নুসরত জাহানের প্রাক্তন সঙ্গী নিখিল জৈনের বস্ত্র বিপনীর এবারের পুজো-কালেকশনের মুখ সুস্মিতা চট্টোপাধ্যায়। এবার পুজোয় সুস্মিতার কী প্ল্যান? কেমন ভাবেই বা সাজবেন নায়িকা? সবটা নিয়ে হিন্দুস্থান টাইমস বাংলার সঙ্গে খোলা মনে আড্ডা দিলেন অভিনেত্রী।
এবছর সুস্মিতার পুজো প্ল্যান কী?
সুস্মিতা: আমি ঠাকুর দেখতে খুব ভালোবাসি, তাই পুজোয় প্যান্ডেলে প্যান্ডেলে ঘোরার প্ল্যান রয়েছে। তাছাড়া আমি খেতেও খুব ভালোবাসি, তাই অবশ্যই পুজোর কটা দিন একেবারে কব্জি ডুবিয়ে খাওয়া-দাওয়া করব। যদিও আমি সারা বছরই সব রকমের খাবার খাই, কিন্তু পুজো এলে আমার মনে হয় আরও বেশি বেশি করে খাই। আমি মিষ্টি খেতে খুব পছন্দ করি, তাই বেশি করে মিষ্টি খাব। আসলে দুর্গাপুজো আমার কাছে খুব বিশেষ, আমি সারা বছর ধরে এই সময়টার জন্য অপেক্ষা করে থাকি।
আরও পড়ুন: ইন্ডাস্ট্রিতে ২৫ বছর পূর্তি উপলক্ষ্যে 'পু'-এর বেশে সেজে উঠলেন করিনা! জানেন তাঁর গাউনের দাম কত
আর নতুন জামা...
সুস্মিতা: হ্যাঁ, সেটা তো কিনতেই হবে। পুজোয় নতুন শাড়ি পরে অঞ্জলি না দিলে কি চলে?
কাজের জন্য প্রায় প্রতিদিনই তো নতুন জামা পরতে হয়, পুজোয় নতুন জামার যে আনন্দ, সেটা কি এখনও একই রকম?
সুস্মিতা: হ্যাঁ, একই রকম। কাজের জন্য আমাকে নতুন নতুন পোশাক পরতে হয় ঠিকই। কিন্তু সেটা যেহেতু কাজের সূত্রে তাই সেখানে না ওই আনন্দটা থাকে না, যেটা পুজোর পোশাকে থাকে। নতুন জামা পরে ঠাকুর দেখতে যাওয়ার আলাদাই একটা মজা রয়েছে। অন্য কিছুর সঙ্গে এর তুলনা করা যায় না। পুজোয় নতুন জামার একটা অন্যরকম অনুভূতি রয়েছে।
পুজোর চারদিন ট্রেডিশানাল নাকি ওয়েস্টার্ন, কীভাবে সাজবেন?
সুস্মিতা: সারা বছরই তো নানারকম পোশাক পরি, কিন্তু আমার কাছে পুজোর মানেই শাড়ি। পুজোর চার দিনের জন্য আমি আলাদা আলাদা চারটে শাড়ি বেছে রাখি। আমার আরও একটা বিষয় মনে হয় যে, একটা মেয়ে শাড়িতেই সম্পূর্ণা।
পুজোর শপিং কি হয়ে গিয়েছে?
সুস্মিতা: আমার পুজোর কেনাকাটা এখনও শুরু হয়নি। কিন্তু এখন তো আর বেশিদিন বাকি নেই, তাই এবার তাড়াতাড়ি কেনাকাটা সেরে ফেলতে হবে।
আরও পড়ুন: কৌশানীকে কেন ‘টোন ডাউন’ করতে বললেন বনি? প্রেমিককে নিয়ে যা বললেন নায়িকা
আপনার শপিং পার্টনার কে?
সুস্মিতা: আগে আমি মা বাবার সঙ্গেই জামা কাপড় কেনাকাটা করতে যেতাম। এখন ওঁরা আমার সঙ্গে কলকাতায় থাকেন না, তাই এখন আমি শপিং করতে যাই আমার স্টাইলিশ আর মেকআপ আর্টিস্টদের সঙ্গে। ওঁরা দেখে বলে দেন কোনটায় আমায় ভালো লাগবে।
পুজোয় সাজের ক্ষেত্রে কী কী বিষয় মাথায় রাখেন?
সুস্মিতা: কখনওই খুব বেশি সাজগোজ পছন্দ করি না। সব সময় হালকা করেই মেকআপ করতে ভালোবাসি। পুজোতে এমনিও বেশ গরম থাকবে। তাই চুলের ক্ষেত্রে হাত খোপা কিংবা পনিটেল করে নেওয়াটা আমার বেশ ভালো লাগে। আর সাজের আগে দুটো জিনিস তো অবশ্যই মাথায় রাখতে হবে একটা হচ্ছে ময়েশ্চারাইজার আর সানস্ক্রিন। এইগুলো ব্যবহার করতেই হবে। সঙ্গে একটা টিন্টেড ফাউন্ডেশন, হালকা উইং লাইনার, মাস্কারা, ব্লাশ আর লিপস্টিক।
ছোটবেলার পুজো কেমন ছিল?
