরও PCOD-র কারণে ওজন বেশি। তবে ঋতাভরীর তো কখনও সেটা ছিল না। আমার তাই শ্বাস নিতে সমস্যা হচ্ছিল, এনার্জি লেবেল পড়ে গিয়েছিল, তারপর সিঁড়ি দিয়ে ওঠা, মাটিতে বসলে ওঠা, খুব সমস্য়া হত। তবে ওজন না বাড়ালে আবার চরিত্রটা ঠিকভাবে ফুটিয়ে তুলতে পারতাম না। ওজন বেশি যাঁদের, তাঁদের হাঁটাচলা, ওঠাবসা সবই একটু আলাদা হয়। তাই এটা আমায় করতেই হত। কারণ, অভিনেত্রী হিসাবে শরীরটা আমার কাছে একটা যন্ত্র, সেটা ফুল্লরার জন্য ব্যবহার করতে পেরেছি, আমি খুশি।
আরও পড়ুন-Exclusive Parambrata: 'ফেলুদা' নিয়ে ট্রোলিং, টলিপাড়ায় আর্থিক কেলেঙ্কারি থেকে শিবপুর ছবি ও স্বস্তিকা মুখোপাধ্যায়কে হুমকি, সব নিয়েই মুখ খুললেন পরমব্রত...
কিন্ত ওজন বাড়ালে কীভাবে? তাও আবার এতটা?
ঋতাভরী: আমি অস্ত্রোপচারের পর আমার নিউট্রিশনিস্টকে ফোন করি, বললাম ৬ কিলো ওজন কমাব, বেড়ে গেছে। সামনেই একটি পুলিশ অফিসারের চরিত্রে অভিনয় করব। আর তার ৭ দিনের মধ্যে 'ফাটাফাটি'র চিত্রনাট্য় পেয়ে ঠিক করি, ছবিটা করব। ব্যাস ওমনি সিদ্ধান্ত বদল। আবারও ওকে (নিউট্রিশনিস্ট) ফোন করে বললাম ২০ কিলো বাড়াব। ও তো শুনে অজ্ঞান হয়ে যাবে প্রায়। আর এরপরেই লুচি আলু, এসব আমার পাতে অনেক বেড়ে গেল। আমার নিউট্রিশনিস্ট যদিও ফাস্টফুড ওয়েট চাইছিলেন না, বলছিলেন হেলদি ওয়েতে ওজন বাড়াতে। কারণ, ফাস্টফুডের ওজন পরে কমাতে খুব চাপ হয়। তবে আমি তো নিজেই পিৎজা থেকে শুরু করে পছন্দে সবকিছু খেতে শুরু করে দিয়েছিলাম। (হাসি) ওই সময়টা I cheated a lot।
মজাও পেয়েছিলেন নিশ্চয়? যেগুলো ইচ্ছা থাকলেও খাওয়া হয়না, সেগুলো খাওয়ার সুযোগ করে দিয়েছিল ফুল্লরা!
ঋতাভরী: নাহ আমি আসলে খেতে বেশ ভালোবাসি, ফুডি। তাই পছন্দের এসব খাবার অল্পবিস্তর খাই, তবে রয়ে সয়ে।
এখন কী ওই ২৫ কিলো ওজন কমেছে?
ঋতাভরী: নাহ এখনও হয়নি। ১৯ কিলো হয়েছে। এখনও কমাতে হবে, তবে সুস্থভাবে কমাতে চাই। শরীরকে জোর করে নয়। আমি কোনও চাপ নিচ্ছিও না। যেমনটা শরীরের জন্য ঠিক, সেভাবেই কমাব।
যদিও পরের ছবিটার জন্য খুবই রোগা হতে হবে, শুকনো করতে হবে। আমি ছবির খাতিরে সবকিছুতেই প্রস্তুত।
সেটা কী ছবি?
ঋতাভরী: উম….না (হাসি মুখে, ঘাড় নেড়ে)। এটা বলা যাবে না এখনই…।
এখন কী তাহলে কী খুব কড়া ডায়েট করছ?
ঋতাভরী: না সেটা নয়, আমি বাড়ি খাবর খাই, পরিমিত। যেমন আমার ডায়েটে খিচুড়িও থাকে। কারণ, দুর্বল হলে চলবে না। সুস্থ থেকে তবেই সবকিছু।
আরও পড়ুন-আমাকে একসময় ফ্ল্যাট TV বলা হয়েছে, যেন কেউ খেয়ে নিয়েছে এমনও শুনেছি: ঋতাভরী
আবির চট্টোপাধ্যায়ের সঙ্গে এটাই প্রথম কাজ তো?
