বাংলা নিউজ > বায়োস্কোপ > 'কাঞ্চনদার সঙ্গে অভিনয় মানে তো আস্ত একটা ওয়ার্কশপ',মিসম্যাচ ৩ নিয়ে আড্ডায় রাজদীপ

'কাঞ্চনদার সঙ্গে অভিনয় মানে তো আস্ত একটা ওয়ার্কশপ',মিসম্যাচ ৩ নিয়ে আড্ডায় রাজদীপ

হইচইতে স্ট্রিমিং শুরু হয়েছে মিসম্যাচের। 

মিসম্যাচের শ্যুটিং পর্বে রোগা হয়ে গিয়েছেন রাজদীপ, সৌজন্যে করোনা। সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে সেক্স-কমেডির শ্যুটিং করা সহজ ছিল না, গল্প শোনালেন অভিনেতা। 

ওটিটি প্লাটফর্ম হইচইতে সদ্যই মুক্তি পেয়েছে বাংলার অন্যতম জনপ্রিয় ‘সেক্স কমেডি’ মিসম্যাচ-এর তিন নম্বর সিজন । অতিমারী আবহের বাধা টপকে এই পরিস্থিতিতেও কিভাবে হলো শুটিং ? হিন্দুস্তান টাইমসকে বাংলাকে দেওয়া একান্ত সাক্ষাৎকারে খোলাখুলি জানালেন অভিনেতা রাজদীপ গুপ্ত । কথা বললেন বর্তমান করোনা পরিস্থিতিতে চর্চার কেন্দ্রবিন্দুতে উঠে মানসিক অবসাদ , সোশ্যাল মিডিয়ায় আক্রমণ প্রতি আক্রমণের বিষয়গুলি নিয়েও। 

করোনা আবহে এটাই সম্ভবত আপনার প্রথম শুট , সেখানে মিসম্যাচের মতো সিরিজ শুট করতে গিয়ে কেমন অভিজ্ঞতা হলো ?

--দেখুন , আমার জীবনে এখনো অবদি এটাই বোধ হয় এমন একটা কাজ , যেটা এতদিন ধরে শুট করা হয়েছে । কাজ যখন শুরু হয়েছিল , তখন সত্যি বলতে গেলে করোনা কি জিনিস আমরা জানতাম না । তারপরেই লকডাউন চালু হয়ে গেল , ফলে বাধ্য হয়ে কাজ করেই বন্ধ করে দিতে হলো । তারপর একটা লম্বা সময়ের ব্যবধান কাটিয়ে আবার শুটিং শুরু হলো । কিন্তু সমস্যা হয়ে দাঁড়াল ম্যাচিং করতে গিয়ে , অর্থাৎ আক্ষরিক অর্থেই মিসম্যাচ হয়ে গেলো আর কি । কারণ কেউ হয়তো এই টানা লকডাউনে মোটা হয়েছেন , কেউবা রোগা হয়ে গিয়েছেন ......

আপনি কি হয়েছেন ? মোটা না রোগা ?

--আমি তো একটু রোগাই হয়েছি বলা চলে । লকডাউনের আগে যে টি-শার্ট গুলো টাইট হতো, এখন সেগুলো বেশ ঢিলে ঢালা হচ্ছে ।

সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখা তো এখন শ্যুটিংয়ের ক্ষেত্রে মাস্ট । কিন্তু মিসম্যাচে তো একাধিক ঘনিষ্ঠ দৃশ্য থাকে। এই ব্যাপারটা কিভাবে ম্যানেজ করলেন ?

--দেখুন , সত্যি বলতে গেলে করোনার কথা মাথায় রেখে চিত্রনাট্যে অল্প-বিস্তর পরিবর্তন করা হয়েছে । সেদিক দিয়ে বলতে গেলে মিসম্যাচ ১ ও ২ এর থেকে এই সিরিজ অনেকটাই আলাদা হবে কারণ শুটিংয়ের ক্ষেত্রে আমাদের একাধিক বিধিনিষেধ ছিল । কিছুটা অংশের শ্যুটিং তো আগেই বললাম আগে হয়ে গিয়েছিল। তাছাড়া গল্পের ক্ষেত্রে কাঞ্চন দা একটা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছেন ....।

তাহলে বলতে চাইছেন করোনা মিসম্যাচের স্ক্রিপ্ট চেঞ্জ করতে বাধ্য করেছে ?