সুস্মিতা: ছোটবেলায় আমার পুজোটা খুব সুন্দর আর মজাদার হত। এখন তো বিভিন্ন কাজ থাকে, কিন্তু সেই সময় একেবারে নির্ভেজাল আনন্দ থাকত। ছোটবেলায় বাড়িতে মা বাবার সঙ্গে খুব মজা হত। পুজো মানে আমার কাছে বাবা মায়ের হাত ধরে ঠাকুর দেখতে যাওয়া। প্রচুর খাওয়াদাওয়া আর নতুন নতুন জামা। তখন পুজো মানে আমার কাছে ছিল কতগুলো জামা হল সেটা গোনা। এক এক বছর তো ১০-১৫টা পর্যন্ত জামা হত। এখন হাতে গুনে চারটে শাড়ি হয়। সেটা নিয়ে খুব আনন্দে থাকতাম। সেই সময় এত জামা হত যে কখন কোনটা পরব সেটা নিয়ে সারাক্ষণ একটা উত্তেজনা কাজ করত। সবটা মিলিয়ে একটা অন্যরকম আনন্দ ছিল ছেলেবেলার পুজোয়।
পুজো মানেই প্রেম, আপনার কি সেরকম কোনও অভিজ্ঞতা রয়েছে?
সুস্মিতা: স্কুল কলেজে আমার প্রচুর বন্ধু-বান্ধব ছিল। আসতে আসতে তাঁদের সংখ্যাটা কমতে থেকেছে। তাঁদের সঙ্গে প্রচুর ঠাকুর দেখতাম, খুব মজা করতাম। কিন্তু পুজো প্রেম বলে আলাদা ভাবে কিছু হয়নি। কিন্তু যদি ভালো কাউকে পাই, তাহলে এই বছরই পুজোয় প্রেম করব (রসিকতা করে বলেন অভিনেত্রী)। আসলে আমার পুজোটা মা-বাবার সঙ্গেই খুব বেশি করে কেটেছে।
কলকাতায় কি মা-বাবাকে নিয়ে ঠাকুর দেখা হয়?
সুস্মিতা: এবারে মা-বাবাকে কলকাতায় নিয়ে এসে ঠাকুর দেখানোর ইচ্ছে রয়েছে।
এবার তো কলকাতার পরিস্থিতি বেশ উত্তাল, এই শহর কি এখনও মহিলাদের জন্য নিরাপদ? কী বলবেন?
সুস্মিতা: আমার জীবনে অনেক ওঠা ওঠা পড়া এসেছে। আমাকেও অনেক খারাপ পরিস্থিতির সম্মুখীন হতে হয়েছে। কিন্তু যখনই কোনও অন্যায় আমার সঙ্গে হয়েছে, আমি সেটার প্রতিবাদ করেছি। কিন্তু আমার কাছে এই জায়গাটা এখনও নিরাপদ।
ইন্ডাস্ট্রিতেও তো এরকম অনেক ঘটনা শোনা যাচ্ছে, আপনাকে কি কখনও এই ধরনের ঘটনার মুখোমুখি হতে হয়েছে?
সুস্মিতা: আমাকেও অনেক খারাপ পরিস্থিতির সম্মুখীন হতে হয়েছে। তবে যখনই আমার সঙ্গে কোনও অন্যায় হয়েছে, তখনই আমি সেটা বিরুদ্ধে আওয়াজ তুলেছি। সেই জায়গা থেকে সরে আসার চেষ্টা করেছি। আমার সঙ্গে কেউ খারাপ কিছু করলে আমি সবার সামনে মুখের উপরই তা বলে দিয়েছি। তাতে যদি কাজ না পাই না পাব, তাতে আমার কোনও সমস্যা নেই। আমার এই বলার জন্য অনেক কাজও হাতছাড়া হয়েছে। তবে আমার সঙ্গে যে খুব খারাপ কিছু হয়েছে সেটা না।
এবার তো 'রঙ্গোলি' থেকে পোশাক কিনলে পেপার স্প্রে দেওয়া হচ্ছে, আপনার কাছে এর গুরুত্ব কতটা?
সুস্মিতা: হ্যাঁ, এখান থেকে পোশাক কিনলে একটা পেপার স্প্রে উপহার দেওয়া হচ্ছে। এই পেপার স্প্রের ভূমিকা আমার জীবনেও অনেকখানি। কারণ আমার অনেকটা সময় তো বাড়ির বাইরেই কেটেছে, হোস্টেলে থাকতাম আমি। কলেজ জীবন থেকে আমি ব্যাগে পেপার স্প্রে রাখতাম। আমার মনে হয় সব মেয়েদের ব্যাগে একটা করে পেপার স্প্রে অবশ্যই রাখা উচিত।
আজ আপনি এই বিপনীর মুখ, কিন্তু একটা সময় এখান থেকেই শাড়ি কিনতেন, কতটা নস্টালজিক লাগছে?
সুস্মিতা: আমার কলেজের ফেয়ার ওয়েল ছিল। সেই বিশেষ দিনটার জন্য নিজেকে সাজিয়ে তুলব বলে এখানে এসেছিলাম শাড়ি কিনতে। তখনও পর্যন্ত আমি ইন্ডাস্ট্রিতে পা রাখিনি, কলেজ পড়ুয়া একজন ছাত্রী ছিলাম। ধূসর কালো রঙের একটা শাড়ি এখান থেকে কিনেছিলাম, আমার এখন বেশ মনে আছে। ক্রেতা হয়ে যেখানে এসেছিলাম, আজ আমি সেই ব্র্যান্ডেরই মুখ। এই যাত্রাটা খুব একটা সহজ ছিল না। এটা সত্যি অনেকখানি প্রাপ্তি আমার জন্য। সারা জীবন এটা আমার মনে থেকে যাবে। ভগবানের দয়া না থাকলে বোধহয় এই জায়গায় আসা কখনও সম্ভব হত না।