ঋতাভরী: নাহ, প্রথম কাজ নয়, এর আগে একসঙ্গে বিজ্ঞাপন সহ আরও কিছু কাজ করেছি। তবে জুটি বেঁধে ছবি এই প্রথম। আবিরদা কিন্তু খুব মিষ্টি। আমি বেশ উপভোগ করেছি। যতদিন 'ফাটাফাটি' করেছি, ততদিন আমি ফুল্লরা আর আবিরদা বাচস্পতি হয়ে একপ্রকার সংসারই করেছি। যদিও স্বামী-স্ত্রীর সংসারে ডিওপি, অরিত্র সবাই ঢুকে রয়েছেন (হাসি)। তবে বেশ মজা করে কাজ করেছি।
এই ছবির জন্য ওজন বাড়ানোর সময় ছাড়া আর কখনও বডি শেমিং-এর মুখোমুখি হয়েছেন?
ঋতাভরী: বহুবার। আমি যখন খুব ত্বন্বী ছিলাম, তখনও আমায় ‘ফ্ল্যাট টিভি’ বলা হয়েছে। ‘ধরলেই ভেঙে যাবে’। ‘ঋতাভরীকে কেউ খেয়ে নিয়েছে’। এমনও প্রশ্ন এসেছে, ‘অভিনয় ছেড়ে দিলি নাকি? এই চেহারায় কাজ করা যাবেনা’। এমন অনেক ভুলভাল কথা বলেছেন। এখন হেসে কথা বলছি ঠিকই, তবে এগুলো খুবই অপমানজনক। তবে আমি জিরো থেকে ট্রিপল এক্সএল, সব সাইজেই কাটিয়েছি। আসলে সমালোচনা হবেই। যেমনই থাকুন, সকলের মন বুঝে চলা যাবে না। তবে একটা বিষয়য় জানি, অসুস্থ হয়ে কিছু করতে চাই না, যা কিছু করব সুস্থতার সঙ্গে। পারফেক্ট মানে কিন্তু রোগা নয়, সুস্থ থাকা।
বডি শেমিং তো শুধু অভিনেতাদের নয়, সব মানুষকেই কখনও না কখনও এর মুখোমুখি হতে হয়। কীভাবে সামলানো উচিত বলে মনে হয়?
ঋতাভরী: প্রথমে বুঝতে হবে যিনি বলছেন, তিনি কি চিন্তিত হয়ে কিছু বলছেন, নাকি অপমান করে! কোন উদ্দেশ্য নিয়ে বলা হচ্ছে? সেটা বুঝে উত্তর দিতে হবে। যদি সত্যিই অপমানজনক হয় সেটা কখনও প্রতিবাদ করতে হবে, কখনও আবার এড়িয়ে যাওয়াই শ্রেয়।
ফুল্লরার স্বামী বাচস্পতি ভাদুড়ি স্ত্রীর পাশে থাকেন, তাঁর যত্ন নেন? আর চরিত্রের বাইরে ঋতাভরীর ক্ষেত্রে তাঁর প্রেমিকও কি ঠিক এমনই?
ঋতাভরী: একদমই। আমি ব্যক্তিগত জীবনে যাঁদের পেয়েছি, তাঁরা আমার পাশেই থেকেছেন। এবিষয়ে আমি সৌভাগ্যবান। যদিও ইন্ডাস্ট্রির মানুষদের ক্ষেত্রে সেটা বলব না।
তথাগত চট্টেপাধ্যায়ের সঙ্গে সম্পর্ক নিয়ে সম্প্রতি বেশকিছুু কথা শোনা যাচ্ছিল, সেবিষয়ে কি বলবে?
ঋতাভরী: না এটা নিয়ে আমি এখন কিছু বলতে চাই না।
ফের কবে বলিউডের ছবিতে দেখা যাব?
ঋতাভরী: খুব শীঘ্রই। এবছরে অনেক চমক আছে। অপেক্ষা করুন…। ২০২৩ আমার জন্য 'চমকিলা' (হাসি)। আপাতত অংশুমান প্রত্যুষের 'আপনজন' ছবিতে আমি আর জিতু (জিতুকমল) জুটি বাঁধছি। এমাসের ১৫ থেকে লন্ডনে শ্যুটিং।
এই যে প্রমোশনের জন্য এত ছুটছেন, কী মনে হয় কনটেন্ট নাকি প্রমোশন কোনটা গুরুত্বপূর্ণ।
ঋতাভরী: দুটোই। তবে খাজনার থেকে বাজনা বেশি হয়ে লাভ নেই। কনটেন্ট বেশি জরুরী। তবে মানুষের কাছে পৌঁছতে হলে অল্পবিস্তর প্রচারেরও দরকার রয়েছে। কারণ, মানুষতো না হলে জানবেও না। তবে সবটাই হতে হবে 'ফাটাফাটি'।