--হ্যাঁ, সেটা তো খানিকটা বলাই যায় । দেখুন আমাদের অনেক নিয়ম কানুন মেনে শুট করতে হয়েছে । বিহাইন্ড দ্য সিন ছবিগুলো দেখলেই আপনি বুঝবেন আমরা কেমন দূরে দূরে দাঁড়িয়ে আছি । তাছাড়া মাস্ক পরে সারাক্ষন থাকা , শটের আগে শুধু মাস্ক খুলে রাখা , এগুলো তো আমাদের মেনটেন করে চলতে হয়েছে । এটাই তো এখন নিউ নর্ম্যাল কি আর করা যাবে!

আচ্ছা এখনও অবদি যা দেখা গেছে , মিসম্যাচ ৩'তে  আপনার মিস-ম্যাচ হয়েছেন পায়েল । প্রথমবার কাজ ওর সঙ্গে, কি বলবে? 

--পায়েল সম্পর্কে নতুন করে আর তো কিছুই বলার নেই । এই মুহূর্তে বাংলা ইন্ডাস্ট্রির অন্যতম শ্রেষ্ঠ অভিনেত্রী পায়েল । আমরা একসাথে কাজ করে খুব খুশি , অনেক জায়গায় আমরা নিজেদের মতো করে অনেক কিছু এডাপ্ট করে নিয়েছি যার ফলে দৃশ্যগুলো আরও প্রাণবন্ত হয়ে গিয়েছে । আসলে যখন শুট করা হয় তখন তো ঠিক বোঝা যায় না , পরে ডাবিং করতে গিয়ে আমরা দেখেছি যে পায়েলের এই অন-স্পট অ্যাডাপ্টেশনের জন্য অনেক জায়গায় সিনটা দেখতে আরো অনেক বেশি ভালো লেগেছে ।

কাঞ্চন মল্লিকের সঙ্গে কাজের অভিজ্ঞতাটা যদি একটু শেয়ার কর..

 --কাঞ্চন দা তো রিয়েল ডার্লিং । ওনার মতো দক্ষ অভিনেতার সাথে কাজ করলে অনেক কিছু শেখা যায় ।আমরা সাধারণত কাঞ্চন দাকে মজার মজার কথা বলতে দেখতেই অভ্যস্ত । কিন্তু ওনার সাথে কাজ করলে মিশলে বোঝা যায় ওনার মধ্যে কত গুলো গ্রে শেডস আছে । আমরা অফ ক্যামেরা সিনেমা,নাটক অনেক বিষয় নিয়ে আলোচনা করেছি । উনি আমায় অনেক টিপস দিয়েছেন । বিশেষ করে বড় অভিনেতা যাঁদের কমিক টাইমিং অসাধারণ হয় , তাঁদের সাথে কাজ করলে অনেক কিছু জানা যায় , শেখা যায় । এককথায় কাঞ্চনদার কাছে আমার একটা ওয়ার্কশপ হয়ে গেছে ।

আপনার চরিত্র সম্পর্কে দর্শকদের কি বলবেন ?

--  সিজন ১-আমার চরিত্রটা ছিল অনেকটা বোকাসোকা ভালোমানুষ গোছের ছেলের চরিত্র । সিজন ২ তে আমার চরিত্রের একটা গ্রে শেডস ছিল , একটা নেগেটিভ অ্যাসপেক্ট ছিল । আর এখানে সত্যি বলতে গেলে আমার চরিত্রের তেমন কোনো শেডস নেই । সোজা বাংলায় আমাদের চারিপাশে নির্বোধ,নিরেট, বুদ্ধিহীন কিছু ছেলে দেখা যায় - আমি ঠিক সেরকমই একটি চরিত্রকে ফুটিয়ে তোলার চেষ্টা করেছি । তার নিজস্ব ক্রাইসিস রয়েছে , সে ভয় পায় , হ্যালুসিনেট করে । আর এই সূত্রেই তার সাথে আলাপ হয় কাঞ্চনদার ।

তবে মজার বিষয় হল , তিনটে সিজনেই আমি তিন ধরণের চরিত্র পেয়েছি যারা একে অপরের থেকে সম্পূর্ণ আলাদা | এটা সত্যিই আমি খুব উপভোগ করেছি ।

মিসম্যাচ নিয়ে তো অনেক ধরণের বিরূপ মন্তব্য বা সমালোচনা ভেসে আসে,এই বিষয়টা কিভাবে দেখবেন ?

--হ্যাঁ , অনেকেই আছেন যাঁরা মিসম্যাচকে শুধুই একটা সেক্স কমেডি হিসেবেই দেখেন । কিন্তু দেখুন কমেডির অনেক ধরণ আছে ,অনেক ভাগ আছে । সর্বোপরি যেভাবে চরিত্র গুলোর একাধিক শেডস দেখানো হয়েছে , আমার মনে হয় দর্শক শুধু ওই একটা বিষয়ের ওপরেই মন দেবেন না, বা দেওয়া উচিত নয়।প্রতিটা বিষয়কেই একটা নির্দিষ্ট আঙ্গিকে বোঝানোর চেষ্টা করা হয়েছে , আশা করি সেটা সবার ভালো লাগবে ।

ওয়েব সিরিজের ক্ষেত্রে সাধারণত দর্শকেরা আপনাকে সেক্স কমেডি জঁরেই বেশি দেখতে অভ্যস্ত । এটা ছাড়া আর কি ধরণের কাজ করতে আপনি পছন্দ করেন ?

–- বছরের শুরুর দিকে রহস্য রোমাঞ্চ করেছি, যা থ্রিলার । দেখ, জাপানি টয় কিন্তু সেক্স কমেডি নয়। অনেকেই সেটা মনে করে। বাস্তবে কিন্তু সেটা আসলে পলিটিকাল স্যাটায়ার।মিসম্যাচের পর অবশ্যই চাইবো নতুন কিছু করতে , যেখানে আমি নিজে অনেক কিছু শিখতে পারবো । নিজেকে অনেক বেশি ভাঙতে পারবো । এইদিক থেকে আবহ আসতে চলেছে , যেটা সম্পূর্ণ ভিন্ন ঘরানার ছবি । সত্যি বলতে গেলে এখন যা পরিস্থিতি বলা খুব মুশকিল আবার কবে কি হবে না হবে । তবে চেষ্টা অবশ্যই থাকবে নতুন কিছু করার ।

অতিমারী পর্বে আমরা সবাই একটা খারাপ সময়ের মধ্যে দিয়ে যাচ্ছি । সিনেমা হল কবে খুলবে এটা নিয়ে এন্টারটেইনমেন্ট ইন্ডাস্ট্রিতে রীতিমতো একটা দুশ্চিন্তা চলছে। এই সময়টাতে কিভাবে নিজেকে পজিটিভ রাখেন ?

 – সত্যি বলতে শুরুর দিকে খুবই ভয় পেয়ে গিয়েছিলাম । তবে তার সাথে সাথে অনেক কিছু রিয়ালাইজ করতে পেরেছি । পরিবারের সাথে সত্যি বলতে গেলে অনেক দিন পরে আবার এতটা সময় একসাথে কাটালাম । এখন সত্যি বলতে গেলে সার্ভাইভালের চিন্তাটাই মাথায় সবসময় ঘুরছে । আর যেদিন থেকে কাজে বেরোতে শুরু করেছি , ভয় অনেক কেটে গিয়েছে ।

এছাড়া ধরুন ভালো সিনেমা দেখা , বই পড়া , বন্ধুদের সাথে জোকস শেয়ার করা , এই সব কিছুই চলেছে । কোনও ভাবেই নেগেটিভিটিকে আশ্রয় দেওয়া থেকে বিরত থাকার চেষ্টা করছি , কোনো খারাপ খবর বা নিউজ পেলেও চেষ্টা করছি অ্যাভোয়েড করতে , মানুষকে তো বাঁচতে হবে । সেখানে আর নেগেটিভিটি বাড়ানোর দরকার তো নেই ।

আমি চেষ্টা করি নিজে পজিটিভ থাকতে , যাতে আর পাঁচজনকেও পজিটিভ রাখতে পারি আমার আশে পাশে । হয়তো সম্ভব নয় , তবুও চেষ্টা করি ..'

বন্ধ করুন